শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

বনবীথি পাত্র

দেখা

.
রোজকার মতো সান্ধ্যভ্রমণের ফাঁকে দেশপ্রিয় পার্কের নির্দিষ্ট বেঞ্চটার দিকে এগোতেই থমকে যায় ষাটোর্ধ কলি, কথাকলি মুখার্জ্জী!
ওর জায়গাটায় কে যেন বসে আছে! খুব যেন চেনা চেনা লাগছে!!
সেই ২০১৫-র এক সন্ধ্যায় 'ফেসবুক'-এ পরিচয়! কিন্তু পার্থকে, মানে পার্থসারথী চৌধুরীকে তো কোনদিন দেখেইনি কলি! তবু মনে আছে....
ধুসসস্!! টিন্ এজারদের মতো কি সব ভাবনা?!
চশমার কাঁচটা কলি মুছে নেয় একবার।
ভাষার ব্যবহার/বাচনভঙ্গীমা যেমন ছিল, তাতে 'সি-আই-ডি' গিন্নী কলির মন বলছে-
ওটা পার্থই.........
অবশ্য কলির মন সেদিনও বলেছিল , পার্থ আসবে ।
স্বামী-সন্তানের ব্যস্ত জীবনে একাকীত্ব থেকে পালিয়ে বাঁচতেই ফেসবুকে নাম লিখিয়েছিল কলি । অচেনার মাঝেই আর পাঁচজনের মতো আলাপ হয়েছিল পার্থর সাথে । পার্থ , সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বাংলার অধ্যাপক , নিঃসন্তান , বিপত্নীক । আলাপ থেকে বন্ধুত্ব , আর সেই বন্ধুত্বটাই একসময় .....। মধ্যবয়সে প্রেম কথাটা বড্ড কানে লাগত বলেই বোধহয় শব্দটাকে নিজের কাছেও স্বীকার করেনি কেউ ।
কলির জন্মদিনে দুজনে দেখা করার কথা ছিল , এই পার্কেই । তেজপাতা রং শাড়িতে প্রথম দেখবে বলেছিল কলিকে । 
কলি এসেছিল তবে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল ।পার্থ তখন সেখানে ছিলনা অথবা হয়ত আসেই নি ।
অনেক রাতে ইনবক্সে একটা মেসেজ এসেছিল , " আজ দেখা হল না , তবে আমার বিশ্বাস হয়ত কখনও দেখা হবে । তুমি ভালো থেকো ।"
ফেসবুক থেকেই তারপর হারিয়ে গেছিল চেনা পার্থসারথী চৌধুরী নামটা ।
কলির মনে আবছা হয়ে এলেও এখনো জমানো আছে সেই পনের বছর আগের ভার্চ্যুয়াল স্মৃতি । ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন বলছে , ইনিই সেই পার্থসারথী চৌধুরী ।
একটু যেচে আলাপ করার জন্যই বেঞ্চটার দিকে এগোতে যাচ্ছিল কলি ।
তখনি একটা চপল কিশোরী ছুটে আসে পার্কের অন্যপ্রান্ত থেকে । 
দাদু সন্ধ্যে হলো এবার বাড়ি চলো , তোমার কথাকলি আজও এলেন না । ওনার জন্য কেনা বইটা এবারেও আমার-ই থাকল । এই নিয়ে পনেরটা কবিতার বই হলো আমার ।
কলি ভুলেই গিয়েছিল , আজই তো ওর জন্মদিন ।
পার্থ আজও সেকথা মনে রেখেছে । চোখের কোণটা রুমালে মুছে পিছন ফিরে তাকায় কলি ।
পার্থ ততক্ষণে অনেকটা দূরে চলে গেছে...........

চিত্রঋণ : পাবলো পিকাসো 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন