সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শুভদীপ চক্রবর্তী

অনাহুত
       -- 
_________________________________________

পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা বহু পার্বত্য নদী অনেক সময় হারিয়ে যায় অমনোযোগী প্রকৃতির উদাসীনতায়। যারা নেমে আসার সুযোগ পায়, সাথে বয়ে আনে নতুন নতুন গল্প আর নাম না জানা পাহাড়ি ফুলের গান। তবে নেমে আসা পাথরগুলোর খোঁজ করেনা কেউ, জানতে চায়না তাদের ইতিহাস।
পাথরেরা সব বিদ্রোহী সুর তোলে। ছোটো থেকে বড়ো সবে মিলে জমাট বাঁধে মস্ত নদীর গোপন শিরা-উপশিরায়, অনেকটা কোলেস্টেরলের মতো। কমাতে থাকে নদীর নাব্যতা; হৃদস্পন্দন মন্থর হয় আরও। হঠাৎ করেই নদীর দাম্ভিক বেগ ছুঁয়ে দেখে নিজ ব্যর্থতা।
 হারিয়ে যাবার সুর উঠতেই অচেনা একটি মুখ এক এক করে সরিয়ে ফেলে সকল পাথর, সরিয়ে ফেলে জেহাদের প্রবলতা- হয়তো খেলার ছলেই। আন্তরিক ধন্যবাদের সাথে খানিক স্বচ্ছ জলের ফোঁটা গায়ে ছিটিয়ে আবারও জেগে ওঠে নদীর বিশৃঙ্খল ঢেউ। হরেক রকম পাথর নিয়ে বাড়ির কোণে ঝুলন সাজায় সে। 
হাজার মাইল দাপিয়ে এসে শেষে বৃদ্ধ নদীর কামুক বাসনা একটিবার ছুঁয়ে দেখতে চায় মোহনার উজাড় করা দেহ। ঝুলন শেষে পাথরগুলোও দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পরে এদিক ওদিক। কেউ কেউ উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট হয়ে হারিয়ে ফেলে নিজ পরিচয়; পরিণত হয় ধুলোয়। যারা বেঁচে থাকে কোনরকমে, লোকের পায়ের লাথি খেতে খেতে চলে যায় দূরে - অনেক দূরে। ক্রমাগত ঘর্ষণে মেরুদণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হয় রোজ। পাথরের বয়স বাড়ে খুব। 
ইতিমধ্যেই বার্ধক্যের শেষ শক্তি কুড়িয়ে সাগরের সাথে মিলন ঘটে নদীর - রঙিন হয় মোহনা। এই মহামিলনের মাধুর্য জরাগ্রস্ত দেহে একটিবার মাখবে বলে একটি পাথরখণ্ড হাজির হয় মোহনার কোলে। বিকেলের পড়ন্ত রোদে শান্ত একটি ছেলে অজ্ঞাতেই পাথরটি নিয়ে খেলতে খেলতে সেটিকে জলের দিকে ছুঁড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। একরাশ ধুলো আবছা করে সব। পাথরখানা গিয়ে ডোবে লবণ আর মিষ্টি জলের মাঝে। নদীতে জাগে এক পরিচিত শিহরণ। একটা অপরিচিত মাছ এসে চেখে দেখে নবাগত পাথরের স্বাদ, শ্যাওলার গন্ধ না পেয়ে সেও হারিয়ে যায় স্বচ্ছ জলের জটিলতায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন