শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                   



 মনের হদিশ/ কিছু কথা

_______________________

   প্যারাসাইকোলজি ব্যাপারটা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। যেহেতু সার্টিফিকেট মেলেনি বিজ্ঞানের কাছ থেকে।কূটতর্কে একদিন হয়ত যাব। কোনো মঞ্চে অথবা দূরদর্শনের পর্দায়। আজ লিখতে হচ্ছে তাদের জন্য, যারা আমার কাছে ক্লাস করতে চায়।

  প্রথমেই বলে রাখি , প্রথাগত কাউন্সিলিং আমি করি না। কিছুটা অতীন্দ্রিয় ব্যাপার থাকে। এটা কোনো বড় ব্যাপার নয়। অনুমান করার ক্ষমতা , কুকুর থেকে পিঁপড়ে প্রত্যেকের কম বেশি থাকে। বিপদের গন্ধ পাওয়ার ইন্দ্রিয় আদিম যুগে মানুষের মধ্যে ছিল। যন্ত্র যতদিন কব্জা না করে ফেলেছে, মানুষের অনুমান ক্ষমতা ছিল প্রখর। পশু ইন্দ্রিয় আজো সজাগ। কারণ ? তাদের যন্ত্র নেই। মানুষের ইন্দ্রিয় লুপ্ত হয়নি। শুধু ক্ষমতা কমে গেছে। 

   আমার থেরাপির মূল কথা হল , নষ্ট হয়ে যাওয়া ইতিবাচক অনুভূতি ফিরিয়ে নিয়ে আনা। এটা সময় সাপেক্ষ। অনেকেই সেটা বুঝতে চায় না। চটজলদি সমাধান চায়। বিনাওষুধে , শুধুমাত্র নিজের সাহায্যে নিজেকে ভালো রাখতে পারার নিয়ম জেনে গেলে জীবন আসে ম্যাজিক। দুঃখ কব্জা করে ফেলতে পারলে দুঃখ হয়ে পড়ে অক্ষম। এটা এখন অনেকেই বুঝে গেছেন। অনেকেই ভালো আছেন। তাদের শুভেচ্ছা নিরন্তর ঝরে পড়ছে , এ আমার পরম সৌভাগ্য। 

 এই যে অনুমান করার ক্ষমতা( মোটেই বিরল নয়) অথবা কাউকে দেখে কিছু আঁচ করার, এমনকি তার বিপদ আসছে না সৌভাগ্য সেটাও বুঝে যাওয়া... এগুলো শেখানো মুশকিল। কেউ কেউ ভাবেন বুঝি, মন্ত্র তন্ত্র অং বং টং করতে হয়। কেন এমন ভাবনা আসে? মন্ত্র শক্তির ক্ষমতা আলাদা। সে ছাড়াও ত হয়। উদাহরণ দিয়ে বলছি, যেমন দৌড়তে সকলে পারে, কিন্তু দৌড় বীর হতে গেলে অভ্যাস জরুরি। অভ্যাস যোগ। ।প্রতিদিন বাড়িয়ে তুলতে হবে নিজের এনার্জি। এনার্জি বাড়ানো কি মুখের কথা? শারীরিক ফিটনেস তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম। তেমনি , মন যাতে তীক্ষ্ণ হয়, বোধ যাতে সঠিক হয়, শান্ত থাকতে হয় তার জন্য। মৌন থাকতে হয়। সঙ্গী নির্বাচন ঠিক মত করতে হয়। সঙ্গী যেন বিরক্ত না করে। অযথা সময় নষ্ট না করে। আর যদি করেও, যদি সঙ্গী তেমন হয়েই যায়, খুব বেশি সময় তাকে না দেওয়াই ভালো। ভুল সঙ্গ দুঃখ তৈরির বড় কারণ। 

 নিয়মিত দর্শন আলোচনা করতে হয়। গভীরে পৌঁছতে হয় প্রতিদিন। প্রতিদিন। একদিন ও ফাঁকি দিলে চলবে না। দর্শন হল আলো। প্রথম প্রথম কঠিন মনে হয়, ধীরে ধীরে আত্মস্থ হয়ে যায়। কত কি ই তো আলোচনা করি কিন্তু হারিয়ে যাওয়া কিছু বোধ নিয়ে আলোচনা করি না। কেন? কেউ কেউ আবার দর্শন বলতে কিছু সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে দেন 😀 আউড়ে দেন মানে নিজেই বোঝেন না। আমি বলি, কথামৃত পড়ো। সব আলো লুকিয়ে আছে ওখানে।❤️

     কাউন্সিলিং শেখানো যায়। কিন্তু অতীন্দ্রিয় বোধ শেখানোর বিষয় নয়। কেউ কেউ ভাবে😀 এইতো জয়তী দির মত ফোনে ভালো ভালো কথা বললেই তো হয়ে গেল। ওটাই তো জয়তীদি করে। 

ভালো শব্দের কোনো বিকল্প নেই, একথা সত্যি। বাতাবরণে ম্যাজিক তৈরি করতে জানে শব্দ। রাজনৈতিক নেতা কি করে? ধর্ম গুরু কি করে? শব্দের খেলাই তো করেন। কিন্তু, শব্দ দিয়ে মনের পরিস্থিতি বদল করতে চাইলে তার মধ্যে কিছু বস্তু থাকতে হবে। টেলিফোনে কথা বললেও মন পড়ে নিতে হবে। বুঝে নিতে হবে, অপর প্রান্তের মানুষের না বলা উদ্বেগ। আপাত স্বাভাবিক কথার মধ্যে হয়ত লুকিয়ে আছে বড় কোনো অসুখের ইঙ্গিত। ধরে ফেলতে হবে। এটা নিরলস চর্চার কাজ। অসুবিধার কি আছে?😀 কঠিন তো নয়। যদি রান্না করতে পারি যদি রূপচর্চা করতে পারি তবে নিজেকে নিয়ে বসতেও পারি। 

  মূল কথা হল, সময় সকলের জন্য আছে কেবল নিজের জন্য নেই! একটা দিন অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা। আঠারো ঘণ্টা এনার্জি দিচ্ছি, অন্য লোক প্রশংসা করল না নিন্দে... এই ভেবে। 

 নিন্দে যে করার সে করবেই। সোনারথালায় খেতে দিয়ে,নিজেকে নিঃশেষ করে দিলেও তারিফ জুটবে না। তারচেয়ে একটু তাকাই আমার দিকে। ক্ষয়ে যাওয়া মনের দিকে। লুকিয়ে থাকা শক্তি বাড়িয়ে তুলি। তবে, হয়ে উঠব নিজের ভরসা সেইসঙ্গে অপরের বন্ধু। মনের বন্ধু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন