মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী



ধারাবাহিক রহস্য গল্প
অভিশপ্ত নীল 
প্রথম পর্ব 


ঘুম ঘুম চোখে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলো পিয়াস। দোতালার ল্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে একবার দেখে নিল টাইটান রাগা'র সোনালী ডায়ালটা...এখন প্রায় বারোটা...হ্যাঁ এক্কেবারে জিরো আওয়ার যাকে বলে ...ঝাপসা কাঁচের জানালা দিয়ে দেখলো নীল ট্যাক্সিটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। শহর ভেসে যাচ্ছে আজ অকালের বৃষ্টিতে.....দুদিনে শীতটাও বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।

পুলওভারটা ভালো করে টেনে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল পিয়াস। অভ্যেসমত ব্যাগ খুঁজে ফ্ল্যাটের স্পেয়ার কি বার করলো। এত রাতে মা আর রিম ঘুমিয়ে পড়ে .....পিয়াস সঙ্গে স্পেয়ার কি রাখে ....নিজেই দরজা খুলে ঘরে ঢোকে ....ডাইনিংয়ে খাবার ঢাকা দেওয়া থাকে ....অভ্যাসের বসে খেয়ে ফেলে সোজা বাথরুম ....একটা হট ওয়াটার বাথ.......শাওয়ার এর জলে ঝাপসা হয়ে আসে পিয়াস এর চোখ দুটো....পিয়াসের চারপাশের পৃথিবীটা....এই পনেরো মিনিট তার সারাদিনের সবচেয়ে শান্তির সময়।
 

কিন্তু আজ আর তেমনটা হল না। দরজায় চাবি ঢোকাতে যাবে ,তখনই বুঝতে পারল দরজাটা আজ খোলা আছে। ভেতরে ডাইনিংয়ে লাইট জ্বলছে। একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে পিয়াস ভেতরে ঢুকলো। ঢুকতে ঢুকতেই মা বেডরুমের দিকে ইশারা করে রান্নাঘরে চলে গেলেন। ....ব্যাগটা সোফায় ছুঁড়ে দিয়েই পিয়াস ছুটলো বেডরুমের দিকে। পর্দা সরিয়েই যা দেখলো তা দেখেই এই ডিসেম্বরের শীতেও তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। রক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। চেঁচিয়ে উঠলো, "বলেছি না তুমি এভাবে আসবে না যখন তখন! কেন এসেছ! ফোন করেছিলে মায়ের ফোনে? তুমি জানো মায়ের নাম্বারটাও ওরা ....." এক নিঃশ্বাসে এত কিছু বলে যাচ্ছিল পিয়াস। পাঁচ বছরের ছোট্ট রিমের ঘুমন্ত মাথাটা কোল থেকে নামিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মাঝবয়েসী পুরুষটি.....পিয়াস এর কাছাকাছি এসে একগাল হাসলো...
"কিচ্ছু হবে না ...আসলে রিম কে খুব মিস করছিলাম, আর ........" পিয়াসের কাঁধের উপর একটা গরম নিঃশ্বাস ফেলে বলল , তোমাকে'ও "
চট করে নিজেকে সরিয়ে একই সুরে বলল পিয়াস, " বাজে বোকো না ....গাড়িটা আজও ......"
অনন্ত ততক্ষণে আরো কাছে টেনে নিয়েছে তাকে..... নরম গলায় বলে, "কেউ জানতে পারবে না .....কি ভাবো আমায়। মাসে একটা দিন আমি তোমাদের কাছে আসতে পারব না! তাই হয় !"
- " তুমি বুঝছ না অনি ,যে কোন সময় একটা বিপদ হয়ে যেতে পারে ....আমি কত সতর্ক থেকে সারাটা দিন....."

- " সতর্ক তো আমিও থাকি , কিন্তু কি করব ....দেখো রিম ও কত মিস করে আমাকে।"
- " এমন বাবাকে মিস করাটাই অন্যায় ..." কথাটা বলেই নিজেই কেমন থমকে গেল পিয়াস। দেখলো অনন্ত তখন চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে ওর। 

" ঠিকই বলেছ .....ওর তো লজ্জা হওয়া উচিত ওর পাপার উপর .....and she should be proud of her mamma ,Mrs Piyas Mitra ,। officer ,crime branch .....কি তাই তো ???"
- " dont react like this ani .....U khow ......"
- " what ? I should know what ?"
- " লড়াইটা আমাদের দুজনের অনি " নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিল পিয়াস .....
অনন্ত'র বুকে মাথা রেখে ......
বাইরে তখনও অবিরাম বৃষ্টি পড়ে চলেছে ......পিয়াস এর চোখে ভেসে উঠলো আবার সেই ঝাপসা নীল গাড়িটা l অনন্ত কে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে চোখ বুঝল সে। অস্ফুটে বলল , " আমি সব ভুলতে চাই অনি .....প্লীজ ভুলিয়ে দাও ...."


এমনসময় বাইরে থেকে একটা 'খট 'করে শব্দে ঘোর কেটে যায় দুজনেরই ...।পিয়াসের কিছু বলে ওঠার আগেই অনন্ত জানালার বাইরের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় .....পিয়াস ছুটে এসে দাঁড়ায় বিছানার পেছনের জানালাটার কাছে ...অনন্ত ততক্ষণে হয়ত অনেক দূরে চলে গেছে ..বাইরের বৃষ্টিতে মিশিয়ে নিয়েছে নিজেকে পুরোপুরি। মাথা নিচু করে ফিরে আসে সে। রিম এর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে কলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার মিসেস পিয়াস মিত্র। হঠাৎই রিমের ডান হাতের আঙ্গুলে পরানো একটা আংটির উপর নজর পড়ে তার ।" অনন্ত পরিয়ে দিয়ে গেছে আজ নিশ্চয়" ভাবতে ভাবতেই চোখ কপালে তুলে সে বলে ওঠে .." oh my god ......এতো সেই রক্তমুখী নীলাটা !!"


-চলবে.........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন