রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

নিলয় নন্দী

                                                           


আজকের কবি নিলয় নন্দী জন্ম কলকাতা ৷বাস কল্যাণী। প্রাণীবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। কবিতা লেখার শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকেই। বর্তমানে বিখ্যাত অবিখ্যাত বহু পত্রিকা  লিটলম্যাগ, ব্লগজিনে নিয়মিত লেখেন। কবিতার আলো 'কবিসম্মান ২০২০' পুরস্কারে ভূষিত। কাব্যগ্রন্থ : বাসন্তিকা বাসস্টপ। 'বাতিঘর অনলাইন' ওয়েবজিনের সম্পাদক


সুপ্রভাত
-------------
দীর্ঘদিন সুপ্রভাত জানানো হয়নি

আসলে আজও ঘুম ভাঙেনি আমার। এদিক ওদিক করছি। পাশ ফিরছি। চিৎ হচ্ছি। সরিয়ে নিচ্ছি মাথার বালিশ। দুপায়ের ফাঁকে গোপন তারুণ্যে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছি তুলোর শরীর। রক্তমাংস নাকে ঘাম কপালে কাঁচটিপ আষ্ঠেপৃষ্ঠে, ভাবছো, কী বেহায়া লোক! সারা গায়ে তুলো ভোরের রোদ্দুর যামিনী নিরুপায়। নিরুপায় তুমিও তো বন্ধ শার্সি ঠুকঠুক ঠুকঠুক।  কলিংবেল বাজাতে শেখেনি সে। তাইতো এমন নিশ্চিন্তে থাকো। ঠুংঠাং কাপডিশে মেশাও অতিরিক্ত চিনি। আমিও তখন জোঁকমুখে নুন ছটফট ছটফট।
নিঃশ্বাসে মিশে যায় ভোরাই ভীমসেন। আহির ভৈরবে কাক ডাকে। তুমি কি ম্যাজিকে বিশ্বাস করো? 
 

সেনোরিটা
----------------
সেনোরিটা যেন কোনো স্প্যানিশ গাছের নাম। গাছের ডালে ডালে ওয়েবজিন। সূচীপত্রে প্রেমটেম বিরহটিরহ। অরণ্যে  পিয়ানো বেজে উঠলে আমি প্রার্থনা থেকে দূরে সরে আসি। জানালায় সমুদ্র এসে দেখা করে যায়। নীলজল হাবুডুবু বৃক্ষলতা কাম। উঁকিঝুঁকি ডিম্বথলি। এখন পরাগসময় নাকি মৃত্যু জবুথুবু, ভেবে পাইনা। হেঁকে যায় পোষ্টম্যান। কাঁচপোকা উড়ে গেলে কাঁটাতারে লেগে থাকে চিঠি। নীলখাম নীলকাম পিঠোপিঠি শুয়ে থাকে। পথভ্রষ্ট কবি খুঁজে পায় ধুলোর পাহাড়, ছেড়ে যায় ছাই। সারারাত ভারী ট্রাক বুটের দুরমুশ। অভিযোগে অভিযোগে নোংরা হয়ে থাকে বীজতলা। স্বভাবত, নদীও মৌন। কী যেন নেই শুধু ঝরাপাতা বুনোফুল নীলকণ্ঠ পাখি!

তবু তুমি এলে তোমাকেই সেনোরিটা বলে ডাকি। 


লাটাই
----------
এই যে মুখ গুঁজে বসে আছি শোকসভায়
এই যে চুমুক দিচ্ছি বিষাদের লেবুজলে
এই যে থরহরি ঠোঁটের বীর্যপাত
তোলপাড় তোলপাড়

যতদিন শ্বাসবায়ু ততদিন চিলেকোঠা ঘর 
মাল্টিডাইমেনশনাল স্তোকবাক্য বা 
সমস্ত রসাতলে যায় যাক 

এসো, নিভে যাওয়ার আগে শেষবার
লাটাইয়ের সুতো খুলে দিই... 


বৈবাহিক
-------------
এইমাত্র পাশ ফিরে শুলো সে... 
সন্ধি সাংসারিক। ওঠানামা ঢেউ। প্রহর নিরুদ্দেশ।
আমি পাশবালিশ হতে চেয়েছিলাম
প্রেমিক চাদর বা ভেজা জলপটি বড় অসময়ে
স্থিরতা ভাঙচুর। কাল্পনিক প্যারাসিটামল আর
নয় নয় করে বয়স তো কম হলো না...

জরিপ করি বিউটি স্পট
দামাল ইচ্ছে গোপনে চালান করি নিভৃতে 
যেন শব্দহীন সাঁতার, দুপুর গড়িয়ে যায় ঢালে
জানালায় ঠোঁটঠোকরা ডেকে যায় 'ওঠ ছেমড়ি'
নিমন্ত্রণ পত্র আসে, যদিদং হৃদয়ং...

এখন চৈত্রমাস
শরীর নির্মেদ, কামনা বাহুল্যবর্জিত


ভেড়া
-----------
বুকের পশমে মুখ ডুবিয়ে যেদিন আমায় ভেড়া বলেছিলে
নরম মেরুদন্ডে থুতু ছিটিয়ে যেদিন আমায় ভেড়া বলেছিলে
সৌজন্যকে দুর্বলতা ভেবে যেদিন আমায় ভেড়া বলেছিলে 
চতুষ্পদী ইচ্ছেতে চুমু খেয়ে যেদিন আমায় ভেড়া বলেছিলে

আমার আরো ভেড়া আছে সেসব এ পাহাড়ে নয়...



 নিলয় নন্দী। জন্ম : কলকাতা, বাস : কল্যাণী। প্রাণীবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। কবিতা লেখার শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকেই। বর্তমানে বিখ্যাত অবিখ্যাত বহু পত্রিকা  লিটলম্যাগ, ব্লগজিনে নিয়মিত লেখেন। কবিতার আলো 'কবিসম্মান ২০২০' পুরস্কারে ভূষিত। কাব্যগ্রন্থ : বাসন্তিকা বাসস্টপ। 'বাতিঘর অনলাইন' ওয়েবজিনের সম্পাদক।

৭টি মন্তব্য:

  1. সব কটি কবিতাই ভালো তবে আমার বৈবাহিক বিশেষ ভাবে ভালো লাগলো

    উত্তরমুছুন
  2. গাছের ডালে ডালে ওয়েবজিন, ঠোঁটের বীর্যপাত, ঠোঁটঠোকরা কিসব দুরন্ত প্রয়োগ। খুব বায়োলজিক্যাল কবিতাগুলো। ভালো লাগা।

    উত্তরমুছুন
  3. প্রতিটি কবিতা নিবিড়, সৎ এবং স্বচ্ছ। শব্দের ব্যবহার অনবদ্য। মুগ্ধতা…

    উত্তরমুছুন
  4. প্রতিটি কবিতা নিবিড়, সৎ এবং স্বচ্ছ। শব্দের ব্যবহার অনবদ্য। মুগ্ধতা…

    উত্তরমুছুন