সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

রীনা রায়




"পিকনিক"
********
মনসিজ এপার্টমেন্টে নন্দিনীরা নতুন এসেছে। এপার্টমেন্টের ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবারের মত এবারেও পিকনিক হচ্ছে।
সকালে সাড়ে সাতটা বাজতে না বাজতেই সবাই রেডি হয়ে ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে গেছে। নীচে নেমে বাচ্চা গুলোর কলকাকলি দেখেই মনটা ভালো হযে গেল নন্দিনীর।
সাদা পালাজো আর ফুলছাপ কুর্তি পড়েছে নন্দিনী। তার ওপর একটা মেরুন লং কোট চাপিয়ে নিয়েছে। বেলার দিকে গরম লাগলে খুলে রাখবে।
নতুন এসেছে বলে এপার্টমেন্টের সবার সাথে পরিচয় না হলেও কিছু জনের সাথে আলাপ হয়েছে।
নন্দিনী খুব চেষ্টা করছে নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে।
ও তো পিকনিকে আসতেই চায়নি।
সৌহার্দ্যর জোরাজুরিতে আসতে হলো। আসলে, ওর কোনো কিছুই ভালো লাগেনা। যেন করতে হচ্ছে তাই করে। জীবনটাকে যেন জোর করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সৌহার্দ্য তো কম চেষ্টা করেনি ওকে ভালো রাখার। কিন্তু নন্দিনী পারে কই সৌহার্দ্যকে কাছে টানতে...

পিকনিক স্পটটা বেশ ভালো লাগলো নন্দিনীর।কৃত্রিমভাবে সুন্দর সাজানো হলেও একটু দূরেই ঘন সবুজ বনানী চোখে পড়ছে। একদিকে সবুজ পাহাড়, পিকনিক স্পটের কাছেই একটা সরু নদী বয়ে চলেছে।
ক্লাবের ম্যানেজার সুমিত জয়সোয়াল সবকিছুর তত্বাবধানে আছে। যাওয়ার সাথে সাথেই গরম কফি, জুস চলে এলো। একটু পরেই টিফিনের পর্ব। এখানেও দু রকম ব্যবস্থা আছে। সাবেকি লুচি আলুরদমও আছে, আবার কেক, ডিমসিদ্ধ, কলাও আছে।
টিফিনের পর্ব মিটলে যে যার নিজের মত আনন্দে মেতে উঠেছে।
ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, কেউ কেউ নৌকাবিহারে চললো।
পাশের ফ্ল্যাটের অপূর্বদা আর বৌদির খাওয়া নিয়ে খুনসুটি অব্যাহত।
সৌহার্দ্যও ছোটগুলোর সাথে ক্রিকেট নিয়ে মেতেছে। মাত্র দু বছর হল ওদের বিয়ের, নন্দিনীর কিছু ভালো লাগেনা। সব ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করে। ওর মনটাই যে অন্য কারোর।
আনমনে পায়ে পায়ে নদীর ধারে এগোয় নন্দিনী।
আরো বেশ কিছু পিকনিক পার্টি এসেছে।
একটা বল এসে গায়ে লাগতেই চমকে ওঠে ও। বলটা ফেরত দিতে গিয়ে ওর হৃদস্পন্দন থমকে যায়।
সামনে কে দাঁড়িয়ে...ওর ঋত!
আনন্দে দৌড়ে ও ঋতর কাছে যাবার মুহূর্তে এক ঝলমলে তরুণী ছুটে এসে বললো, ''ডার্লিং, একটু তাড়াতাড়ি... চলো, এবার আমাদের টার্ন'', হাত ধরে টানতে টানতে ঋতকে নিয়ে চলে গেল।
এ কে? ঋতর গার্লফ্রেন্ড না বউ? সিঁথিতে মনে হলো যেন সিঁদুর ছিলো! ঋত এরমধ্যেই বিয়ে করে নিয়েছে? বেশ তো খুশিই মনে হলো।
ভালো, ভালো খুব ভালো।
ভালো থেকো ঋত... আমিই শুধু বোকার মত...কান্নাটাকে চেপে
পিছন ফিরতেই দেখে সৌহার্দ্যও কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
''চলো, নৌকায় চড়বে?''
কিছু না বলে ও সৌহার্দ্যর হাতটা নিজের মুঠোর মধ্যে নিলো।
-------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন