শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

পিয়ালী বসুঘোষ

সাঁঝবিহান
#পর্ব-আট

বেলা গড়িয়ে গেলে সূর্যটা যখন গোলাপী ও কমলার মাঝামাঝি একটা ম্যাগনিটিউড রঙ মাখে গায়ে ঠিক সে সময়ই সতীশ গিয়ে দাঁড়ালো কলমির ঘরের দাওয়ায় । ওকে দেখেই কলমি হই হই করে উঠলো এতো বেলায় তুমি গরম ভাত কি করে খাবে বলো তো বাবু এতো দেরী কেউ করে ।যাও তুমি ঘরে গিয়ে বসো আমি তোমার জন্য আর দুটো গরম ভাত করে নে আসি । সতীশ হাত নেড়ে বাঁধা দেয় বলে যা আছে যেমন আছে তেমনই দাও । ও জানে এই শুকনো পাতা কুড়োতে কলমি কে জঙ্গলে যেতে হয় ।একবারের জ্বালানি বাঁচা মানে ওদের একবেলার খাবার বাঁচা ।
কলমি চলে যেতে ও ঘরের সামনের বসার জায়গাটা তে বসলো ।খেয়াল করলো বৈচি ঝিনুকের কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছেনা ।জায়গাটা একটু ঢাল মতো ।ওই খানেই দুটো কাগজি লেবুর গাছ ।ছোট ছোট সাদা ফুলের গন্ধ আসছে হাল্কা । কলমির ঘরদোর বেশ পরিষ্কার ।বৃষ্টি থেমে যাবার পর যেমন স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে থাকে তেমনই ।

থালায় করে ভাত বেড়ে এনে সতীশের সামনে সাজিয়ে দিলে সতীশ অন্যমনস্ক ভাবে সাঁঝের কথা জানতে চায় ।জানতে চায় ওর ওষুধ ফুরিয়েছে কিনা । কলমির চোখ চকচক করে ওঠে ।ও বলে কেন বাবু ফজি দাদা বলেনি তোমায় কিছু বাবু ? ভাতের থালা থেকে চোখ সরিয়ে সতীশ জিগ্গেস করে কি বলবে ফজিরাম ?না তো সেতো কিছু বলেনি ।

কলমি হাত ধুয়ে চোখে মুখে খুশি নিয়ে বলে তুমি বাড়ি যাবার পর গোমস্তা এসেছিলো গো বাবু ।আমি তো প্রথমে ভয় পেয়ে গেছলাম যে এ আবার কেন তার ওপরে তুমি নেই এখানে ।পরে তিনি প্রস্তাব দিলেন সাঁঝ কে ওর ছোট ছেলের বৌ করে নিয়ে যাবেন আসছে মাঘে । গোমস্তা সাহেব বলেছেন সাঁঝ কে নিয়ে যাবেন শহরে চিকিৎসা করতে ।আর তোমারও খুব প্রশংসা করছিলেন গো বাবু ।

সতীশের কাছে সর্ষে শাকের স্বাদটা কেমন তেতো ঠেকলো ।হয়ত অনেক সকালে রান্না বলে ।মুখে কিছু বললনা তা নিয়ে কলমিকে । থালাটা সারিয়ে হাত ধুয়ে নিলো থালার পাশে রাখা বাটিতে । আসন ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল গোমস্তার ছোট ছেলেটা একটু অন্যরকম বলেই তো জানি কলমি তাছাড়া ওরা লোকও ভালো নয় । তাছাড়া যে লোক নিজে সাঁঝ কে......
যাক দেখো যেটা ভালো বুঝবে ।মেয়ে তোমার । কলমি বলে ওঠে এমন কোনো ব্যরাম নেই ওই একটু ভুলো মনে রাখতে পরেনা মানুষজন ।তাছাড়া কি করব...এ মেয়ে কে সব জেনে কে বিয়ে করবে বাবু ? আমার আরও দুটো মেয়ে আছে যে ওদেরই বা কি হবে ?
সতীশ হঠাৎই বলে ওঠে ওরা পড়বে কলমি ।আমিও পড়াবো ওদের ।তারপর ওরা যা করতে চাইবে সেটাই ওরা করবে তা সে বিয়ে হোক বা জীবিকা নির্ধারণ ।
সতীশের কথার অর্থ বোঝেনা কলমি। বলে হা বাবু তাইতো মাস্টারও বলে গেল দুদিন আগে ।আজ তাই ওরা মাস্টারের বাড়ি পড়তে গেছে । সন্ধে নামছে আমি ওদের আলো দেখিয়ে ঘরে নিয়ে আসি ।তুমি সাঁঝের কাছে বসো একটু ।

সতীশ এতক্ষণ খেয়াল করেনি ।জানলার ধারে দাঁড়িয়ে সাঁঝ ওদের কথাই শুনছিলো ।কলমি চলে যেতে খেয়াল হলো সতীশের । সাঁঝের দিকে চোখ পড়তেই ওর বুকের ডেকে উঠলো "ডিড ইউ ডু ইট" পাখিটা । শ্লথ পায়ে ও এগিয়ে গেল সাঁঝের দিকে । অদ্ভুত ভাবে দেখে সাঁঝের চোখদুটো ভরন্ত ।পোয়াতি পেটের মত ।যেন সামান্য কম্পনেই ভূমিষ্ঠ হবে ।
সাঁঝ এখন হাঁটতে পারে ধীরে ধীরে ।শুধু মুখের কথা এখনো ফোটেনি ।যাবার আগেই দেখে গিয়েছিলো ও ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন