বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯

শামীম মনোয়ার




বই



কিছু স্মৃতি :  
যে মানুষটি অামাকে বই পড়া শিখিয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন অামার বাবা  স্কুলের বইয়ের বাইরে তিনি যে বইটি অামাকে প্রথম কিনে দিয়েছিলেন সেটি হচ্ছে ডা: লুৎফর রহমানের "মহৎ জীবন"  তখন অামি দ্বিতীয় শ্রেনিতে পড়ি  বইয়ের প্রথম পাতায় লিখে দিয়েছিলেন- জীবনে মহৎ হবে এই দোয়া করি  বইটির মলাটের রঙ গন্ধ এখনো অামার মনে অাছে  অামরা তখন নানা বাড়ী যেতাম ট্রেনে চড়ে  নানা বাড়ী যাওয়ার সময় সিরাজগঞ্জ রেল ষ্টেশন থেকে বাবা অামাকে একটি রাশান ছবির বই কিনে দেন  নাম বু্দ্ধিমতি মাশা  রঙিন ছবিতে মাশা নামক একটি মেয়ের নানা রকম বুদ্ধিদীপ্ত কাজ  বইটা অামার এত ভালো লেগে গেলো যে রাত্রে শোবার সময়ও অামি বইটি মাথার কাছে রাখতাম অামি তখন তৃতীয় শ্রেনিতে পড়ি  স্কুলে নিয়ে অামি গর্ব করে সেই বই দেখাতাম  তখন হয়তো অামার জামাটি ছিলো ছেড়া, পায়ে জুতো নেই  কিন্তু বইটির কারনে অামার নিজেকে অন্য  সবার চাইতে বেশি সুখি মনে হতো কারন বইটি সবাই জোড় করে অামার কাছ থেকে নিতে চাইতো  সেই থেকে অামার বইয়ের জগতে প্রবেশ 
অামার বাবা স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী করতেন  ছোট খাটো চাকরী  চাকুরী সূত্রে অনেক সময় শহরে ঢাকা পাবনা যেতেন  অামরা তখন তিন ভাই  বাবা শহর থেকে ফেরার সময় শুধু বই নিয়ে অাসতেন  নানা রকম গল্পের বই  বাবা ফিরে এলে অামাদের তখন একমাত্র কাজ ছিল তার ব্যাগ সবার অাগে কে খুলবে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা  খুলেই পেতাম নানা রকম বই  সে সময়টা ছিলো অামাদের সবচেয়ে মজার সময়  অামার দেখা শ্রেষ্ঠ দৃশ্য হলো - হারিকেন জ্বালিয়ে পাশাপাশি বসে অনেক রাত্রি পর্যন্ত অামার বাবা মা বই পড়ছেন অামি দড়জার অাড়াল থেকে সে দৃশ্য দেখতাম বইয়ের দিকে ঝুকে থাকা  দুজনের চশমা পড়া সেই মুখ সেই মগ্নতা হারিকিনের স্বল্প অালোয় অামার কাছে স্বর্গীয় কোনো দৃশ্যের মত মনে হতো অামাদের ছনের ছাউনি দেয়া ঘরে তেমন কোনো অাসবাব পত্র ছিলো না  ছিলো একটা বইয়ের অালমারী  সেটা ছিলো অামাদের সব চাইতে রোমাঞ্চকর স্থান  অামাদের  সেই স্বল্প অায়ের বাবার কেনা রাশি রাশি বই  সেই অল্প বয়সেই অামি পড়ে ফেলি বিভূতি ভূষনের 'পথের পাঁচালী'  কি যে এক ঘোর লাগা ছুয়ে যায় অামাকে  অামি তখন নদীর ধারে কাশবোনে জঙ্গলে অপুর মতো কঞ্চির তরবারী নিয়ে ঘুরে বেড়াই  এসএসসি পাশ করার অাগেই অামার পড়া হয়ে যায় গল্পগুচ্ছ, শ্রীকান্ত চার পর্ব, রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বেশির ভাগ উপন্যাস, কৃষন চন্দর, সাদাত হাসান মান্টো ( যে কারনে পরবর্তীতে জন্ম নেওয়া অামার ছোটো ভাইয়ের নাম রাখা হয় সাদাত)  কি কারনে জানি অামার বাবার প্রিয় লেখক ছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য  নিমাইয়ের বই বাবা অনেক কিনতেন  তারমধ্যে "মেম সাহেব" বইটাতে বাবা অনেক অান্ডার লাইন করে রেখেছিলেন তাছাড়া সেই সময় নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী,  বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক ছাড়াও অনেক  লেখকের বই অামার স্বল্প শিক্ষিত বাবা কিনে এনেছেন  যা অাজ ভাবতে অবাক লাগে  তবে অামার বাবা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে ফেলেছিলেন মনে হয় হুমায়ূন অাহমেদকে  ওনার "শ্রাবণ মেঘের দিন"  পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অামাদের একমাত্র ছোটো বোনটিকে উনি অবসরকালীন সমস্ত টাকা খরচ করে ডাক্তারী পড়িয়েছেন

কিছু তথ্য  (গুগল থেকে নেয়া)-
সাহিত্যের প্রাচীনতম বই : ‘দি এপিক অফ গিলগামেশকে ধরা হয় সবচেয় প্রাচীনতম সাহিত্যের বই খ্রীষ্টপূর্ব ২১০০ সালে পাথরের উপরে খোদাইকৃত ১২টি অধ্যায়ের এই মহাকাব্য উড়কু এর রাজা গিলগামেশ বীর ইকুড এর কাহিনী নিয়ে লেখা প্রথম আধুনিক উপন্যাস : জাপানের মুরাসাকি শিকিবু নামের একজন লেখিকার The tale of Genji হচ্ছে প্রথম আধুনিক উপন্যাস  প্রথম মুদ্রিত বই : গুটেনবার্গ বাইবেল- ১৪৫৩ সাল
টাইপ রাইটারের মাধ্যমে প্রথম লিখিত বই : মার্ক টোয়েনের দি এডভান্সার অফ টমসয়ার সবচেয়ে বড় বই : সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সবচেয়ে বড় কাগজের বই This the Prophet Mohammad .০৬ দৈর্ঘের ৪২৯ পাতার এই বইটির ওজন ৩০০০ পাউন্ড সবচেয়ে বড় উপন্যাস : Remembrance of Things Past মার্শেল প্রাউস্ট লেখা এই বইটিতে চরিত্রের সংখ্যা ৯৬০৯০০০ টি
সবচেয়ে দামী বই : লিওনার্দো দা ভিঞ্চির Codex Leicester বইটি মাইক্রোসফটের মালিক বিলগেটস কিনেছেন ৩০. মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে বইয়ের ভিতরে সবচেয়ে বড় বাক্য : ভিক্টর হুগোর লা মিজারেবল উপন্যাসের একটি বাক্য আছে ৮২৩ শব্দের সবচেয়ে বড় পাঠক : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট প্রতিদিন একটি বই পড়ে শেষ করতেন
বেশি পড়া হয়েছে যে তিনটি বই : বাইবেল, কোটেশন ফরম চেয়ারম্যান মাও সে তুং, হ্যারিপটার এলিস ইন দ্য ওয়ান্ডার ল্যান্ড এর এলিস আসলে একটি বাস্তব চরিত্র লুইস ক্যারোলের এক আত্মীয়ের দশ বছরের কন্যা এলিস লিডেল তাকে একদিন পারিবারিক নৌকা ভ্রমনের সময় জোর করে গল্প বলতে বলে এলিস কে শুনানো সেই গল্পটিই এলিস ইন দ্যা ওয়ান্ডারল্যান্ড

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন