সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শর্মিষ্ঠা দত্ত

টেকেন ফর গ্র্যান্টেড 
___________________

ঠিক বিকেল পাঁচটায়  অ্যাকাডেমির সামনে চলে এল ব্রত...আজ নাট্যচিন্তার শো আছে । সাড়ে ছটায় শো । সুরঞ্জনা নিশ্চয়ই এখনই এসে গ্রীনরুমে ঢুকে পড়বে । আলাপ হওয়ার পর থেকে ওর প্রতিটি শোই দেখতে এসেছে ব্রত  , সে তার অফিসে  যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন । ফেসবুকেও  প্রতিদিন চ্যাটবক্সে  গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে একটা প্রত্যাশা জন্মেছিল মনে , তাই সরাসরি প্রেমের প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলেছিল । প্রত্যুত্তরে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নিয়ে সাতশো একান্ন শব্দের একটা জ্ঞানবহুল মেসেজ দিয়ে তাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ব্লক করেছিল সুরঞ্জনা । 

ক্যাবটা আজ প্রায় সবকটা  সিগন্যালে আটকাতে আটকাতে অবশেষে পাঁচটা ঊনত্রিশে  অ্যাকাডেমিতে পৌঁছালো । গ্রীনরুমে ঢুকেই ডিরেক্টর মানসদার বকুনি খেতে হবে আজও । ওঁর দোষ নেই ...নাটকের প্রধান চরিত্রই  যদি সময়মতো উপস্থিত না হয় তাহলে টেনশন তো হবেই । এর মধ্যেই চারবার কল  এসে গেছে সুরঞ্জনার ফোনে ,  ক্যাব থেকে নেমে হনহন করে হাঁটতে শুরু করল সুরঞ্জনা। 

গেটের সামনে আবার এসে দাঁড়িয়েছে ব্রত মিত্র নামের সেই  ছেলেটা , বিরক্তিতে সুরঞ্জনার মুখটা কুঁচকে গেল । হাতে আবার চকোলেট আর গিফটের প্যাকেট ! সাহস তো কম নয় ! ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছে ...তবু ! দেবে না কি  রামধোলাই ! সময় নেই অবশ্য । বন্ধু শর্মিলী আসবে আজ , সকালে ফোন করে বলছিল । ঝাড়ের  দায়িত্বটা ওকেই  দেওয়া যাক ...শর্মিলীর নম্বরটা ডায়াল করার  আগেই সুরঞ্জনা দেখতে পেল  বাঁ দিক থেকে শর্মিলী এগিয়ে যাচ্ছে ব্রতর দিকে ,  "সরি , দেরি হয়ে গেল গো ...অনেকক্ষন এসেছ ? "

গিফট আর চকোলেট ওর হাতে দিয়ে , হাত ধরে রাস্তা ক্রস করে মোহরকুঞ্জের দিকে  যেতে যেতে  ব্রত বলল  , "তুমি একেবারে পারফেক্ট টাইমে এসেছ শর্মিলী ..."

বুকের ভিতর একটা কাঁটা খচখচ করছে ...অপমানের নাকি বিশ্বাসঘাতকতার !  ধীর পায়ে গেটের ভিতর  মোরামের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল সুরঞ্জনা...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন