শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রীনা রায়



দ্বিতীয় পর্বঃ
স্কুল, বাড়ি, বাজার, কলিগদের সাথে সময় কাটানো, মাঝে মাঝে ঋকের সাথে দেখা করে আসা, এভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল অনন্যার।
ক্লাস ফাইভের ক্লাসটিচার ছিলো ও।
সেদিন রোলকল শেষ করে সবে পড়ানো শুরু করেছে, 
পিছনের বেঞ্চ থেকে রিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো, 'ম্যাম, অনিন্দিতা কাঁদছে', অনন্যা প্রথমে বুঝতে পারলোনা ঠিক কি হয়েছে, তারপর নিজেই উঠে দেখতে গেল কি হয়েছে, গিয়ে দেখে অনিন্দিতা নামের বাচ্চা মেয়েটা কাঁদছে আর চোখেমুখে প্রবল আতঙ্কের ছাপ।
বারবার জিজ্ঞেস করেও তেমন কোন সদুত্তর পেলনা,শুধু ওর ছোট্ট শরীরটা বারবার আতঙ্কে কেঁপে উঠছিল ।
অনন্যা ওর পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে চেষ্টা করলো ওর ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে, তারপর অনেক চেষ্টায় মেয়েটি যা বললো খানিকটা এইরকম, ও যে স্কুলভ্যানে করে আসে তার হেল্পার ও ড্রাইভার দুজনেই ওকে শারীরিক নিগ্রহ করে, আর ওকে ভয় দেখিয়ে রেখেছে যে কাউকে কিছু বললে ও আর কোনোদিন মা বাবার কাছে ফিরতে পারবেনা।
যেহেতু ও সবার প্রথমে গাড়িতে ওঠে, আর সবার শেষে নামে তাই বেশ কিছুটা সময় ওকে একা থাকতে হয়, ওরা সেই সুযোগটাই নেয়।
ও ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেনি।
--
আর দেরি না করে অনন্যা সব ঘটনা স্কুলের হেডমিস্ট্রেসকে জানালো।
আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হল যে, মেয়েটির মা বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে সব জানানোই শুধু নয়, ঐ পুলকারের ড্রাইভার ও হেল্পারকে দেরি না করে এখনই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত ।
ঘটনা ছড়িয়ে পড়তে বেশী সময় লাগলোনা।
সমস্ত অভিভাবকদের ভিড় জমতে লাগলো স্কুল চত্বরে। অনেকেই বলতে লাগলেন তাদের বাচ্চারাও এইধরনের কথা বাড়িতে বলেছিল, এমনকি কেউ কেউ তাদের পুত্রসন্তানদের মলেস্টেশনের কথাও জানালো।
কিন্তু ছোটোরা কি বলতে কি বলছে ভেবে তারা আর গুরুত্ব দেয়নি।
কিন্তু এখন তারা বিপন্ন বোধ করছে,সন্তানের সুরক্ষার কথা ভেবে আতঙ্কিত।
হঠাৎ করেই অনন্যার ঋকের জন্য খুব মন খারাপ করতে লাগলো। একটা ঘটনার কথা আচমকাই মনে পড়ে গেল।
ঋক তখন সবে প্রি নার্সারীতে ভর্তি হয়েছে, ওদের ক্লাস টিচার একদিন গার্জিয়ান কল করলেন। এসব ব্যাপারে অনন্যাকেই যেতে হত।গিয়ে দেখলো আরও দুজন বাচ্চার মাকেও ডাকা হয়েছে।মিস ওদের জানালেন ঐ তিনটি ছেলে ক্লাসে ড্রেস খুলে নিজেদের প্রাইভেট পার্টে হাত দিচ্ছিলো।ওরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছিল। 
পরে ছেলের সাথে কথা বলে অনন্যা জেনেছিল, বাকি দুই বন্ধুর মধ্যে একটি ছেলে তাদের এটা করতে বলেছিল, তার মায়ের সাথে কথা বলে ওরা জেনেছিল ওরা নতুন এসেছে শহরে, ভালো জায়গায় বাড়ি না পেয়ে এমন এক জায়গায় ওদের বাড়ি ভাড়া নিতে হয়েছে যেখানে পাশেই একটা বস্তি, ওরা দুজনেই সার্ভিস করে, ছেলের দিকে ভালভাবে নজর দিতে পারেনা, ছেলে বলেছে কাজের মাসির ছেলেটা তাকে ঐরকম করতে বলেছিল।
ঋক ভালো আছে তো? আচ্ছা, ঋক ওর সবকথা মন খুলে ওর বাবাকে, ঠাকুমাকে বলতে পারে তো? নাকি, ওর মনের কথা কেউ শুনতেই চায়না? 
বড়দির কাছে একটা অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে অনন্যা বাড়ি ফিরে ঝটপট ব্যাগ গুছোতে থাকলো।
আধঘন্টা পরেই একটা ট্রেন আছে, ওকে এক্ষুনি ঋকের কাছে যেতে হবে।
(ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন