রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

কাজল সেন

                                                   



হে মোর মরণ 
বিয়ের পরেই বর মানে উদ্ভাসের সঙ্গে নেদারল্যান্ড চলে গেছিল শ্যামলিমা। উদ্ভাস এখন নেদারল্যান্ডেই পাকাপাকিভাবে থাকে এবং সেখানেই একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। তাদের বিয়েটা হয়েছিল রীতিমতো সম্বন্ধ করে। শ্যামলিমার মা-বাবাই পাত্র ঠিক করেছিলেন। শ্যামলিমার কোনো অভিমত বা আপত্তি গ্রাহ্য করা হয়নি।
বিয়ের ঠিক একবছর পরে শ্যামলিমা এলো মা-বাবার কাছে। উদ্ভাসেরও আসার কথা ছিল, কিন্তু জরুরি কাজের জন্য আসতে পারেনি। শ্যামলিমার আসার খবরটা যথাসময়েই পেয়েছিল শতদ্রু। সে গত একবছর শ্যামলিমার আসার অপেক্ষাতেই ছিল। ইতিমধ্যে তাকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে রাখতে হয়েছে। দুটো শক্তপোক্ত দড়ি যোগাড় করতে হয়েছে। এতটাই শক্তপোক্ত যে দুজনে নিজের নিজের গলায় এক একটা দড়ি ফাঁস লাগিয়ে সিলিং থেকে ঝুলে পড়লে যেন ছিঁড়ে না যায়। দুজনে একইসঙ্গে সেক্ষেত্রে মরে যেতে পারবে। যদি এভাবে মরতে আপত্তি থাকে শ্যামলিমার, তাহলে অবশ্য অন্য কোনো উপায় বেছে নিতে হবে, আর তাই শতদ্রু একটা খুব ভালো ব্র্যান্ডের ভোজালিও কিনে রেখেছে। ভোজালিতে অবশ্য একইসঙ্গে মরা সম্ভব নয়। একজন অপরজনকে খুন করে তারপর নিজে আত্মঘাতী হতে পারবে। আবার এই দুটো পদ্ধতিই যদি শ্যামলিমার পছন্দ না হয়, তাহলে শতদ্রুর সমস্যা বাড়বে। একটা রিভালবারের কথা ভেবেছিল শতদ্রু। কিন্তু এখনও কেনা হয়ে ওঠেনি। কেনার আগে শ্যামলিমাকে একবার জিজ্ঞেস করে নেওয়া দরকার। তবে বিষ খেয়ে মরতে যে শ্যামলিমা রাজী নয়, তা আগেই জানিয়ে রেখেছে। শতদ্রু একটা প্রস্তাব রেখেছিল, মরার জন্য এত ঝামেলা করে কী লাভ? তার থেকে দুজনে একসঙ্গে হাওড়াব্রিজ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেই তো হয়! শ্যামলিমা শতদ্রুকে বুঝিয়েছিল, তাতে রিস্ক আছে, একজন হয়তো ডুবে মরে গেল, কিন্তু অপরজন তো ভেসে বেঁচে যেতেও পারে!
এসব আলোচনা অবশ্য হয়েছিল শ্যামলিমার বিয়ের কিছুদিন আগে। শ্যামলিমা তার মা-বাবাকে বারবার বোঝাতে চেয়েছিল যে, সে শতদ্রুকে ভালোবাসে, শতদ্রুকেই বিয়ে করতে চায়। কে শতদ্রু? কী করে? কোথায় থাকে? মা-বাবা খোঁজ নিয়েছিলেন শতদ্রুর। পছন্দ হয়নি। নেহাৎই একটা সাদামাটা ছেলে।  টেনেটুনে বি কম পাশ করেছে। একটা শপিংমলে চাকরি করে। উপার্জন খুবই সামান্য। বংশেরও তেমন কোনো মর্যাদা নেই। অন্যদিকে শ্যামলিমা ফিলজফিতে এম এ পাশ। সুন্দরী। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। তাছাড়া যে পাত্রের সঙ্গে বিয়ের ঠিক করেছেন, সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ, বিদেশি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করে, প্রচুর উপার্জন। সুতরাং শতদ্রুর সঙ্গে শ্যামলিমার বিয়ে তাঁরা দিতে পারেন না, দেনওনি। বিয়ের পরে পরেই শ্যামলিমা উড়ে গেছিল নেদারল্যান্ড। 
নেদারল্যান্ড থেকেও শ্যামলিমা যোগাযোগ রেখেছিল শতদ্রুর সঙ্গে। শতদ্রুও ফোন করত শ্যামলিমাকে। শতদ্রু শ্যামলিমাকে জানিয়েছিল, শ্যামলিমা ফিরে এলেই তারা একদিন বসে ঠিক করবে, কবে তারা একইসঙ্গে আত্মহত্যা করবে এবং কীভাবে করবে। শ্যামলিমা অবশ্য শতদ্রুকে বলত, এত তাড়াতাড়ি মরে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে মন্দ হয় না। তারপর না হয় মরবে। একসঙ্গেই মরবে। শতদ্রু অবশ্য শ্যামলিমার এই প্রস্তাবে এখনও রাজী হয়নি। দেখা হলে কথা হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন