বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

জয়তী অধিকারী



কিন্নর-কিন্নরীশুনলেই মনে ভেসে ওঠে অপরূপ সুন্দর-সুন্দরী মানুষচেহারা। যদিও ব্যাপারটা যে আদৌ তা না ১৯৯৭ সালের পুজোর ছুটিতে হিমাচলপ্রদেশের কিন্নর ভ্রমণে না গেলে হয়ত অজানাই থেকে যেত। যাই হোক, কয়েকজন বন্ধু আর তাদের পরিবার মিলে মোট পনেরো জন গিয়েছিলাম কিন্নর-ভ্রমণে। অর্ধেক ট্যুর হয়ে যাওয়ার পর সারাহান থেকে যখন আমরা কল্পার পথে, মাঝরাস্তায় জানা গেল সামনে পথ বন্ধ। কারণ দিন দশেক আগেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাহাড়ের মধ্যে এসে উপস্থিত একরাশ মেঘ। দুজনেরই অহংকারী মাথা আকাশ ছুঁতে চায়।



 ইচ্ছাপূরণের অভাব তারা অনুভব করে নি কখনও। দুজনেরই চোখ পড়ল সেই মেঘবালিকার উপর। কিন্তু মেঘলাবরণ কন্যে যে ফিরেও তাকায় না কারুর দিকেই, সে যে নিজেকে নিয়েই মত্ত। অধিকারের লড়াই শুরু হল দুই পুরুষকারের। কিন্তু মেঘবালিকার একেবারেই সহ্য হয়নি তাকে নিয়ে ওই দুই পাহাড়ের মধ্যে লড়াই। সে ফেটে পড়েছিল অন্ধ আক্রোশে। তারই ফলশ্রুতি পাহাড়দ্বয়ের হৃদয়ের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া। দুই পাহাড়ের মধ্যে যোগাযোগকারী প্রায় কুড়ি কিলোমিটার রাস্তাও হল পরিস্থিতির শিকার। অস্তিত্ব রক্ষা করাই দায় হল তার। আর সেই মেঘবালিকার চোখের জলে তৈরী হল এক টলটলে সবুজ হ্রদ। অনেক মতানৈক্যের পর স্থির হল আমরা হিমাচল সরকারের সহায়তায় ওই লেক পার হয়েই এগিয়ে যাব আমাদের গন্তব্যে, অপরূপা কল্পায়। সাময়িক সরকারী ব্যবস্থা হিসাবে গাদাবোটে করেই পারাপার করছে মানুষজন। মাথাপিছু ১/- , মালপত্র একেবারে ফ্রি। কিন্তু পাহাড়ের এপাশ থেকে ওপাশে নামতে গেলে টপকে যেতে হবে ঝুরঝুরে পাহাড়। স্ত্রী-শক্তিকে উপেক্ষা করার ফল ছড়িয়ে আছে যে পাহাড়ের সর্বাঙ্গে। তাকে পেরিয়ে যেতে হলে আমাদের যেতে হবে প্রায় টিকটিকির মত করে বুক বেয়ে। পা স্লিপ করে মাঝে মাঝেই নেমে আসতে হচ্ছে সেই তেলাবাঁশে চড়া বাঁদরের মতই। হাতের কাছে দুএকটা ছোট গাছ আছে বটে, কিন্তু সাহায্য নিতে গেলে উপড়ে চলে আসছে হাতেই। কোনরকমে হাঁচর-পাঁচর করে সারা গায়ে ধূলো মেখে পৌঁছে গেলাম বোটের কাছে। তারপর পার হতে হতে দেখলাম তখনও মেঘভাঙা লেকের জলে সবুজ ছায়া ফেলে তাকে আগলে রেখেছে ওই দুই পাহাড়। ভালবাসা বোধহয় এভাবেই বেঁচে থাকেপ্রকৃতিতে, মানব-মনে, আমাদের জীবনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন