শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮

স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক



সাইক্লোন




সাজছে আকাশ সাঁজোয়া মেঘ সাজে
ঝোড়ো হাওয়ায় ভাঙছে রঙীন দিন
প্রেম অপ্রেম দুলছে সাঁকোর মাঝে
শোধ দিতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাস ঋণ।

রামধনু রঙ ছাইছে মেঘের কালো
নামলো আঁধার মেঘের লেপ চাদরে
কান ফাটানো বাজ বিদ্যুৎ আলো
ডাকছে কে আজ মৃত্যুকে সাদরে!

হাত বাড়িয়ে হাত আসেনা হাতে
আলগা আদর হাতড়ানো অভ্যেস
রূপকথারা আগুন ছড়িয়ে রাতে
এক দেয়ালের আড়াল মাপছে বেশ।

আড়াল কিন্তু এক বিঘতের মাঝে
মাঝ সমুদ্রে উথালপাথাল তরী
এক পা এগোলে মরণঘন্টা বাজে
সজ্ঞানে তাই সহস্রবার মরি।




দুঃস্বপ্ন




এ শহরে আর কেউ আসে না।
এ শহরে কেউ কোন পাতে না।
কলকাতা শহরে শীত কি সত্যিই আসে?
এ নির্মম শহরের কঠিন পিচের রাস্তায়
শীতের নরম রোদ, আদুরে বিকেল বড্ড বেমানান।
এ শহরে বর্ষাও আজকাল আর আসে না। 
সেও ছুটিতে আছে অনির্দিষ্টকালের জন্যে।
এ শহর শুধু জ্যৈষ্ঠের, কিংবা ভাদ্রের অথবা চৈত্রের
পিচগলা রোদ্দুরে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলে যেমন লাগে
কাঠফাটা আগুনের তাপে ক্লান্তি যেভাবে গ্রাস করে
ধূ ধূ ফাঁকা রাস্তায় চলতে চলতে যেরকম ধুঁকতে হয়
এ শহরটা তেমনই কঠিন কঠোর।
এ শহরে আর কেউ আসে না।
এ শহরে কেউ কোন পাতে না।
এ শহরে স্নেহ নেই, প্রেম নেই, যত্ন নেই, 
আদর আর আবদারও নেই। 
এককালে সবই ছিল।
এখন প্রখর তাপে শুকিয়ে গেছে সমস্ত কিছু।
পালিয়ে গেছে সবাই এ মৃতের শহর ছেড়ে।
রয়ে গেছে কিছু মৃত প্রেমিকের প্রেত
যারা এখনো উদভ্রান্তের মতো প্রেম খুঁজে চলেছে
প্রত্যেক রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
একফোঁটা প্রেম পেলে যারা মানুষ হয়ে যেত,
প্রেমহীনতায় তারা সবাই উন্মাদ হয় গেছে।
একটু ভালবাসার ছোঁয়া পাবার তেষ্টায় 
ছাতি ফেটে গেছে ওদের
কেউ ওদের পিঠে হাত রাখেনি
কেউ ওদের হাতে ঠোঁট ছোঁয়ায়নি
কেউ ওদের কাছে টেনে নেয়নি।
তাই ওরা আজও সরীসৃপের মতো
হেঁটে বেড়ায়, হামা দেয়, গড়িয়ে যায়
হাহাকার করে, এতটুকু যত্নের আশায়।
এ শহর একটুও আদর দিতে পারেনি।
এ শহর একফোঁটা স্নেহ দিতে জানেনা।
এ শহর দুটো মায়ার কথা বলতে জানে না।
তাই এ শহরে আর কেউ কখনো আসবে না।



না মেলা অন্ত্যমিল




আমি তো ফিরে চাইনি কোনকিছু
আমি তো ফিরে চাইনি কোন মানে
যত্নে সাজানো মনের দালান কোঠা
একলা বিকেলে দস্যু আঘাত হানে।
আপন খেয়ালে খেলনাবাটির বেলা
দুরন্ত পায়ে দৌড়ে বেড়ানো দিন
আচমকা সেই নিকষ হাতের ছায়া
মুখোশে কিন্তু হাসিটা তার রঙীন।
পিছলে যাচ্ছে খিলখিলিয়ে হাসি
হারিয়ে যাচ্ছে দুষ্টুমি সাইকেল 
এলাডিং আর বেলাডিং দুই সই
একলা চোখেও মনে রাখে সে বিকেল।
অন্ধকারটা ক্রমশই কাছে টানে
আয় কাছে আয়, আর একটু কাছে থাক
জাপটে ধরছে ভয় ভাবনারা যেন
চেনা অচেনায় মস্ত একটা ফাঁক।
ছুট ছুট ছুট, খুব জোরে ছুটে চলা
থামবে কোথায় কে জানে কতটা দূরে
আরো জোরে ছুট কাউকে যাবে না বলা
আতঙ্ক নামে সমস্ত মন জুড়ে।
যুগ যুগান্ত প্রাচীন গল্পকথা
একলা গোপনে মনের ছায়ারা জানে
বিস্মৃত শোকে দু মিনিট নীরবতা
এখনো বিকেলে দস্যু আঘাত হানে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন