শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

নীপবীথি ভৌমিক


#মুক্তগদ্য

#ধর্ষণের মোমবাতি         


   একটা ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদী মিছিল শহরের বুকে আজ  বেদনার ক্রন্দন স্বর আঁকতে চাইছে।মিছিলে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হাতেই মোমবাতি,যার শিখা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে নতুন আরও একটা আন্দোলনের ডাক।
   
   খবরে প্রকাশ,শহরের উত্তর প্রান্তে ফুটপাথের উপর যারা রাতে একফোঁটা শান্তির ঘুমের জন্য আশ্রয় খোঁজে তেমনই কোনো বস্তি বাসিনী কিশোরীর সাথে ঘটা এঘটনা! মিছিল এগিয়ে চলেছে ক্রমশ শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত,এপাড়া থেকে ওই ব্লক !ফ্ল্যাটের জানালা বা ব্যালকনি থেকে অসংখ্য সারি সারি মুখের ভিড় চোখে পড়ে,যারা এই মিছিলের দর্শকাসন অধিকার করে আছেন। ধীরে ধীরে এই ভিড় বাড়তে বাড়তে দরজা জানলা এমনকি ফ্ল্যাটেরাও হাঁপিয়ে উঠছে। এক এক জনের মুখয়বে এক এক চিহ্ণ-দাগ! কারোর কোথায় প্রশ্নচিহ্ণ,আবার কেউ বা দাঁড়ি,কমা,সেমিকোলনের রেখা মুখে এঁকে নীরব আসনে। তবে বেশ বোঝা যায় সবাই বেশ ভাবিত,মাঝে মাঝেই ঘরের দম আঁটকানো পরিবেশ ভেদ করে বাইরে ছুটে বেড়িয়ে আসতে চাওয়া টেলিভিশনের আওয়াজটা বোধহয় তাই জানিয়ে যায়। সামান্য একটা ঘটনা বেশ নাড়িয়ে গেলো না সমাজটাকে!
    মিছিল শেষ! ঠিক সন্ধ্যা সাতটা এখন। মিছিলে অংশগ্রহণকারী মানুষদের হাতে ধরা এখন গরম গরম চা-এর ভাঁড় সাথে চপ-মুড়ির ও ধুম্রপান সহযোগে হাল্কা আড্ডা। আর মোমবাতিরা!উঁহু,সে তো এখন মুঠোফোনে বন্দী,তোমার আমার সবার সেলফির সাথে। ইতিমধ্যেই সোশ্যালমিডিয়াতে বেশ কয়েকখানা পোস্ট,বেশ কিছু লাইক,কমেন্ট! অবশ্যই জোরালো ক্যাপশন সহ।
      আচ্ছা,রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা ওই কিশোরীটি কখনও দেখেছি কি এমন সাজানো মোমবাতির আলো? ও কি সাজিয়েছে ওর ভাঙা খড়কুটোর আশ্রয় অন্ততঃ একখানা মোমবাতি দিয়ে? আসলে,ধর্ষণ প্রতিরাতে,প্রতিদিনে,প্রতিমুহূর্তে শুধুমাত্র যেকোনো প্রন্তের কিশোরী বা মেয়ে মানুষদের সাথে ঘটেনা,আমরাও করি নিজেকে নিজেরাই ধর্ষণ,সস্তা বোধের হাতে,আত্ম বিবেকের ধর্ষণ ঘটে প্রতি  মুহূর্তে। ছিঁড়ে যায় আমাদের জঙ্ঘা,যোনির সহজ শুদ্ধ পথ,ঘৃণা বোধের রক্তপাতে। যন্ত্রণা হয় খুব,তবুও চুপচাপ থাকা বাধ্য মোমবাতির কাছে।

---



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন