মুড সুইং/ সুগন্ধিবিষ / কোভিড।
জ্ঞানচক্ষু মেলে পরিচিত হয়েছি ধূপকাঠির সঙ্গে। বাড়িতে পুজো আর রাশি রাশি ধূপ কাঠি জ্বালানো হচ্ছে। প্রতিদিন। প্রতি সন্ধ্যা।
ধূপকাঠির সুগন্ধ মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। সুগন্ধি রঙিন মোম জ্বালিয়ে চোখ তৃপ্তি পায়। মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে পুজো মানেই ধূপের সুগন্ধি ছাড়া চলে না।
কেউ ই অবশ্য ঈশ্বরকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি কিভাবে ডাকলে আপনার ভালো লাগবে? আদৌ এই সব উপকরণ লাগবে কি না? নাহ্। করিনি। অন্ধের মত প্রথা মেনে চলেছি। স্বীকার করতে বাধা নেই, আমিও তাই করেছি। প্রচুর পুজো করি। প্রচুর কষ্ট করি। প্রচুর ধূপ জ্বালাই। মোমবাতি জ্বালাই। বিদেশের গির্জা , মসজিদ খুঁজে খুঁজে জ্বালিয়ে রেখে আসি ধূপ। আজ বুঝি , কত ক্ষতি করেছি নিজের এবং পরিবেশের। শুধু, একটি নমস্কারে পূর্ণ হয় না প্রার্থণা? হয় বইকি! যেটা হয়না, সেটা হল নিজের তৃপ্তি হয়না। ঈশ্বর ঠিক কি চান? সেটা কখনো জিজ্ঞেস করিনি!
*******
কেউ সিগারেট খেলে কত বকুনি দিতে থাকি, কিন্তু ধূপের ধোঁয়া তার চেয়েও ক্ষতিকর বেশি। এখানে থাকে কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য যা, জিনের( D NA) উপাদানে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে, পুজোর সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় আমরা উদাসীন থাকি ক্ষতিকর দিক থেকে। কেউ সিগারেট খেলে খুব বিরক্ত হই, কিন্তু ধূপকাঠি?
মন ভালো করে। বাড়িতে একটা পজিটিভ চিন্তা আনে।
ধূপের স্নিগ্ধ গন্ধের সঙ্গে মুড ভালো করার ইচ্ছে কাজ করে। পবিত্রতা আর প্রশান্তি জড়িয়ে আছে ধূপের সঙ্গে।
কথাগুলি সত্য। কিন্তু,
শ্বাসের সঙ্গে ওই ক্ষতিকর পদার্থ গ্রহণ করেছি। ফুসফুসে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। ধোঁয়ার মধ্যে আছে এমন টক্সিক পদার্থ ,যা ডেকে আনে ক্যান্সার। শ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় এখান থেকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, তিন ধরণের বিষ থাকে ধূপ কাঠির মধ্যে
মিউটাজেনিক , জিনোটক্সিক সাইটোটক্সিক... যেগুলো প্রতিদিন ক্ষতি করছে আমাদের।
****
এই প্রসঙ্গে বলি, পুরোহিতের কথা।
দিনের পর দিন ধূপের ধোঁয়া সৃষ্টি করছে সিওপিডি ( ক্রনিক অব স্ট্রাকটিভ পালমোনারিডিজিজ)
সি ও পি ডি- কে বুঝতে হলে, আমাদের জানতে হবে, ফুসফুস কিভাবে কাজ করে। নিশ্বাস নিলে বাতাস আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে ছোট ছোট নালী ব্রঙ্কিওলস এ যায়। এই নলগুলোর শেষে আবার নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলি a l v e o l i থাকে। এই থলিগুলি থেকেই আমাদের রক্ত প্রযোজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ করে। সি ও পি ডি র ফলে এই থলি গুলিতে কম বাতাস যায়।
****
নানা কারণ থাকতে পারে ফুসফুস জখম হ ওয়া র, ধূপকাঠি জ্বালানো তার মধ্যে একটি।
ধূপের বক্স এ সিগারেটের মত সতর্কীকরণ থাকা ভালো। কারণ, ঘুপচি মন্দিরে ধূপকাঠির ধোঁয়া 500 সিগারেট খাওয়ার সমান।
এখন, পরিবারের সকলে বাড়িতে আছে। একসঙ্গে। সুতরাং, ধূপকাঠি আরো মারাত্মক।
এখন বরং, একটি নমস্কারে কাজ চলুক। উপোস বন্ধ থাকুক। কর্পূর জ্বালানো যেতে পারে। সবই কম কম। ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন কিছু না জ্বালানো ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন