জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়
নীল রঙের নতুন গাড়িটা যাচ্ছে মহানন্দা অভয়ারণ্যের দিকে। মহানন্দা অভয়ারণ্যে যাওয়ার পথে আসে তিস্তা নদী। আর তারও আগে সবুজ ক্রমে ঘন হয়। দেখা যায় দূরে... পেছনে ফেলে আসা চা বাগানের ঝলক, লুকোচুরি। নীল গাড়ি... ব্যাকসিটে পরিবার আর পিকনিক বাস্কেট।
চা-বাগানের সাহেব পরিবারের মেমরা এমনই পিকনিক বাস্কেট নিয়ে যেতো কমলা-বাগানে... সঙ্গে বিলিতী কুকুর, আকাশে নতুন শীতের মিঠে রোদ। তাদের দূর থেকে দেখত মজদুরদের বাচ্চারা। মাঝে মাঝে মেমরা খুশি থাকলে বিস্কুট দিতো, কুকিজ। একজনকে দিলে অনেক বাচ্চা চলে আসার ভয় ছিল। বেশি ভিড় হলে, বন্দুক তুলে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করত সাহেব। তারপর আবার সুগন্ধী কমলা বাগান... সুন্দরী মেমদের হাসি... আর সোনাঝুরি পিকনিকের দুপুর।
আজও এক পিকনিকের দুপুর, নদীর ওপারে অপেক্ষা করছে। আর ব্যাক সিটে ফুটফুটে হাসি। আরও আগে পৌঁছলে নদীর বুকে সকালের রোদ চিকচিকের ছবি ধরা পড়ত কিছু। এখন রইল শুধু দুপুর আর বিকেল। পথে একটা জায়গায় জমায়েতের জন্য আধ ঘন্টা লস্ হয়ে গেল। কোনও এক চা বাগানের শ্রমিকের অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদ... কোটরে ঢোকা চোখেদের বিক্ষোভ। এসব এদিকে মাঝে মাঝে হয়। আসলে ‘এখানে এমন কিছুই হয় না’... ‘তেমন কিছুই হয় না’... লোকে ‘না জেনে’ কথা বলে। ব্ল্যাঙ্ক ফায়ারের শব্দ কি আর আসে আগের মত? মজদুরদের বাচ্চারা এখনও ভিড় করে... নতুন গাড়ি দেখে। মাঝে মাঝে কিছু পাহাড়ি কুকুরও সমতলে নেমে আসে... ঠিক বিলিতী কু্কুরের মতই দেখতে, অথচ মজদুরদের হাড়গিলে বাচ্চাগুলোর সঙ্গে কী ভাব!
নীল গাড়ি ধূলো উড়িয়ে সবুজের মাঝে ছোট হ'তে থাকে। সেই গাড়ীর ভেতরেই সুগন্ধী কমলা-বাগান... সুন্দরী মেমদের হাসি... আর সোনাঝুরি পিকনিকের দুপুর।
ছবি : গুগুল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন