রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                                          




 শূণ্য এবং আমি

*******

 



   কোভিড সময় সৃষ্টি হচ্ছে শূণ্যতা। Emptiness। জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে এই ভাব কমানোর চেষ্টা না করাই ভালো। এই বোধ বাস্তব পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট। 

The experience could have many causes, including shifting hormonal levels, losing a job, or the required physical distancing that comes with a pandemic. 


    কিচ্ছু ভালো লাগছে না। 

 এখন এই কথা খুব স্বাভাবিক। পরিস্থিতি খুব জটিল। চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু, আর কিছু করতে না পারার কারণে এমন শূণ্যতার বোধ গ্রাস করে। সেইসঙ্গে যেটা মারাত্মক ভাবে হয়, সেটা হল নিজের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ ক্ষুন্ন হয়।

 এই আমি নই আমি। আমি এমন ছিলাম না। এমন আনস্মার্ট এমন ভীতু ... ছিলাম না। এখন পাল্টে গেছি বদলে গেছি। পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। এমন কিছু নেই যা উৎসাহিত করতে পারে। 

 **

  ভালোথাকা আমাদের হাতে আর নেই। কিন্তু যতক্ষণ নিরাপদ আছি ততক্ষন চেষ্টা করে যেতে হবে। 

১. খুব ছোট্ট করে হলেও একটু এক্সারসাইজ। 

২. কথা বলা ভালো। কিন্তু সারাদিন নেগেটিভ কথা নয়। 

 এইসময় প্রবলভাবে আক্রান্ত হতে হবে নেগেটিভ চিন্তা দিয়ে। আর সেটা খুব স্বাভাবিক। তাহলে কি করব? 

 ওই নেগেটিভ কথা ঘুরিয়ে চেষ্টা করতে হবে কি করলে ভালো থাকা যায়, সে আলোচনা করা। লোক ভালোও হয়ে উঠছে... তাদের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। সেই পজিটিভ দিকগুলো উঠে আসুক আলোচনায়। কোভিড প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে সত্য, কিন্তু বেঁচে থাকতে হবে এটাও সত্য। অন্ধকার গ্রাস করে ফেললে কিন্তু, বেঁচে থেকেও মৃতই থাকব। 

*

     প্রিয়জন হারিয়ে ফেলা, চাকরি নেই। শরীরে ফ্যাট জন্মে যাচ্ছে। ঝগড়া হচ্ছে। 

বাচ্চা বিদেশে কিন্তু যাওয়া যাচ্ছে না। 

হাজার কারণ আছে। 

কি মনে হয় এইসময়? কি হবে বেঁচে থেকে? কি লাভ? কার কাছে মূল্য আছে আমার? কেউ নেই। কেউ নেই। 

  It is not darkness 😭 in my heart ❤️, just emptiness waiting for the sun. 

 আদিগন্ত বিপুল শুণ্যতা নিয়ে বাস করে মানুষ। 

****

 

  মনে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন মনে রাখতে হবে, আমি নামক এই ব্যক্তি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। পৃথিবীর রাজাও চলে গেলে কিছুই আসে যায় না। চলে যাওয়াটা এমন সত্য যে, মানুষ দুদিন পরেই নিজের কাজ করতে বাধ্য হয়। একদম কাছের মানুষ চলে গেলেও বাজারে যেতে হয়। রান্না করতে হয়। সমস্ত যখন করতেই হবে , বেঁচে যখন থাকতেই হবে তখন বিষাদ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে দেখতে কি দোষ? যেমন জল খেতে হবে , বাথরুম যেতে হবে তেমনি বেরিয়ে আসতে হবে নেই বোধ থেকে। কে নেই? কি নেই? প্রাণ যতক্ষণ আছে ততক্ষণ সৃষ্টি আছে। শূণ্যবোধ ক্লান্ত করে তুলবে। জীবন সম্পর্কে নিরুৎসাহ করে তুলবে। নিজের জন্য না হোক, সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য নিজেকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। 

দূরে থাকা বাচ্চাদের কাছে কান্নাকাটি করে লাভ নেই। বরং ভিডিওতে হাসি মুখ থাক। ❤️❤️❤️❤️❤️

 শরীর লড়াই করতে পারবে কি না, সেটা অনেকটা নির্ভর করে মনের উপর। আর একটা কথা, প্রার্থনার শক্তি নিয়ে সন্দেহ না রাখাই ভালো। প্রতিদিন প্রার্থনা করুন। নিজের জন্য এবং অপরের জন্য। নিঃস্বার্থ হয়ে ছোট্ট সেবা করলেও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। শুধু কোভিড সময়ে নয়, সংসারের ক্ষেত্রেও এমন মনোভাব নিজের জন্য ভালো। তার মানে এই নয় যে , মুখ বুজে জুতো লাঠি খেতে হবে। তবে, প্রতিবাদ আর অপমান এক নয়। প্রার্থনা অপরের জন্য করলে নিজের ভিতর আনন্দ তৈরি হয়, যা আমাদের ভিতর এনার্জি তৈরি করে। কিন্তু, অন্যকে অপমান করলে সাময়িক তৃপ্তি পেলেও পরে ক্লান্ত বোধ হয়। শুনতে কেতাবী মনে হলেও, মিথ্যা না বলা, অন্যকে ছোট না করা ইত্যাদি কাজ দিনের শেষে আনন্দ দেয়। যেটা খুব জরুরি। 

****

 " যতটুকু দেখো, ততটুকু আছি ভালো

কে দেখে বুকের ভিতর, কতটা অগোছালো।"

   _ সাদাত হোসাইন। 

*****

 মনে করা যাক ,  একটা গভীর খাদ উপরে একটা ঝুলন্ত সেতু। দড়ি ধরে পার হতে গেলে অনেক সমস্যা। কিন্তু পার হতেই হবে। 

এখন গভীর খাদের উপর ঝুলন্ত সেতুর দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কি করব? পারব? ওইপারে যেতে? জীবনের কাছে পৌঁছতে?

আমরা কেউ দুর্বল নই, কেবল ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। জীবনের নানান দিকের অত্যাচার ক্লান্ত করে তুলছে। এবার ফিরে আসতে হবে। শক্ত পায়ে পার হয়ে যেতে হবে অতল খাদের অন্ধকার। কারণ, দিনের শেষে আমার সঙ্গে থাকব কেবল মাত্র আমি। তাকে সুখী রাখাই আমার কর্তব্য। ❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন