মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

বনবীথি পাত্র



রাত_ভোর_বৃষ্টি

.
(1)
টিফিনের সময় বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সৌমি । আজকেই কোর্টে কেসটার শেষ দিন । আইনত ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে অনীকের সাথে । এমনটাই চেয়েছিল , তবু মনটা আজ খারাপ । সাড়ে তিনবছর সংসার করেছিল দুজনে । বাসের জন্য দাঁড়িয়ে , মোবাইলটা বাজছে ব্যাগে ।
 
অনীকের বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে , অবস্থা সিরিয়াস । বৃষ্টির জমা জলে বাইকের চাকা স্কিড করে গিয়েছিল । সকালেই ফোন করেছিল অনীক , কোর্টে যাওয়ার কথাটা মনে করানোর জন্য । কলহিস্ট্রি দেখে কোন এক পথচারী ফোন করে সৌমিকে ।
 
মাথার আঘাতটাই গুরুতর , জ্ঞান ফিরেছে ছাপান্ন ঘন্টা পর । জ্ঞান না ফেরা অবধি সৌমি আইসিইউ র করিডোরেই বসেছিল , কেউ ওকে বাড়ি ফেরাতে পারেনি ।
আজ অনীকের ছুটি হসপিটাল থেকে । রাত ভোর বৃষ্টি , এখনো চলছে সমানে । সৌমি সকাল থেকেই হসপিটালে । অনীককে নিয়ে আজ একসাথে নিজেদের ঘরে ফিরবে সৌমি ।
(2)
তোর বরটা খুব বাদুলে বাপু , কদিন ধরে বৃষ্টি যেন ধরছেই না ।
ফুলদিদার কথায় হেসে উঠেছিল সকলে ।
বাড়ির একমাত্র মেয়ে সুমিতার বিয়ে , বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই আনন্দে মেতেছে সকলে ।
মেরুন বেনারসী-সোনালী চেলি আর গা'ভরা গয়নাতে সুমিতা যেন রাজেন্দ্রাণী । আলো-সানাই-রজনীগন্ধার গন্ধে মুখরিত বাড়ি । সান্ধ্যলগ্নে বিয়ে । বড়রা চিন্তিত বৃষ্টি একটুও কমছে না । এখনো বর এসে পৌঁছায়নি । ফোন করেছিল ছোটকা , বৃষ্টিতে রাস্তা বন্ধ । ঘুরে আসতে হচ্ছে বলে দেরি হচ্ছে একটু ।
বর আসার বদলে ফোন এসেছিল সুমিতার বাবার মোবাইলে । বৃষ্টির জমা জলে রাস্তা বুঝতে না পেরে নয়নজুলিতে পড়ে গেছে বরের গাড়ি ।
  সাথে সাথে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল বাবা-ছোটকা-বড়মামা আরো অনেকে ।
অনেক রাতে খবর আসে । গাড়ির পাঁচজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে , শুধু বর আর ওর এক বন্ধুকে বাঁচাতে পারেননি ডাক্তাররা ।
রাত ভোর বৃষ্টি .....
ছাতনাতলা , বরাসন সাজানো গোছানো পড়ে আছে এখনো । চোখের জলে শুধু ধুয়ে গেছে সুমিতার সব রঙ......

(3)
বিলের জল ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে ইস্টিশেনের পাশের পাটক্ষেতে । বিলের মাছগুলোও তারমানে ভেসে এসেছে । কতদিন ভাতের পাতে মাছ খায়নি । বাপটা বেঁচে থাকতে তাও মাঝেমধ্যে মাছ আনতো । মায়ের চোখ এড়িয়ে গামছাখানা নিয়ে পাটের ক্ষেতে গিয়েছিল তের বছরের সাবিনা ।
রাত ভোর বৃষ্টি । ঘরে ফেরেনি মেয়েটা । ঘর মানে রেললাইনের পাশে পলিথিনের ঝুপড়ি ।
 
সকালবেলায় পুরনো মালগুদামের পিছনে একটা ডেডবডি পড়ে থাকার খবরে ছুটে গিয়েছিল আমিনার মা । উপুড় হয়ে পড়ে আছে সাবিনার পোশাকহীন নিষ্প্রাণ দেহটা । কই-ল্যাঠা মাছগুলো গামছা থেকে ছিটকে পড়ে তখন ছটফট করছে বাঁচার জন্য ....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন