রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

পিয়াংকী

                                  



গোয়ালন্দ স্টিমার চিকেন কারী 


আজ রবিবার। চলুন ঘুরে আসি বাংলাদেশ। 


প্রায় দেড়শ বছর আগের ছবি । কয়েকশো লোক বোঝাই একটা স্টিমার, স্টেশন থেকে ছাড়ল, যেতে হবে অনেকটা পথ। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে সে,যাত্রীরা গন্ধ পাচ্ছেন, ভয়ানক লোভনীয় গন্ধ।


অবিভক্ত বাংলা। সালটা ১৮৭১। সে বছরেরই পয়লা জানুয়ারি চালু হয়েছে রেল পরিষেবা। কুষ্টিয়া থেকে গোয়ালন্দ অবধি।হিন্দু বাঙালিদের ঘরে মুরগী তখনও আত্মীয় হয়ে ওঠেনি।ফলত যা হবার তাই হল।নিষিদ্ধ হবার টান ভয়ানকভাবে মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে চিরকাল। স্টীমার ঘাটের হোটেল রেস্টুরেন্টে অথবা মাঝিমাল্লাদের হাতের জাদু তাই চেখে দেখতে থাকলেন তৎকালীন সমস্ত যাত্রী।  

   

আমার বয়স তখন নয়দশ বছর হবে।শীতকাল।পিকনিক হচ্ছে মামাবাড়ির উঠোনে।অনেকদিন পর চেতন মামা এসেছেন বাংলাদেশ থেকে।আলোআঁধারীর  মত মনে আছে কিছুটা,  আমার বড়মামা আর চেতনমামা মিলে রান্না করছেন গোয়ালন্দ স্টিমার কারী। আজ যখন ফুডব্লগ লিখছি নস্টালজিয়া ভর করছে ভীষণ ।


ইতিহাসঃ  আসলে সেই সময়ে খেটে-খাওয়া মানুষের (মাঝি এবং  সংলগ্ন কর্মচারী ) জীবন ঘাঁটলে দেখতে পাই, তরিতোয়াজ করে ভেজে কষিয়ে রান্না করার, সময় ধৈর্য অর্থ কিছুই পর্যাপ্ত ছিল না। খুব সাধারণভাবে সমস্ত মশলা মাখিয়ে কম আঁচে চাপাঢাকা দিয়ে রান্না করা ছিল তুলনায় অনেক সহজ। স্টীমারে শিলনোড়া থাকত না।মিক্সি তো আকাশের চাঁদ তখন।এই রান্নার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল 'না-বাটা' মিহি কুচোনো এবং চিংড়িশুটকির ব্যবহার ... 


          


 ধুয়ে  পরিস্কার করা মুরগীর মাংস,  তাতে বড় মাপের কাটা আলু, মিহি করে কুচোনো পরিমাণ মত পেঁয়াজ, রসুন(বেশ খানিকটা ) আদা, কাঁচাপাকা লংকা, চিংড়িমাছ বাটা(অথেনটিক পদ্ধতি অনুযায়ী চিংড়ি শুটকি দেয়া হত) এবং সর্ষের তেল... একটা বড় গামলায় একসাথে সবকিছু যত্ন করে সময় নিয়ে মেখে  কয়েকঘন্টার বিশ্রাম। 


এরপর ভারী হাঁড়ি বা লোহার কড়াইতে বেশ করে সর্ষের তেল, তাতে লবঙ্গ এলাচ দারচিনি তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে মেখে রাখা মাংস। জলের প্রয়োজন নেই।পাঁচ মিনিট পর ঢাকা খুললেই দেখা যাবে অনেক জল বেরিয়েছে। সেই জলেই সবকিছু সেদ্ধ হয়ে যাবে।এই পর্যায়ে একটা গন্ধরাজ লেবু (ওপরের স্কিনটা সামান্য ঘষে নিলে তিতকুট ভাবটা চলে যায়) গোল গোল স্লাইস করে কেটে ডুবিয়ে  তারপর আরো কিছুক্ষণ। একটু গামাখা একটু ঝোল এরকম কনসিস্ট্যান্সি এলেই  তৈরি। 


 এখানে বলার, লেবু ব্যবহার নিয়ে কিন্তু ভিন্নমত আছে,বড়মামাকে ফোন করে জানলাম চেতনমামা নাকি বলেছিলেন বাংলাদেশের মানুষদের কাছে এই রান্নায়, হয় কাগজী নতুবা গন্ধরাজ কিন্তু  মাস্ট।

                   


আমি পরিবেশন করেছি গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, মুসুরডালের বড়া আর সামান্য স্যালাড দিয়ে, তবে রুটি পরোটা দিয়েও জমে যায় ঐতিহাসিক এই পদ


আর দেরি কেন? রান্নাঘরকে নিয়ে যান অবিভক্ত বঙ্গে পদ্মার ভাসমান  স্টীমারে...


1 টি মন্তব্য:

  1. গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মাংস ভাত আমি আমার দুই বাড়ীতেই দেখেছি। জিভে জল আনা লেখা

    উত্তরমুছুন