পদের নামঃ লক্ষ্মীদম
আজ রবিবার।ইনি সপ্তাহের শুরু না শেষ জানি না তবে এই রবিবাবুর সাথে রান্নাঘরপ্রিয় বাঙালির যাতায়াত সেই প্রাচীন আমল থেকে। রবিবার মানেই রাঁধুনির গায়ের গন্ধ, রবিবার মানেই 'কখন যে দুপুর হবে ',রবিবার মানেই সারা সপ্তাহের অক্সিজেন সিলিন্ডার। বড় কথা হল রবিবার মানে রাত এগারোটায় ঘরের মেঝেতে মায়ের পুরনো রঙচটা ছাপা শাড়িটা লম্বালম্বি ভাঁজ করে পেতে বসে জমিয়ে রুটি আলুরদম। এতক্ষণে এসে দম ফেললাম। আজ্ঞে হ্যাঁ। আলুরদমের কথাই বলছি।
রান্নার জিনঃ কাশ্মীর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী সাবেকী একটি পদ হল আলুরদম,যদিও কাঠকড়াই আগুন মশলায় তার সাজ যখন বাঙালির হেঁসেলে তখন সেই রূপে রঙে প্রেমিক তাকে কামড়ানোর আগেই চোখ দিয়ে গিলে নেয় পুরোপুরি।
রান্নার পেছনের গল্পঃ আজকে যে আলুরদমের কথা বলব সেটি মা লক্ষ্মী চক্রবর্তী-র নিজস্ব রেসিপি, আজ মা নেই। ভাগ্যিস শিখেছিলাম মা'র থেকে, এক্সপেরিমেন্টাল রান্নায় আজও তাঁকে পাই অভাবের মতো
পদ্ধতিঃ আলু।বড় সাইজের হলে চার টুকরো আর মাঝারি সাইজের হলে দুভাগ করে কেটে নুন জলে পনের মিনিট সময় ভিজিয়ে রেখে তারপর আদর মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে, এটুকু সবার জানা।
কিন্তু গ্রেভি?কিভাবে হবে? পেঁয়াজ রসুনের চেঁচামেচি নেই, সয়ারেড চিলগ্রিনচিলি সসের দাপাদাপি নেই। তাতে কি?
সবজির ঝুড়ি আছে তো ঘরে।সেখান থেকে তুলে নিন দুটো গাজর একটা টোম্যাটো সামান্য কড়াইশুঁটি(না থাকলেও চলে, স্বাদে ভেজাল হয় না তেমনভাবে ) দশ বারোটা কাঁচাপাকা লংকা। সবকিছু একসাথে ভাঁপিয়ে নিন পাঁচমিনিটের মতো। এরপর মিক্সিতে ব্লেন্ড করুন
এবার আসুন মশলাদানীতে।এক চামচ মৌরী চারটে তেজপাতা চারটে কাজুবাদাম এক চামচ চারমগজ সামান্য সাদাতিল আর সামান্য একটু আতপচাল। আপনি মিক্সিতে ব্লেন্ড করতেই পারেন,আমার অবশ্য দু'দিন অন্তর শিলনোড়ার শব্দটা না শুনলে অসুখ হয় 🙂
যাক আসল কথায় আসি।কড়াইয়ে তেল দিন, অবশ্য এবং অবশ্যই সরষের তেল।কয়েক দানা চিনি এক পিঞ্চ নুন লবঙ্গ দারচিনি এলাচ আর একটা শুকনো লংকা ফোড়ন দিন। এবার সমস্ত পেস্ট একত্রিত করে ঢলঢলাঢলঢল। ঢেলে দিন । এইসময় তাপ মাঝারি থাকবে।রান্নায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কিন্তু সবচেয়ে দরকারী বিষয় । কষিয়ে নিন। তবে বেশি না।যে কোনো দম রান্নায় হিসেব করে হিট না দিলেই ঘেঁটে ঘ হবার চান্স থাকে।কড়াইয়ের মুখের মাপের একটু ডিপ কানাউঁচু একটা থালা দিয়ে রান্না হতে দিন সিম আঁচে। কুড়ি মিনিট খানেক সময় লাগে আড়াই কেজি আলুর জন্য।
সত্তর শতাংশ রান্না হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে ওতে দিন একশো মিলিলিটার মাপের চায়ের লিকার এবং এক চামচ মধু। এটা কিন্তু মধু-ই দিতে হবে। নামানোর আগে অল্প ঘি।
ঢং ঢং ঢং ঢং...ঘন্টা বেজে গেছে।আজ আসি।চুপিচুপি বলে রাখি আমি কিন্তু এই দমের সাথে ঘরে তৈরি রুমালি রুটি দিয়ে পরিবেশন করি। লংকার পরোটা দিয়েও বেশ লাগে
খুঁটিনাটিঃ একবার মা চিকেন কষা রান্নার সময় ভুল করে স্টিলের গ্লাসে রাখা লিকার চা ঢেলে দিয়েছিল। ভয়ে গুটিসুটি হয়ে সেটাই পরিবেশন করল যখন তখন তো বাড়ির সবাই চিকেনের এ হেন রূপ রঙ দেখে অবাক।সেই থেকে মা অনেক রান্নায় চায়ের লিকার ইউস করেছে।এখন আমিও করি...
রান্নার রেসিপি যখন সাহিত্যিক লেখেন তখন এমনই বাহারি রূপ খোলে তার। স্বাদে গন্ধে দর্শনে জিভে জলতো আসবেই আর সেই সঙ্গে মগজের ও তৃপ্তি, আহা 'ফুর্তি' তোর কীইইই ফুর্তি 😋😋😋
উত্তরমুছুনরান্না পড়েই খেতে ইচ্ছে করছে, খেতে ইচ্ছে হলে আমাকেই করতে হবে, করেই নেবো ।।
উত্তরমুছুন