অপারেশান ‘ঝড়’
আগেই ঠিক হয়েছে আজ সন্ধ্যেয় বরুণ বাবা ক্ষেপবেন। শুধু একজ্যাক্ট টাইমটা পরে মেসেজ করে জানিয়ে দেবে বলেছে। আজ এগারোটার লিস্ট ধরিয়েছে চিত্রগুপ্ত। সেই মতো ন-জন যমদূতের ডিউটি ফিক্স করা হয়েছে। দুজনকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় সবটা মিটে গেলেই হয়।
মর্তে আজকাল যা চলছে যমের দূয়ারের সিস্টেমটাই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। চিত্রগুপ্ত হিসেব নিকেশ করে যে কটা প্রাণ রেকমেন্ড করে, রোজ তার থেকে দু –চারটে বেশী এসে যাচ্ছে। বেলাবেলি চলে এলে বিশ্বকর্মা ডাটা তুলে দিয়ে যায়। রাতবিরেতে হিসেব তোলে কে? কম্পুটার যন্তরটি যমরাজের মগজে ঢোকে না। চিত্রগুপ্ত তো শুধু পাপ-পূণ্যের হিসেব তুলতেই শিখেছে। আগেই ভালো ছিল এদিক ওদিক হলে পুরোনো হিসেব মুছে চটপট নতুন লিখে ফেলা যেত। ব্রহ্মার আদেশ! হাতে লেখা চলবে না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেশিন আপডেট রাখতে হবে। ওদিকে নীচে যা চলছে। কত গোঁজামিল দেওয়া যায়। যার আসার কথা চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর পর, বাবা-মার ওপর রাগ করে দিল পুট করে ঝাঁপ। মারপিট হল কি আন্দোলন অমনি বোমাবাজি নয় গুলিবাজি। পটাপট দু চারটে পরে যাবে। ফেলে রাখা তো যায় না। আনাতেই হয়। চিত্রগুপ্তকে পাপের ঘর কতকগুলো মিথ্যে দিয়ে ভরতে হয়। কি জ্বালা! শিব বাবু জানতে পারলে আবার দক্ষজজ্ঞ হবে।
নিচের ওই ঝামেলার জন্য সবসময় দু-চারটে বাড়তি দূত পাঠিয়ে রেডি রাখতে হচ্ছে। এখন তো আবার সব দূতের কাছে ট্যাব, সঙ্গে নেট কানেকশন রাখার নিয়ম। অবস্থার হেরফেরে ফটাফট মেসেজ করে যমরাজের আদেশ জেনে নিতে পারে । বাড়তি দূত নিয়োগের খরচ বইবে কে? হাড়কেপ্পন বেস্পতির সঙ্গে প্রতি বাজেটে এই নিয়ে ঝামেলা হয়। ইন্দ্র বেটা যে গাদাগুচ্ছের অপ্সরা পুষছে তার খরচ দিচ্ছে কি করে? যম তো জন্ম-মৃত্যুর পুরো সার্কেলটা চালাচ্ছে। তার ওপর পাপ-পূণ্যের বিচার। কত ঝক্কি সামলাবে?
পিং! ওই মেসেজ এলো। অপারেশন শুরু হলে অ্যালার্ট থাকতে হয়। দূতেরা তাজা সংবাদ মেসেজ করে। এখন এমন হয়েছে মেসেজ এলেই বুক ধরপর করে। এই বুঝি লিস্টি আপডেট করতে হবে। দফতরে থাকলে আজকাল রানীও মেসেজ করে না।
‘ বরুণদেব সময় থেকে কুড়ি মিনিট দেরিতে চলছেন। কি করা!’
বোঝ কাণ্ড। এখন আবার তাকে ফোন কর।
- বাবা বরুণ! তোমার যেতে কতক্ষণ?
- সরি! সরি! দুপুরে ধোকার ডালনাটি বড়ই স্বাদের হয়েছিল। চাট্টি বেশী খেয়ে ফেলেছিলুম। ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে। এখুনি বেরোচ্ছি। আপনি চিন্তা করবেন না। স্পিড বাড়িয়ে সময় কিছুটা ম্যানেজ করে নেব। ওই ধরে রাখুন আটটা পনের-ষোল হবে।
- ঠিক আছে বাবা! সাবধানে যেও।
নতুন টাইম সেট করে মেসেজ পাঠালেন
‘রেডি থাকো বাবারা সময় হয়ে এল’
এবারই আসল টেনশন। অপারেশন শেষ না হওয়া অব্দি বুক-পেট গুড়গুড়। ঠিকঠাক মিটে গেলে কেউ বাহবা দেবে না! এট্টু এদিক ওদিক হলেই বেহ্মা তিন মাথা নাড়িয়ে জ্ঞান দিতে থাকবে।
মেসেজ আসতে শুরু করেছে।
দূত ১: সাকসেসফুল।
দূত ২: অল্পের জন্য ফস্কে যাচ্ছিল। ম্যানেজ হয়ে গেছে।
দূত ৩: সাকসেসফুল।
জয়গুরু! জয়গুরু!
দূত ৪: দুটো পেয়েছি। একটাকে লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
‘তা তুমিও হাসপাতালে যাও না বাপু। ওখান থেকেই নিয়ে এসো’
দূত ৫: আনসাকসেসফুল। বরুণ স্যার বাজটা ৩০মিটার দূরে একটা নারকেল গাছে ফেলেছেন। পার্টির কিছু হয় নি। কি করব?
‘ ঘোরো, ঘোরো, ঘুরে ঘুরে দেখ। এত বড় একটা দুর্যোগ কোথাও না কোথাও একটা ঠিক পেয়ে যাবে। দশ নম্বরকে বলছি তোমাকে জয়েন করতে। ও তো স্ট্যান্ডবাই আছে। সুযোগ পেলেই যাকে হোক তুলে নেবে। নম্বরটা ঠিক থাকা চাই’
দূত ৬: সাকসেসফুল।
জয়গুরু! জয়গুরু! ছটা পেয়ে গেছে! একটা ঝুলছে।
দূত ৭: খাবি খাচ্ছে। কিছুতেই হাতে আসছে না।
‘আরে মেয়েদের জান। আসতে কি চায়! বল বাড়াও বৎস’
দূত ৮: দুটোই পেয়ে গেছি।
দূত ৯: গাড়িতে তিনজন ছিল। ডাল যেভাবে পড়েছে তিনটেকেই আনতে হচ্ছে।
যাহ বাবা! গুনতিতে আবার বেশী হয়ে গেল। পাঁচ নম্বরটাকে বারণ করতে হবে এখুনি।
দূত ৫: পেয়ে গেছি স্যার। পুরোনো বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে ছিল। দশের বুদ্ধি। একটু বল বাড়াতেই হুড়মুড় করে কার্নিশ ভেঙে পড়েছে। দুজন ছিল তাই দুটোকেই নিতে হল। তবে মুশকিল হল একটা আবার মহম্মদ স্যারের ইউনিটের।
‘ফেরত দে বাবারা! ফেরত দিয়ে দে! এদিকে কাউন্টিং এ বাড়তি’
দূত ৫: আজ্ঞে তা আর সম্ভব না। যেভাবে চাপা পড়েছে ফেরানোর উপায় নেই।
দূত ১১: স্যার আমার সামনে যা পরিস্থিতি দুটোকে নিতেই হচ্ছে। ওই যাহ! আরো একটা নিতে হচ্ছে স্যার।
উফ! একটা অপারেশান যদি ঠিকঠাক হয়। ওই বরুণ ব্যাটা টাইম মেকআপ করতে গিয়ে এমন স্পিড বাড়ালো! দিল সব ঘেঁটে। নিজে তো ঘুমিয়ে নিয়েছে, আমার রাতের ঘুমটিকে আচ্ছা করে চটকাল। ওদিকে আবার মহম্মদ স্যারের কাছেও খবর পাঠাতে হবে। উফ! এ ধকল আর নেওয়া যায় না।
আজকের মতো শেষ মেসেজ পাঠালেন
‘ফিরে আয় বাবারা। অপারেশান ওভার!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন