শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭

জয়িতা সরকার


কাজল নয়না
_____________
"কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ"
ঘন কাজল চোখের আবেদন চীরকালীন....  চোখের ভাষা, কটাক্ষ, কিংবা তেড়ছা চোখে সামান্য দৃকপাত...  বদলে দেয় অনেক কিছুই....
কবিগুরু এমন কৃষ্ণকলির দেখা পেয়েছিলেন.... ময়নাপাড়ার মাঠে....  আর আমরা আজ কালো আর রহস্যময়  চোখের সন্ধ্যানে পারি দেবো মিশর.......
প্রাচীন মিশর মানেই ফ্যারাও এবং পিরামিড | কিন্তু এমন কখনও দেখেছেন যেখানে প্রাচীন মিশর দেখানো হচ্ছে অথচ রাজপুরুষরাজনারী অথবা অভিজাতদের চোখে মেক আপ নেই ?
তাদের সাজের প্রধান অঙ্গ ছিল চোখের চারপাশে মোটা করে আঁকা কাজল | শুধু সাজগোজ নয় কিন্তু | পিছনে ছিল অন্য কারণও |
খ্রিস্টের জন্মের ৪০০০ বছর আগে গড়ে ওঠা নীল নদের সভ্যতায় সমাধিতে দিয়ে দেওয়া হত রংতুলি এবং প্যালেট | যাতে পরলোকেও চোখের সাজে কোনও ত্রুটি না থাকে |
চোখের চারধারে মোটা করে কাজল দেওয়ার কারণ ছিল যাতে সূর্যের তীব্র তাপ থেকে কোমল ত্বক রক্ষা পায় | মরুভূমির দেশে বালির হামলা থেকে ওই সংবেদনশীল ত্বক রক্ষা করতে রুজপারফিউমড অয়েলগ্যালেনা পাউডার সব মিশিয়ে চোখ সাজাত মিশরীয়রা | এতে বালুঝড় এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচত ত্বকের স্বাস্থ্য | রক্ষা পেত বিভিন্ন সংক্রমণ থেকেও |
শেষে এমন হলনারী-পুরুষ নির্বিশেষে অভিজাতদের সাজের অংশই হয়ে দাঁড়াল কাজল ঘেরা চোখ | এমনভাবে আঁকা হত যাতে বিড়ালের চোখের মতো দেখতে লাগে | স্মোকি এই লুক দেখা দিল মিশরের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রতীক হয়ে | মনে করা হতসাজসজ্জা ছাড়া যে চোখ থাকে তাতে নজর লাগে অশুভ শক্তির | এইভাবেই সাজসজ্জা আর সুস্বাস্থ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিল নীল নদের সভ্যতা |

#মিশরীয়_যুগের_তিন_বিখ্যাত_রানী_সাজপোশাকের_সাতকাহন

#হাটসেপসুটস
মিশরের ইতিহাসে ফারাওদের রাজত্বকালগুলো বিভিন্ন রাজবংশেরশাসনে ভাগ করা। সেই ইতিহাসের আঠারোতম রাজবংশের বিখ্যাত রাজা ছিলেন প্রথম টুথমিস
খৃষ্টপুর্ব ১৫০৮ অব্দে তাঁর ঔরষে প্রধান মহিষী আহমেস এর কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন তাদের কন্যা হাটসেপসুটস।দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতী এই কন্যাটি ছিল রাজার সবচেয়ে প্রিয়
হাটসেপসুট রানী হলেও তিনি যে একজন মহিলা এটা তাকে সব সময় স্মরণে রাখতে হতো। বিভিন্ন ধরনের আকস্মিক বাধা আর প্রতিকুলতা মোকাবিলার জন্য তিনি সবসময় তৈরী থাকতেন
জনগন যাতে মহিলা হিসেবে তাঁকে দেখে যেন কোনভাবেই অসন্তষ্ট না হয়তার জন্য তিনি তাদের সামনে আসতেন পুরুষের পোশাক পরে। এমনকি তিনি নকল দাড়িও ব্যবহার করতেন। তাঁর বেশিরভাগ মুর্তি ছিল পুরুষের পোশাক আর নকল দাড়ি লাগানো।
সেগুলো দেখে মনে হয় তার শারিরীক গঠনও ছিল অনেকটা অল্প বয়স্ক পুরুষের মত

#নেফারতিতি
মিশরীয় ভাষায় নেফারতিতি শব্দের অর্থএকজন সুন্দরীর আগমন হয়েছে
প্রাচীন মিশরীর এই রানী তাঁর অসাধারণ সৈন্দর্য্যের জন্য মৃত্যুর হাজার বছর পরে আজও পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে আছেন। অনেক ঐতিহাসিকদের মতেই তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী, এখনও প্রকৃত সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে নেফ্রেতিতিকেই বিবেচনা করা হয়
১৯১২ সালে এক প্রত্নতাত্বিক উৎখননের নেফ্রতিতির একটা অসম্পূর্ণ অবাক্ষ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছিল, এই মুর্তির মুখ সৌষ্ঠ্যব এই বিংশ শতকের কসমেটিক সার্জারির আউটলাইন হিসেবে অনেকই ব্যবহার করে! তিনি তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের পাশাপাশি দৌর্দান্ড প্রতাপশালী সম্রাজ্ঞী ছিলেন
ধারণা করা হয়, তৎকালিন মিশেরর ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে নেফারতিতির প্রতক্ষ্য ভুমিকা ছিল। বিভিন্ন রিলিফে তাকে পুরোহিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাকে সূর্যদেবতা আতেনের উপাসনাও করতে দেখা যায়, যে কাজ গুলো অন্য কোন রাণীকে কখনো অধিকার দেয়া হয়নি। এমন কি নেফ্রেতিতির সাজ পোষাকও ছিল সূর্যদেবতার স্ত্রীর মতো
কানারাকের রিলিফে দেখা যায়, তাঁর পরনে লম্বা আলখেল্লার মতো পোষাক, কোমরের কাছে লাল ফিতা বাঁধা, চুল ছোট ঘাড় পর্যন্ত
এলোচুলে তিনি স্বামী আমেনহোটেপের সাথে সূর্য দেবতাকে নৈবদ্য দান করেছেন। রাণী হিসেবে এমন অনেক ভুমিকায় তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেটা শুধু সে সময়রের রাজারাই করত। যেমন তাকে প্রায়ই ফারাওয়ের মুকুট পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়, শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় উপস্থান করা হয়েছে
#ক্লিওপেট্রা’ … এই নামটি শুনেই যুগ যুগ ধরে মোহিত হয়েছে কত পুরুষ
ইতিহাসের মতে রানি ক্লিওপেট্রা তার অসামান্য সৌন্দর্য বজায় রাখতে অনেক লাক্সারিয়াস রূপচর্চার উপায় বেছে নিতেন। রানির সেবায় নিয়জিত থাকতো শত শত দাস দাসি। আর কেনই বা নয়? তিনি ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যের মালকিন যার রূপের ছটায় পাগল ছিলেন সম্রাট সিজার আর মার্ক আয়ন্তনি। দুনিয়া ছিল তার হাতের মুঠোয়
  ক্লিওপেট্রা তার অনন্ত যৌবন বজায় রাখার জন্য মুখে সোনার মাস্ক ব্যবহার করতেন। জ্বি হ্যাঁ, সলিড সোনার মাস্ক
রাজকীয় স্নানঃ
মিশরের রানির অন্যতম বিখ্যাত বিউটি সিক্রেট হচ্ছে তার বিলাসময় রাজকীয় স্নান রেসিপি। তিনি দুধ আর মধু দিয়ে স্নান করতেন।
এটাও বলা হয় যে রানি যখন কোন দূরদেশে যাত্রা করতেন তার সাথে যেত দুটি মাদী গাধা যাতে তার স্নানের সময় দুধের কোন ঘাটতি না হয়
রানি ক্লিওপেট্রার ফেস মাস্ক এবং ক্রিমঃ
রানির দাসীরা ফ্রেস এলভেরার পাতা নিয়ে আসতো এবং এর জেলের সাথে মধু মিশিয়ে রানি মাস্ক তৈরি করতেন। তিনি তার দাসদের দিয়ে সাদা মাটি বা হোয়াইট ক্লে আনিয়ে নিতেন এবং তার সাথে শশার রস মিশিয়েও ফেস মাস্ক বানাতেন। তিনি বলতেন এতে করে বলিরেখা দূরে থাকে
রানীর বডি স্ক্রাবঃ
দুধ আর মধুর স্নানে যেন ভালো ফল পাওয়া যায় সেজন্য রানির দাসীরা তার সারা দেহ ন্যাচারাল বডি স্ক্রাব দিয়ে ম্যাসাজ করে দিত। এতে ডেড সেলস ঝরে গিয়ে ক্লিওপেট্রার ত্বক হয়ে উঠত আরও মসৃণ। বলা হয় এই রাজকীয় স্ক্রাব তৈরি হত সুদূর ডেড সি থেকে নিয়ে আসা সামুদ্রিক লবণ ঘি দিয়ে তৈরি ক্রিমের সাথে মিশিয়ে
রানির চোখের বিশেষ যত্নঃ
রানি তার চোখের বিশেষ সাজের জন্য আজও সারা পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। তার জীবনের উপর তৈরি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাটক বা সিনেমায় ইতিহাস থেকে নেয়া রানির বিখ্যাত সাজ ব্যবহার করা হয় এবং রানি তার চোখ উজ্জ্বল এবং আবেদনময় করার জন্য চোখের পাতায় সেলেরি আর হেম্পের রস লাগাতেন
ক্লিওপেট্রার চুলের যত্নঃ
বলা হয় ক্লিওপেট্রার চুল ছিল মেঘের মত ঘন আর কালো। রানি তার চুলের যত্নে ব্যবহার করতেন মিশরীয় মেহেদি পাতার পেস্ট আর তার সাথে মিশাতেন জুনিপার বেরির রস। আর চুলের রোজকার যত্নে তার চুলে অলিভ অয়েল আর বাদাম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা হত
****
তিন রানীর সাতকাহন  তো শুনলেন , দেখতে দেখতেই  পূজোর আর মাত্র তিনমাস.....  নিজেরাই ঠিক করুন মন্ডপে ঝড় তুলতে নেফারতিতির মত সাজবেন না ক্লিওপেট্রা হবেনা.....
চয়েজ ইজ ইয়োরস.....
( তথ্য অন্তর্জাল)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন