“ছোবল”
দুপুর ভর দীঘির জল তোলপাড় করে চান করলো মতিয়া। এতক্ষনে শরীর মন দুইই ঠান্ডা হলো।গ্রামটাকে যেন বোবায় ধরেছে আজ। দীঘির জল নিয়ে মনের খুশিতে খেলছে ও। চিকন শ্যামলা গায়ের রঙ, কোমর ছোঁয়া চুল। আস্ত দীঘিই যেন লুকিয়ে আছে চোখের মাঝে। মতিয়ার বাবা নেলকো সর্দার গাঁয়ে, গাঁয়ে ঘুরে বিষধর সাপ ধরে এনে বিক্রি করে। ভালো রোজগার কিন্তু সবটাই যায় ওই হাঁড়িয়ার ঠেকে। বসত ভিটেও বাঁধা পড়েছে। ঘরে মা মরা সোমত্ত মেয়ে কিন্তু সেদিকে হুঁশ কই ! জমিদার রুদ্রনারায়ণকে লোকজন একটু সমঝেই চলে। ওনার রুদ্র মেজাজ অসহায়দের ওপর একটু বেশিই প্রকট। নেলকো সর্দার তো সবটুকুই খুইয়ে বসে আছে ওনার চৌকাঠে।
ভর সন্ধ্যেবেলায় বাপের সাথে রুদ্রনারায়ণের চাপা গলায় কথার শব্দ শুনেই কান পেতেছিল মতিয়া। রাত বাড়তেই জমিদার বাড়িতে জড়িবুটি দিতে পাঠিয়েছিল বাপ টা। একটুও গোঁসা করেনি ও। কোমরে কুকুরি গুঁজে গায়ে চাদর ঢাকা দিয়ে গিয়ে উঠেছিল রুদ্রনারায়ণের ঘরে। সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছিলো শয়তান টা। চরম সর্বনাশের আগেই পালিয়ে এসেছিলো শয়তানটার কবল থেকে। সকাল হতে না হতেই গোটা গ্রাম জেনে গেলো কাল নাগিনীর ছোবলে রুদ্রনারায়ণ মারা গেছে। আর পালঙ্কের তলায় পাওয়া গেছে নেলকো সর্দারের সাপ রাখার ডালা। দেনার দায়ে বিকোনো নেলকো যে নিজের প্রাণ বাঁচাতে এই কাজ করেছে বুঝতে বাকি রইলোনা কারোরই। পুলিশ এসে হাতকড়া পরিয়ে ধরেও নিয়ে গেলো।
রুদ্রনারায়াণ লোভী বেড়ালের মতোই ছোঁকছোঁক করতো মতিয়ার কাছেপিঠে। নিজের কানে যখন শুনলো বকেয়া দেনা মকুব করার জন্যে নিজের মেয়ের সওদা করতেও অরাজি নয় নেলকো, এমনকি কড়কড়ে দশটি হাজার টাকা হাত পেতে নিয়েও নিলো বরাবরের মতো মুখে কুলুপ আঁটবে বলে। রাগে দুঃখে চোখে জল এসে গেছিলো মতিয়ার, নিরুপায় হয়ে ছুটে গেছিলোজমিদার গিন্নির কাছে। গম্ভীরমুখে সবটুকু শুনেছিলেন গিন্নিমা। জড়িবুটি নিয়ে রাতে ঘরে ঢোকার সময়েই মতিয়া দেখতে পেয়েছিলো, গিন্নিমার খাস চাকর রুদ্রনারায়ণের ঘর থেকে পিছনের দরজা দিয়ে চুপিসাড়ে পালাচ্ছে। নাহ, কুকরীটা কাজে লাগাতে হয়নিআর ওকে। শুধু পালঙ্কের নিচে লুকোনো ঢাকনা খোলা ডালাটা জোরে নাড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলো মতিয়া। দুই নারীই মুক্তি পেলো লম্পট পুরুষের হাত থেকে। শেষমেশ মরিয়া হয়ে সর্বনাশের নাশ করলো এভাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন