রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সুনৃতা মাইতি



ভয়
সুনৃতা মাইতি


     
ঘরের ভেতর আবছা অন্ধকার বন্ধ দরজার ফাঁক গলে কয়েক ফালি টুকরো ক্ষীণ আলোর রেখা কেমন ভাবে যেন ঢুকে পড়েছে সুকৌশলে পুরোনো আমলের জানলা দরজা যে! সেই  আলোরেখায় ধূলিকণারা ঘুরছে অবিরল, পাক খেয়ে নেচে নেচে সেগুনকাঠের বনেদী পুরোনো খাটের ওপর বসে থাকা মহিলাটি চোখ ঢাকেন কাপাঁ হাতে যেন দূরে সরানোর চেষ্টা করেন সেই আলোটুকুও ভীত সন্ত্রস্ত মুখে কি যেন বলতে চান কিন্তু বলে উঠতে পারেন না দরজার অপর প্রান্তে বহুপুরোনো এক আরামকেদারায় বসে আছেন এক পুরুষ তিনিও ভয়ে কাঁপছেন মৃদু মৃদু অনিবার্য কোন ভয়াবহ ঘটনার প্রতিক্ষায় 



কারা যেন আসছে এক বিষাদিত নির্বান্ধব শীতলতা  বয়ে যায় তার সর্বাঙ্গে অসহ্য লাগে! বহুদিন এই বদ্ধতা ছেড়ে বেরোতে পারেননি , দু চোখে মেলাতে পারেননি রঙের খেলা ! ওই যে আপাত বন্ধ দরজা , তার আড়ালে ফিক ফিকিয়ে হাসছে আলোকিত ঝুলবারান্দা  জানে তো সবাই অদূরে শীতচড়া জেগে ওঠা ক্ষীণাঙ্গী তিস্তা উপরে প্রহরে প্রহরে রঙ বদলানো যৌবনগরবী আকাশ কতদিন সেসব দেখা হয়নি!! স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে কয়েকটা অস্পষ্ট  ছবির ছেঁড়া ছেঁড়া কোলাজ তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন ভীত মহিলাটিও দুচোখ থেকে হাত সরান না এক মুহূর্তের জন্যও 


 
নিস্তব্ধতা ভেঙে  অচানক কোনও এক খুপরি থেকে ভেসে আসে পায়রার পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ , শিরশিরে শীতের হাওয়া বেপরোয়া ধাক্কা মারে উত্তুরে জানলায়, কোথায় যেন সাইরেন বেজে ওঠে একটানা কয়েক মিনিট



কারা যেন আসছে সন্ত্রস্ত দুই ছায়ামুর্তি পরস্পরকে দেখেন আতঙ্কিত মুখে !  তবুও তারা পরস্পরের হাত ধরতে পারেনা সব ভুলে গিয়ে আশেপাশে গুমরে ওঠে  অস্তিত্ববিহীন শব্দেরা বাগানে অযত্নে বেড়ে ওঠা  গাছগুলো পাতা ঝরিয়ে ফেলেছে  এন্তার সেই শুকনো পাতার স্তূপ মাড়িয়ে কারা যেন আসছে!!! ক্রমশ এগিয়ে আসছে সেই পদশব্দ! এলোমেলো সিড়িঁ বেয়ে , বারান্দা ছুঁয়ে তারা কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে কলকল হাসির তরঙ্গ ওঠে, ছলছল জীবন হিল্লোল বয়ে যায় অনায়াস,  কৌতুহলী দুই মানব মানবী হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে বন্ধ দরজার সামনে, এক আজব দেওয়ালের দোরগোড়ায় অপর প্রান্তে প্রেত   প্রেতিনী জড়োসড়ো  হয়ে  যায় থেমে যাওয়া সময়কে আকঁড়ে ধরে .... ভয়ে শিহরিত  হয় তাদের অশরীরী অস্তিত্ব

ছবি : গুগুল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন