শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

 

                                                                 




এই সপ্তাহের কবি তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়।জন্ম– ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; হুগলি জেলার আরামবাগে। বর্তমানে তারকেশ্বরের স্থায়ী বাসিন্দা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ইংলিশ অনার্স নিয়ে পাঠরত। 'কবিতা আশ্রম', 'মাসিক কবিতাপত্র', 'রাঢ় বনতলি', 'তবুও প্রয়াস', 'বাক্'-সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও ওয়েবজিনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 




ট্রিওলেট
________

মাটির প্রতিমার দু-চোখে মৃন্ময়
আকাশ দেখে আমি ক্রমে নীরব হই।
অথচ দৃশ্য তো কথার ঋণ নয়।
মাটির প্রতিমার দু-চোখে মৃন্ময়
আকাশে আন্ধার। কোমল দিন নয়।
দিনের খোঁজ কেউ করল আর কই?
মাটির প্রতিমার দু-চোখে মৃন্ময়
আকাশ দেখে আমি ক্রমে নীরব হই।

কোথায় অন্ধের চক্ষু জাগরূক?
অঘোরী স্বপ্নের কোন সে কূট স্থল?
আমরা বিস্ময়ে জন্মাবধি মূক।
কোথায় অন্ধের চক্ষু জাগরূক?
কোথায় স্বপ্নের নিষ্কলুষ বুক
ছুঁচ্ছে নির্বাক চোখের ম্লান জল?
কোথায় অন্ধের চক্ষু জাগরূক?
অঘোরী স্বপ্নের কোন সে কূট স্থল?

তারার বাম পায়ে আমার সন্ধান
ফুরিয়ে গেল আজ। এসব জানে কেউ?
মাতৃমুখ যেন মাঠের পীত ধান!
তারার বাম পায়ে আমার সন্ধান
জানবে উৎসাহে অলীক সন্তান?
সাধনস্রোতে ওঠে মন্দ্র কালো ঢেউ।
তারার বাম পায়ে আমার সন্ধান
ফুরিয়ে গেল আজ। এসব জানে কেউ?

এখন মুখ নয়, মুখের ওম খুঁজি।
কিন্তু সব মুখ ভীষণ ভঙ্গুর!
ক্রমশ উবে যায় সবার রুটি-রুজি।
এখন মুখ নয়, মুখের ওম খুঁজি।
এমন এষণার অর্থ কিছু বুঝি?
বুঝি না, শুধু চাই প্রীত নবাঙ্কুর।
এখন মুখ নয়, মুখের ওম খুঁজি।
কিন্তু সব মুখ ভীষণ ভঙ্গুর!

কে তুমি শত্রুর দুয়ারে ভিক্ষায়
দু-মুঠো চাল চাও, সঙ্গে বরাভয়?
তোমার দীক্ষায় আমার কাল যায়...
কে তুমি শত্রুর দুয়ারে ভিক্ষায়
দু-মুঠো কাল চাও? কাল জগৎ খায়।
তোমার পথ আজ আমার পথ হয়।
কে তুমি শত্রুর দুয়ারে ভিক্ষায়
দু-মুঠো চাল চাও, সঙ্গে বরাভয়?

স্থির ধ্যানের টানে জাগে পৃথুল সাপ।
অভিসারের কামে কাঁপে সহস্রার।
চক্র পার হল। কমছে সন্তাপ।
স্থির ধ্যানের টানে জাগে পৃথুল সাপ।
এ গতি জাগতিক? কেন এমন তাপ?
গূঢ় কুহক যেন জগৎ, সংসার!
স্থির ধ্যানের টানে জাগে পৃথুল সাপ।
অভিসারের কামে কাঁপে সহস্রার।

আমার হাড় দিয়ে দামামা ঠুকতেই
আকাশ কালো ক'রে কত শকুন ওড়ে
হাড়ের অন্দরে শব্দ ঢুকতেই!
আমার হাড় দিয়ে দামামা ঠুকতেই
বুঝেছি বাদ্যের কোনও অসুখ নেই।
কেবল স্তব্ধতা দূরে প্রবল পোড়ে...
আমার হাড় দিয়ে দামামা ঠুকতেই
আকাশ কালো ক'রে কত শকুন ওড়ে!

আবার স্বপ্নের ভিতরে যাই, আর
খুঁজছি একা একা পিতার শৈশব।
শীতল কিশলয়! হাসিটি মুক্তার।
আবার স্বপ্নের ভিতরে যাই, আর
দেখছি শিশু নেই! পিতার সৎকার!
মুহূর্তেই ছাই সবুজ বৈভব।
আবার স্বপ্নের ভিতরে যাই, আর
খুঁজছি একা একা পিতার শৈশব।

স্মৃতি তামস হ্রদ। এখন স্রোত কম।
অযুত মুখ নীচে মাছের চরাচর।
রক্ত ঝরে খুব। রক্ত ঝমঝম।
স্মৃতি তামস হ্রদ। এখন স্রোত কম।
আদপে হ্রদ? নাকি জলের রতি, ভ্রম?
ভাসছে, ভেসে যায় নাছোড় জরা, জ্বর...
স্মৃতি তামস হ্রদ। এখন স্রোত কম।
অযুত মুখ নীচে মাছের চরাচর।

১০
অন্তে মৃত্তিকা। অন্তে প্রতিমার
মাটির চোখে ফের আকাশ খুঁজে পাই।
ক্রমশ আয়ু কমে আমার দ্রাঘিমার।
অন্তে মৃত্তিকা। অন্তে প্রতিমার
মাংস, মেদ জ্বলে। আমার ত্রিসীমার
মধ্যে স্থিত জলে একা তলিয়ে যাই।
অন্তে মৃত্তিকা। অন্তে প্রতিমার
মাটির চোখে ফের আকাশ খুঁজে পাই।




৫টি মন্তব্য:

  1. স্তব্ধতা একরাশ।কী সব লেখা !!

    উত্তরমুছুন
  2. কোন পংক্তির সঙ্গে কোন পংক্তির মিল , পুনরাবৃত্তি বা স্তবকের পংক্তি-সংখ্যা খুব ভালভাবেই সম্পন্ন করেছ। ইংরেজি তোমার পাঠ্য বিষয়। তাই এই কবিতার কাঠামো সম্পর্কে তোমার ধারণা স্বচ্ছ। ট্রিওলেট নামকরণের ফলে পাঠকদের কবিতাটা পড়ে বুঝে নিতে হয় , কবিতার বিষয়টা কী ? কারণ কবি সেখানে ট্রিওলেটকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। হুমায়ূন (দীর্ঘ-উ হবে তো?) কবীরের সনেট পড়ে আমার প্রথমে এমনটাই মনে হয়েছিল। আমি একসময় ভিলানেল নিয়ে ভেবেছিলাম। তবে শুধু ভিলানেল এই নামকরণ ছিল না। প্রেমের কবিতা বোঝানোর জন্য তার আগে একটি রাতের কথাটি যোগ করেছিলাম। তোমার এই কবিতায় আন্ধার বা ছুঁচ্ছে এই জাতীয় শব্দ দুটির ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চয় তুমি মনে মনে খুশি নও। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি , ট্রিওলেটকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই বাধ্য হয়ে এমন কথা লিখেছ। তবে বিকল্প শব্দ বা পদের জন্য সমার্থক শব্দকোষ (অশোক মুখোপাধ্যায়) যথেষ্ট। হয়তো তোমার কাছে আছে। অঘোরী স্বপ্ন , সাধনস্রোত, সহস্রার ,বরাভয় প্রভৃতি তন্ত্রশাস্ত্রের পরিভাষা বলা যেতে পারে। মনে পড়ে , মোহিতলাল মজুমদারের অঘোরপন্থী কিংবা রামপ্রসাদ সেনের পদাবলী ( ~ সহস্রার)র কথা। এসবের অনুষঙ্গে যে চিত্রকল্প --পাঠককে অন্য জগতে নিয়ে যায় ।
    চরৈবেতি ...।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনি যা যা বললেন, তা সর্বাংশে সত্য। 'আন্ধার'-এর ব্যবহার নিয়ে আপনার মত সম্পূর্ণ ঠিক। এই লেখাগুলিতে ফর্ম প্রাধান্য পেয়েছে, যা না হলেই হয়তো ভাল হত। তবু কিছু প্রয়াস আমাদের আরও সচেতন করে, চর্চার আরও কিছু পথ খুলে দেয়। তন্ত্র আমার অতি প্রিয় বিষয়। সে-কারণেই তন্ত্রের অনুষঙ্গ লেখায় ফিরে ফিরে আসে।

      আপনার সুচিন্তিত মতামত আমায় লেখাগুলির দিকে আবার ফিরতে সাহায্য করবে। কৃতজ্ঞ রইলাম।

      মুছুন