শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ঋষি সৌরক


আমি বড় হয়ে তরুণ কবি হবো


আকৃতিতে একটু বড়ো আর প্রকৃতিতে একটু লালের দিকের জিনিস যে বাঙালি র পছন্দে আজো মনোপলি করে চলেছে তা এখন অক্ষরে অক্ষরে পরীক্ষিত। প্রভূত চাট না খেলে টকটকে বস্তু যথাক্রমে টক - তেঁতো এবং ছিবড়ে হয়ে ওঠে না,তাও এখন প্রমাণিত।
 

কবি বসেছিলেন ল্যাপটপ খুলে। ভীষণ চিন্তিত। ভাবছিলেন টাইপ করবেন, "হাউ টু লঞ্চ আ রকেট!" চিন্তিত, কারণ এতদিন অবধি উনি একটিও কবিতা লিখে উঠতে পারেন নি। তাই ভুল করে টাইপ করে ফেললেন, "হাউ টু মাস্টারবেট... " কবি খুব নরম প্রকৃতির। কলাবিভাগে অধ্যাপনা করেন। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ছলছল করে ওঠে চোখ। দিনকয়েক আগে এক কবিতাসভায় তিনি হঠাতই জানতে পারলেন, দু:সংবাদটি - আজ অবধি কবি নাকি একটিও কবিতা লিখে উঠতে পারেন নি। এইরকম অশ্লীল এবং নোংরা প্ররোচনার সম্মুখীন হয়েও কবি অত্যন্ত নম্র ও ভদ্রভাবে সেই অমোঘ পালটা প্রশ্নটি করে ফেলেছিলেন, "তালে? কবিতা কাকে বলে?"
 

কিছু অসভ্য কমবয়সী ছেলে পেছন দিকের চেয়ারগুলো থেকে চিৎকার করে উঠেছিলো, "আপনি বলতে পারবেন কলা কাকে বলে? ওতে বিচী থাকলেও দেখা যায় না কেন?"
 

এইসব... এইসব অসভ্য ছেলেপিলেদের জন্যই কবিরা আজকাল কবিতা লেখাই ছেড়ে দিয়েছেন।

সেই থেকে কবি খুব অপমান বোধ করছেন। শরীরে কোথাও চোটফোট লাগলে লোকজনের জেনার‍্যালি মায়ের কথা মনে পড়ে, কিন্তু সেই ঘটনার পর থেকেই কবির কণ্টিনিউয়াসলি বাবার মুখটা খুব মনে পড়ছে। আসলে কবির প্রেস্টিজে লেগেছিল। কবি তখন নেহাতই ছোট। ক্লাস সেভেন-এইট হবে। আত্মীয়স্বজন বিশেষ করে কবির মায়ের মা দিদিমা প্রায়শই কবিকে প্রেসার দেন এই বলে যে কবির বাবা একজন কত বড়ো মাপের কবি, আর কবি সেখানে ক্লাস এইটে পড়েও কিছু লিখতে পারেন না। এইকথা বারবার শুনে কবির মনে একবার জিদ চেপে গেল। একবার কালিপূজার দেয়াল ম্যাগাজিন এর জন্য পাড়ার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কবিতা চাওয়া হল। সম্পাদক কবির বাবা। দেয়াল ম্যাগাজিনের নাম "সবুজ বিপ্লব"
 

তো একের পর এক দিন যায়, কবির বাবার কাছে ঝেঁটিয়ে কবিতা জমা পড়তে থাকে। যত দিন এগুতে লাগলো কবিতার সংখ্যা বাড়তে লাগলো। শেষকালে কালিপূজার একহপ্তা আগে পরিসংখ্যানে দেখা গেল, পাড়ার গুটিকয় ছেলেমেয়ে যাদের রোলনম্বর স্কুলে ৫০ এর পরে তারা বাদে মোটামুটি সকলেই স্বরচিত কবিতা জমা দিয়ে ফেলেছে "সবুজ বিপ্লব" এর জন্য! আর ঠিক এই জিনিসটারই ভয় পাচ্ছিলেন কবি, স্কুলে রোল নম্বর ৫০ না হলেও, শত মাথা খাটিয়েও এক কলম কবিতা লিখতে পারেন নি তিনি। অবশেষে কালিপূজার দুচারদিন আগে যখন ছলোছলো চোখে কবির মআআ, কবির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, "বাবা! তুই কিছু দিবি না?"
 

কবি আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। কিন্তু আবেগ তো পশু, মানুষ, উদ্ভিদ মাত্র সকলেরই থাকে - তাই বলে সেটা প্রকাশ করার ক্ষমতাটাই আসল। কবি বরাবর নিজের মধ্যে সেটার অভাব অনুভব করতেন। কিন্তু মায়ের এহেন অনুরোধে আদাজল খেয়ে লেগে পড়লেন কবি, অনেক কষ্টফষ্টো করে কালিপূজার আগের দিন যখন কবিতাবাছাই প্রায় শেষ তখন একটি কবিতা জমা দিলেন। সম্পাদক বাবা তখন কোন এক লোকাল বিতর্কসভার আমন্ত্রিত বিচারক হয়ে গেছেন। তাই সহসম্পাদক মেজদার হাত দিয়ে কবির সেই বহুকষ্টের কবিতাটি সিলেক্ট হয়ে গেল

কিন্তু সমস্যা হল কালিপূজার পরে পরে। পাড়ার বেশকিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বাবাকে কমপ্লেন করলেন কবির কবিতার সাথে কবিগুরুর দু-চারটি কবিতার হুবহু মিল তারা পেয়েছেন। পুরোটা না মিললেও প্রায় অনেকটাই ডিটো টোকা। কবির মনে আছে, ভাইফোঁটা র আগের দিনের রাতে বাবা সেদিন খুব মেরেছিলো... রদ্দা মারতে মারতে বলেছিলো,"বাকি কবিতাটা কার টোকা বল? নাহলে আজই মেরে ফেলবো অসভ্য ছেলে, নিজে লিখতে পারবি না লিখবি না, তাবলে লোকের টুকবি? তাও যার তার হলে হয় কবিগুরুর কবিতা? ছি! ছি! "

সেই যে সেদিন থেকে কবি বাবার কাছে আপাদমস্তক ধোলাই খেলেন, পাড়ার লোকে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখলেন, এবং কবির প্রেস্টিজ চুপসে এইটুকু হয়ে গেল... তারপর প্রায় ৫-৬ বছর কবিতার সাথে কোনও সম্পর্কই ছিল না তার। এমনকি কাছে-পিঠে কোথাও "কবিতা" বলে কোনও বস্তু আছে শুনলে, গু এড়িয়ে চলার মত করে সন্তর্পনে কবি এড়িয়ে যেতেন।
 

বাধ সাধলো কলেজের সেকণ্ড ইয়ারে। বেংগোলি ডিপার্টমেণ্ট এর একটি দুধে আলতা তরুণীকে কবির ব্যাপক মনে ধরলো। আকৃতিতে একটু বড়ো আর প্রকৃতিতে একটু লালের দিকের বিষয় হলে ঐ বয়সে সবারই একটু ঝোঁক থাকে আরে কি... কলেজের প্রায় সব ডিপার্টমেন্টের ছেলেরাই অ্যাডাল্ট হর্মোন এ ডুব দিয়ে লেগে পড়লো তরুণীর পেছনে। কবি মুখচোরা... কবি সরল... হলেও সাবধানী। কলেজের বাঘা বাঘা হনুদিগকে চতুরতার সাথে পাশ কাটিয়ে ফাঁকা গোলে বল ঢোকাতে যাবেন কি যাবেন না... বাধ সাধল মেয়েটির নাম... কবিতা মাণ্ডি

আমার পদবী-সেন্সিটিভ পাঠকেরা এটা মনে করবেন না, যে এস-সি এস-টি নিয়ে কবির খুব একটা ছুতমার্গ ছিলো ; তিনি কবি তিনি উদার - কিন্তু ৬ বছর পরে কবিতা (বেংগোলি ডিপার্টমেণ্ট, রোল নাম্বার ১৩) যে এইইভাবে তার জীবনে ফিরে আসবে তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি। যেন পিতৃদত্ত অভিশাপ এবং সঞ্জয় দত্ত ভিলেন হলেও নায়িকার পিসি... একটা কিম্ভূত কিমাকার জ্যামিতিক আকৃতিকে কোনমতে ঢোক গিলে কবিতাকে ভালোবাসার শুরু করেন কবি...কিন্তু তার প্রকৃত কবিজীবনের সূত্রপাত তারও বছর তিনেক পরে।
 

বেংগোলি ডিপার্টমেণ্ট এরই HOD র একমাত্র ছেলে হেনরি পট্টনায়েক, স্বভাবে খুব ক্ষুধার্ত এবং বড়লোক বাবার অকালকুষ্মাণ্ড ছেলে। পারে না, তবু মিল দিয়ে কবিতা লেখে...

স্বপ্ন নাকি কল্পনা
তবে ব্যাপারখানা অল্পনা
কুচো কুচো জল্পনা

ইত্যাদি

বাবার ক্ষমতা থাকলে এবং ছেলের বুদ্ধি না থেকে স্রেফ ইন্দি থাকলে যা হয়- দাপুটে। গ্যাংবাজ। যা লেখে, লোকজন তাতেই বগোল তুলে হাততালি দেয়। তোষামোদকারীরা আবার হেনরি না বলে ডাকে হাংরি - তাতে একটু সেক্সি লাগে। তো সেই ছেলে একবার পরীক্ষায় "বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে বংকিমচন্দ্রের অবদান" লিখতে গিয়ে কি লিখবে খুঁজে পেলো না। সামনের ছেলেটির কাছ থেকে কেবলমাত্র "কপালকুন্তলা" জাতীয় কিছু একটা শুনে সেটা নিয়েই ফেনাতে আরম্ভ করলো। যা লিখলো, সারমর্ম এই:
 

বংকিমচন্দ্র নাকি ল্যাপটপে কপালকুন্তলা লিখছিলেন। প্রায় শেষই হয়ে এসেছিলো, মাঝখানে হঠাত তাকে একবার বড় বাথরুম যেতে হল। আর তখন তো ফো


প্রচ্ছদ শিল্পী : সুদীপা কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন