শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

অন্বেষা রায়



 এক গুচ্ছ লাল বেলুন
-------------------------------

-----------------
সাহস করে এবার একটা গ্যাস মেশিন কিনেই ফেলল রফিক।গত বছর যেমন হাসি মুখো হলুদ বেলুন কিনেছিল।উফ! কি বিক্রি।প্রথমদিন ভয়ে ভয়ে বিশটা ফুলিয়েছিল।বাপরে সে তো আধ বেলাতেই খতম।কেকের দোকানে আসছে আর বেরোবার সময় রফিকের থেকে বেলুন কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
"বড়দিন আসছে চাচা, আরো বেলুন তোলো,সব বিক্কিরি হয়ে যাবে।" ব্যস্ত হাতে কেকের বাক্স গোছাতে গোছাতে বলেছিল অমর।
তা অমরের কথা শুনে লাভই হয়েছিল।সাতদিন ধরে ছেলে ছোকরাদের বেলুন কেনার কি ধুম।রফিক একা মানুষ।নেশা ভাং করে না। বেলুন বিক্রি করে একসাথে অতগুলো টাকা পেয়ে প্রথমে বুঝতেই পারেনি কীভাবে খরচ করবে।
বড়দিন কেক খেতে হয় নাকি।নাজনীন বলত।ছেলেমানুষের মতন বায়না জুড়ত কেক কিনে দেওয়ার জন্য।তা কেক কেনার আর সুযোগ পেল কই রফিক। নিকাহর বছর দেড়েকের মধ্যেই তো......
উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকায় বৃদ্ধ বেলুনওয়ালা রফিকউদ্দিন। আর সংসার পাতার সাধ হয়নি তার।এই দিব্যি আছে।আগে রিক্সা চালাত, গতবছর দুর্ঘটনায় পা টা বাদ যাওয়ার পর বেলুন বিক্রি করা শুরু করেছে।
লাল টুকটুকে হিলিয়াম মেশিনটার গায়ে হাত বোলায় সে।
অমর বলছিল, "গ্যাস বেলুন তোলো চাচা।মেয়েদের, বাচ্চাদের হেব্বি পছন্দ।দেখো কেমন সেল হয়।"
সেই হুজুগেই কেনা।পানপাতার মতন লাল বেলুনগুলো টানটান সূতোর মাথায় থোকা হয়ে দুলছে।হাত থেকে ফসকালেই ছিটকে যাবে আকাশের দিকে।ওই আকাশের ওপারে যেখানে কোথাও নাজনীন আছে।
আজ বড়দিন।সকাল থেকে দলেদলে বাচ্চা বুড়ো সব রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।দুপুর হতে না হতেই সকালের ফোলানো সবকটা বেলুন বিক্রি হয়ে গেল।পকেটে হাত দেয় সে।খুচরো পয়সা আর নোটে একটু যেন ভারি হয়েছে।হঠাৎ কি মনে হওয়াতে দ্বিগুন উদ্দ্যমে বেলুন ফোলাতে লাগল সে।একটা,দুটো,তিনটে.........পুরো এক থোকা।
"ছোট্ট দেখেই দে দেখি একটা।"
টাকাটা বাড়িয়ে রফিক নির্দেশ দেয় অমরকে।
সূতোগুলো জোট করে শক্ত করে বাঁধে কেকের প্যাকেটটার সাথে। আগে পারেনি তো কি হয়েছে, আজ সে নাজনীনকে কেক খাওয়াবেই।হাত আলগা করতেই ছোট্ট কেকের প্যাকেটটা নিয়ে উড়ে যায় বিরাট একগুচ্ছ গ্যাস বেলুন।আকাশের দিকে................

...................উৎসবের দিনে ভিক্ষে দিতে ভুলে যায় লোকে।মোটে দশটাকা এনেছিল বলে কাল সারা রাত খেতে দেয়নি লোকটা।মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে ছ বছরের দুর্গার।চারপাশ ঝলমল করছে।আনন্দে ডুবে আছে সবাই।কে দেবে ভিক্ষা তাকে?  দেবে একমুঠ খাবার?

চলনের শক্তি কমছিল একটু একটু করে।নীচের দিকে নামছিল।ফট ফট শব্দে কয়েকটা ফেটে যেতেই ঝুপ করে কেকের প্যাকেটটা এসে পড়ল দুর্গার সামনে।প্রায় ওর ময়লা জামায় ঢাকা কোলের ওপর।প্যাকেটটা খুলে প্রথমে বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিল।আকাশ থেকে বেলুন চেপে কেক এলো!!! কে পাঠালে?
মুঠোয় ধরে তৃপ্তি করে কেকের টুকরোয় কামড় দেয়।দুর্গা? নাকি নাজনীন?
--------------------------+-----------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন