শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭

তুষ্টি ভট্টাচার্য


                    উল্টে দিলে-২ 

     বিশ্বাস করুন, এই কাফকাকে আমি চিনি না। কাফ সিরাপ চিনি, চিনির স্বাদও চিনি। কফির কাপ নিয়ে কাফি হাঙ্গামার কথাও জানি, কিন্তু কাফকাকে উল্টে দিতে পারি নি। কাফকার রূপান্তর হয় নি, অথচ তিনিই আস্ত একটা মানুষকে পোকায় বদলে দিয়েছিলেন! সেই যে পরমহংস বলে গেছিলেন, লোক না পোক, সেটাই অক্ষরে অক্ষরে চোখে খোঁচা দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন উনি। অথচ নিজে বদলালেন না একটুও।  কাফকা উল্টোলেও কাফকাই! কীমাশ্চর্যম!! সোজা উল্টোলে কঠিন, স্বর্গ উল্টোলে নরক, আকাশ উল্টোলে পাতাল, পৃথিবী উল্টোলে বিগ ব্যাং, ব্যাঙের জিভটা পর্যন্ত এমনি এমনি উল্টে যায়, আর মান্‌সের কথা কী কমু! তাদের জিভ খসানো কথা একবার উল্টোচ্ছে তো একবার পাল্টাচ্ছে। অথচ এই কাফকা সাহেব উল্টোলেন না এক চুল। উল্টোতে যে দম লাগে বাবা! এসব নিতান্তই আমাদের দেশী ব্যাপারস্যাপার। সাহেবসুবোর কম্ম না এটা।
        সে যাই হোক, উনি না উল্টোলেন তো আমাদের ভারি বয়েই গেল। এই যে ইদানীং আঁতেল গোষ্ঠী উল্টে যাচ্ছে, সেটা খেয়াল করে দেখেছেন? যেমন ধরুন, এদের তো নাক গুলো প্রচন্ড উঁচু উঁচু হত, সেই নাক আবার সব সময় কুঁচকে থাকত। যেন গুয়ের গন্ধে ভরে গেছে আশপাশ। গু নেই, তবু গন্ধ আছে। মানে গন্ধ সেও কিন্তু মন্দ বড়। ছন্দ নেই তাতে। ছন্দছাড়া গুয়ের যত মুখপোড়া গন্ধ ওই আঁতলগুলোর নাকেই ধরা দিত। হ্যাঁ, তাও আবার উল্টো হয়ে। মানে গন্ধ হয়ে গন্ধকের ঝাঁজের মত নাক জ্বালিয়ে দিত। গন্ধ কে আবার জিজ্ঞেস ক’রে বস না! গন্ধকের মত গন্ধের এবং সন্দের অনেক জ্বালাপোড়া হে! ওসব তুমি বুঝবে না। ঝিম মেরে বসে থাকো বোজা চোখে। যেন ধ্যানী বুদ্ধটি। আসলে তো হার হারামী বুদ্ধু টি! ঘাপটি মেরে বসে থেকে ভাঁজছে মুগুর। বাইসেপ-ট্রাইসেপ থেকে ট্রাই তুলে নিয়ে সেই তো আবার শেষে যাবে বাওয়া ক্রাইয়ের কাছেই! তাহলে আর আস্ফালন কীসের এত!! আস আস এবার ফলন ফলাও। আরেকবার ট্রাই কিয়ে, ট্রাই দিয়ে ভাজো তো দেখি খই। কই পাবে তা আমি জানি না বাপু! কই মাছ এখন আবার গাছে চড়েন না। এককালে চড়ত, একন তার ওব্যেস নেই আর। আর বাপুজীও কই মাছ জেবনে খান নি, খইও ভাজেন নি, তিনি তো চরকার চাকা ঘুরিয়েছেন, আমরা এখনও সেই চাকায় চাক্কি পিসিং এন পিসিং। পিসফুল নয় অবশ্য এই পেষাপেষি। বহুত গ্রীসফুল হাত চাই একখান। তবে না চাকা ঘুরবে বনবন! আর সেই চাকা গড়াতে গড়াতে নিয়ে যাবে তোমায় হাড় হাভাতে কালের এক্কেরে ওই পারে। আহা, কালকে চেন না? কাল বলব তার কাহিনী। আজ শুনে রাখ কান খুলে ওপারের গপ্প। ওপারে সর্বসুখ আছে জান তো? নদীর আর কী! সে এপার ওপার দুই পারের কাছের লোক। সে নির্বিকার বয়ে চলে আকারের দিকে। হাঁ করে দেখছ কী? আকার হল সাকারের যমজ। আকারের কান্না পেলে সাকারের হিসু পায়...এইরকম ওদের হল গিয়ে ব্যাপারস্যাপার। আর র‍্যাপারকে চেন? র‍্যাপার হইল গিয়া ব্যাপারীর মোটা চামড়া। আর চামড়ায় চামড়ায় ঘষা খেলে নুনছাল উঠে গিয়ে সে হয়ে যায় সেই কালের ফোঁস করে ফেলে দেওয়া দীর্ঘশ্বাস। আর এই যে ফেলে দেওয়া হল, ব্যাস্‌ আর কোন চিন্তা নাই এবার। আনন্দ আর সদানন্দের মিলনমেলার তাঁবু পড়ে যাবে মাঠে।
     একটা গপ্প শোন তাইলে। এইবার সেই মাঠে গিয়া কাফকা সাহেব কী কেলেচ্ছাটা করল বলি। মাঠে ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে তিনি দিব্যি পায়চারী করছিলেন। হঠাৎ দেখলেন সাইডের ঝোপটা যেন একটু নড়ে উঠল। কাছে গিয়ে দেখেন একটা লোক ওখানে অ্যা করছে। তিনি বেশ ঘাবড়ে গেছেন এই দৃশ্য দেখে। তখন আর সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, মাঠের সবুজ ঘাস আর তার ঘাসফুলের শোভা দেখার কথা আর মাথায় রইলো না তাঁর। এভাবে ওপেন টয়লেটের কোন ধারণাই ছিল না তাঁর। এও কী সম্ভব!! আর যেই না ভাবনাগুলো জট পাকাতে থাকল তাঁর মাথায়, তাঁরও বেগ এসে গেল। আর সে বেগের জোরও সাহেবের গায়ের জোরের মতই। অতএব আর কোন উপায় নেই বলে আশ্রয় নিলেন সেই ঝোপের পিছেই। কাজ মিটলে পাশে তাকিয়ে দেখলেন, এক ব্যাটাচ্ছেলে তার দিকে তাকিয়ে হলুদ দাঁত ক্যালাচ্ছে। চোখে চোখ পড়তেই বলল, কী সাহেব, কেমন হেগে সুখ হল বল! খোলা মাঠের ফুরফুরে হাওয়ায়...পাছায় ঘাসের সুড়সুড়ি... এইবার আর ‘না’ কর না। বদলে যাও প্লিজ! ঘাসফড়িং হয়ে এখানেই থেকে যাও। আর দেখ, তোমার এই ধলা চামড়ার অ্যা আর আমাদের কালা চামড়ার অ্যা’র রঙ কিন্তু এক। এই তো বর্ষা এসেই গেছে, এবার দুই অ্যা মিলেমিশে মাঠে সার হবে। ঘাসের বাড়বাড়ন্তও হবে, তেমনি ঘাসফড়িং-এরও। আর বেগড়বাই না করে এবেরে বদলেই যাও, কেমন? 
     সাহেব তো ততক্ষণে রেগে অগ্নিশর্মা! কী এত্ত বড় সাহস! আমাকে বদলাতে কয়!! আমি উল্টে যাই না, বরং অন্যদের ওল্টাই। আর আমার অ্যা তুলে কথা! যত বড় মুখ নয়, তত বড় অ্যাঁ!! ছোড়েঙ্গে নেহি, সব কটাকে এবার পোকা নয়, ভাল্লুক বানাবো। দেখি কে তোদের বাঁচায় এবার।
     সেদিন রাতে আবার ফ্রয়েড সাহেব এসে হাজির। তিনি দেখলেন, তাঁর বাংলোর চারপাশে গাদা গাদা ভাল্লুক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়ে তিনি তক্ষুণি তাঁর এযাবৎ যত স্বপ্ন ছিল, তাঁদের দোষ ধরতে শুরু করলেন। তাঁর প্যান্ট হলদে হয়ে গেলে বুঝলেন, একেই বলে সাক্ষাৎ স্বপ্নদোষ! কাফকাকে ডেকে বললেন, বুঝলি, ওই মাঠই বেস্ট! চল আমরা মাঠ হয়ে যাই গে বরং। কাফকার রাগ তখনও কমে নি। আরও রেগে গিয়ে বললেন, কী!! গে হব! তুই ব্যাটা বরাবরের অসভ্য লোক, মাথায় খালি উল্টো চিন্তা, তুই হারামি মাকেও ছাড়িস নি... তোর সঙ্গে গে হব! কচুপোড়া হব। তবে মাঠের আইডিয়াটা মন্দ না, বুঝলি। ফ্রয়েড বললেন, যাব যে, কিন্তু ওই গাদা গাদা ভাল্লুকগুলোর চড় খেয়ে যদি আমরা সসেমিরা হয়ে যাই? কাফকার উত্তর – ধুর ধুর! ওরা তো আমারই সৃষ্টি। এক্ষুনি ওদের চামচিকে বানিয়ে দিচ্ছি। এবার চ!

    আমরা দেখলাম চ-এর মত রাশি রাশি চামচিকে চাদ্দিকে উড়ে বেড়াচ্ছে আর মাঝ মাঠে কাফকা আর ফ্রয়েড গামছা পরে বসে ধামা ধামা মুড়ি-আলুচ্চপ সাঁটছে। আমাদের আর কীই বা করার আছে! দেখেশুনে চোখ পচে গেছে, ফলে যে যার মত যেদিকে ইচ্ছে হাঁটা দিলাম এবারের মত।     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন