রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                                    




অতীত, একটু কম কথা বলো।



        মুডসুইং নিয়ে কথা বলছিলাম। মুড অথবা আবেগের ওঠা পড়া অনেকটা নির্ভর করে অতীত চারণার মধ্যে। অতীতের সুখময় দিন অথবা দুঃখের স্মৃতি মানুষকে নিঃস্ব করে তোলে। কত সুখে ছিলাম অথবা কত দুঃখে ছিলাম... এই বোধ থেকে আসে হতাশা। মন খারাপ। কিটকিট। ভালো না লাগার প্রকোপ বাড়তে থাকে। 

 আজকের আলোচনার বিষয় 

  অতীত। 

     ❤️অতীত নিয়ে আমার বাবা খুব  সতর্ক ছিলেন। মানসিক ভোগান্তির একটা মূল কারণ পিছন ফিরে দেখা সে বিষয়ে বারবার বলতেন। তখন আমার দশ / এগার বছর বয়স। বাবা একদিন নিয়ে গেলেন বাগানে। মাটিতে দুটো  গর্ত খুঁড়ে , একটিতে রাখলেন  ছোলাবীজ অপরটিতে তরকারির খোসা ডিমের খোলা ইত্যাদি। দিনচারেক পরে বললেন: চল, অতীতের ফলাফল দেখে আসি। যে গর্তে বীজ ছিল, তার উপরে ছোট ছোট সবুজ পাতা আর যেখানে আবর্জনা ছিল সেখানে দুর্গন্ধ। অমূল্য একটা শিক্ষা। অতীত থাকবে। কিন্তু, দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে এমন কিছু পরিহার করাই ভালো। আজকে বহুমানুষ অতীতের করাল থাবার শিকার। অদ্ভুত ভাবে, মানুষ সুন্দরের চাইতে মনে রাখে খারাপ স্মৃতিগুলি।   যার ফলে মন খারাপ হয়। বরং, খারাপ স্মৃতি গুলি থেকে কিছু শিখে নেওয়া ভালো। সৃষ্টির সবুজ পাতা দুলবে। মেঘলা দুপুরে অতীত নিয়ে ভেবে কষ্ট না পেয়ে একটা বর্তমানের গান শুনে নিও। 

🔥🔥🔥বাবার শিক্ষা কতভাবে জীবনে কাজে লেগেছে, বলার মত না। মহিলা পুরুষ উভয়ের বিবাহের আগে এবং পরের জীবন সম্পূর্ন আলাদা। একেবারে অন্যরকম। সবদিক দিয়ে। নানা রকম ঝামেলা দায় দায়িত্ব ঘিরে ধরে চারিদিক থেকে। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো ভয়ানক হয়েছিল বিদেশ চলে যাওয়ায়। এমন কিছু মানুষের সঙ্গে থাকতেই হত, যারা ভারতীয় কিন্তু বাঙালী বিদ্বেষী। আমি ছিলাম একমাত্র বঙ্গললনা। এ যেন ক্ষুধার্ত নেকড়ের সামনে সুস্বাদু খরগোশ। তাদের টাইম পাস ছিলাম আমি। এমন ব্যবস্থা তারা করেছিল, যাতে আমি ব্যাংকক ছেড়ে যেতে বাধ্য হই। বিজনবাবু সারাক্ষণ ট্রাভেল করছেন। সেইসুযোগে  দিনরাত্রি অপমান। বাচ্চাগুলোকে নানা ভাবে উৎপীড়ন। সেই সময় মনের কানে ভেসে এলো বাবার উপদেশ: রাস্তার নোংরা ঘরে আনবি না। রাস্তার ধাক্কা ওখানেই ফেলে রেখে, ঘরে বসে আরাম কর। তুই পরম সুখী। রোজ নিজেকে ভালোবেসে যা। 

ছোট্ট কথা। বাইরের পরিস্থিতি যেন কোনো ভাবেই মনের স্থিতি নষ্ট না করে। অদ্ভুত ম্যাজিক ঘটল এর পরে। যত অপমান করে ততো আমি উজ্জ্বল হই। বাচ্চারা দারুণ রেজাল্ট করে। আমার ঝকঝক চুল। চকচক ত্বক। স্বামী স্ত্রী বেড়াতে যাই। ওরা হার মেনে গেল। 

  বাবা বলতেন: আমার মৃত্যুতে শোক করবে না। চেষ্টা করবে যে কাজে আমি খুশি হই, তাই করতে। 

সে কাজ হল, নিজের মনকে লাঠি বানাও। অবলম্বন করো। বাইরের আঘাতের সাধ্য কি, তোমাকে কষ্ট দেবে? 

এটাও অতীত চারণা বইকি! কিন্তু , সৃষ্টির সবুজপাতা দুলে ওঠে এতে। 

   অচেতনমন অনেক বেশি শক্তিশালী। অনেক বেশি জমিয়ে রাখতে পারে। অবচেতন মনে কোনো আইডিয়া ঢুকে গেলে , তা আমাদের সচেতন চিন্তাকে প্রভাবিত করে। অতীত বহু সময় ভয় দেখায়। আত্ম বিশ্বাস নষ্ট করতে উদ্যত হয়। 

সেজন্যে , অতীত থাকুক। কিন্তু তাকে বহন করতে হবে না। বর্জন নয়। বহন নয়। অতীত হোক একটা ঘটনা মাত্র। ক্যালেন্ডারের পুরনো পাতার মত। দরকার না হলে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া যেতেই পারে। 

 জীবন হল নৌকা। মন হল মাঝি। বিপদ সঙ্কুল নদীতে জীবন নৌকা সুন্দর করে বাইতে পারে দক্ষ মাঝি। যতই ঝড় আসুক, তুফান আসুক নাও নিয়ে মাঝি লড়ে যাবে শেষ পযর্ন্ত। কিন্তু অনভিজ্ঞ মাঝি? সে পারবে তীরে পৌঁছতে? লক্ষ্য স্থানে পৌঁছে যেতে ? পারবে না। তখন দোষ দিতে থাকবে পারিপার্শ্বিক খারাপ আবহাওয়ার। মন মাঝি  নিজেই দুর্বল, তৈরি হয়ে হাল ধরতে হয়, সে কথা মনে থাকে না। 

  আজ বাবার কথা মনে করছি। তিনি যে দর্শনের কথা  বলতেন, এখন বুঝি, সেগুলি নতুন কিছু না। আমরা সবাই সব জানি। শুধু মেনে চলি না। 

ধনী কে? এক সুন্দর মনের অধিকারী হল প্রকৃত ধনী।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন