সুধাংশু চক্রবর্তী

শুচিস্মিতা খিল খিল করে হাসছে। সাগরের বড় একটা ঢেউ ছুটে আসছে ওর দিকে। ওর নিটোল শুভ্র চরণদুটি নোনাজলে ভিজে গিয়েছে। পড়নের শাড়ীর নিচের অংশ জলে ভিজে সপ্‌সপ্‌ করছে। সেদিকে কোনো হুঁসই যেন নেই । যেন ইচ্ছে করে নোনা জলে ডুবিয়ে রেখেছে পায়ের নিচের অংশটা। এখন ওকে দেখে মনেই হচ্ছে না সকালে বেদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলো লোকটাকে দেখে। কি করে যে ওর কানে এসছে কথাটা। সেইথেকে লোকটাকে দূর থেকে দেখলেও ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। এখন সাহস ফিরে পেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে খেলায় মেতে উঠেছে। দেখে খানিকটা আস্বস্ত হলাম। 

বেলা গড়িয়েছে। এবার ফিরে যেতে হবে হোটেলে। গিয়ে স্নানখাওয়া সারতে সারতেই দুপুর গড়িয়ে যাবে। সেই ভেবে সাগর তটে উত্তাল বাতাসের সাথে লড়াই করতে করতে এগোচ্ছি বালির পাহাড় ভেঙ্গে । মাথাটা ঝিমঝিম করছে প্রখর রোদের তাপ সইতে না পেরে । এই নতুন একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুরীতে বেড়াতে এসে । বুঝলাম রোদ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছি । অতএব ধীর কদমে এগোতে থাকি ওর দিকে । আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতে শুচিস্মিতা ফিক্‌ করে হাসলো। নিজের রক্তরাঙ্গা ঠোঁটদুটি ঈষৎ কুঞ্চিত করে বললো – “ভয় করছে খুব ।” 

“আমি আছি তো । ভয় কিসের?”

“এসে আমার হাতটা ধরবে?”

প্রায় টলতে টলতেই এগিয়ে চলেছি ওর দিকে । আমাকে এগোতে দেখে শুচিস্মিতা খিলখিল করে হেসে আরও খানিকটা জলে নেমে গেল । আমার টলোমলো দু’পায়ে এসে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের সফেন ঢেউ । কিছুতেই এগোতে পারছি না তেমন করে । হঠাৎ শুচিস্মিতা চিৎকার করে উঠলো ভয়ে। ওর অনিন্দ সুন্দর মুখখানা নিমেষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল । বিস্ফরিত নয়নে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে । তাতেই দেখলাম লোকটাকে । প্রায় আমার গা ঘেঁসে হেঁটে গেল বালির ওপর দিয়ে। হাতে গুটিকতক বড়বড় ঝিনুক। বিরবির করে বলছে, “আর কত ঝিনুক চাই তোমার? আর কতো? এবার উঠে এসো জল থেকে। এই দ্যাখো কত ঝিনুক কুড়িয়ে এনেছি তোমার জন্য । এবার উঠে এসো...” 
বুঝলাম এই লোকটাকে দেখে শুচিস্মিতা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছে । লোকটা নাকি দু’দিন আগে নিজের স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে সমুদ্রের জলে! শুচিস্মিতার দিকে দ্রুত পায়ে এগোতেই ও চিৎকার করে বললো – “আর একপা’ও এগোবে না তুমি। তোমরা সব পুরুষই যে একই জাতের । তুমিও আমাকে......”

শুচিস্মিতা কথাগুলো বলছে আর উলটো কদমে একটু একটু করে নেমে যাচ্ছে গভীর জলে । খেয়াল করছে না জল ওর কোমর ছাড়িয়ে উঠে এসেছে আরও খানিকটা ওপরে ।