শব্দের
জন্মদিন
সত্তর
দশকের কবি তুষার চৌধুরীর ‘জন্মের জুড়ুলে বৃষ্টি’ বইটি ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশক : রক্তকরবী। উত্সর্গ : অনন্য রায়কে।
“তুমি সত্যি বলছ আমরা চোখের পলকে
মর থেকে মৃত্যুহীন হবো ?
মৃতেরা আবার সব জন্ম নেবে ভোরের আলোয় ?
মৃত্যু ধুলিসাৎ হবে, তবে তার জিৎ ?
সমুদ্রপুঁটির মত স্নিগ্ধ জন্ম চেয়েছি বলেই
মৃত্যু আমাদের রেণুবীজের আকারে
সোঁদাগুল্মে গোর দিয়েছিল ?
বস্তুত, মানুষ ও অন্যান্য দৃশ্যমান প্রতীকের জন্মদিন উদ্যাপন হলেও শব্দের নয়। শব্দের প্রকৃত জন্মদিন কবে আমরা জানিও না। তবে কবি বা লেখকের হাতেই এমন শিরদাঁড়া সমৃদ্ধ উৎস থেকে শব্দের জন্ম। জীবন ও মৃত্যুর এক প্রগাঢ় মহিমাবোধে প্রকাশিত যে জন্মদাগ; তাকে জুড়ুল বলাই সঙ্গত। উপরের তথ্য ও ঊদ্ধৃতি প্রসঙ্গান্তরেই এসেছে। আপনি নাও একমত হতে পারেন। শুধু এটুকু বলতে পারি, জন্মের সেই শুভ লগন কেমন অপার আনন্দে আমাদের বিহ্বল করে। করতেই পারে! কেন ? কেন জন্মের কাছে এত ঋণ ? কেনই বা মৃত্যুর মৃদু হাসিতে চমকে উঠি ? কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন ‘পৃথিবীতে ভোর হতে দেখিনি কখনো’। কুসুমের শরীরে আর একটা ফুল ফোটাবে বলে অপেক্ষা করেন মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
“তেইশে ডিসেম্বর শ্যাম তার একত্রিশের জন্মদিন পার হয়ে যাচ্ছিল। সকালবেলায় ঘুম ভাঙতেই তার খেয়াল হয়েছিল—আজ আমার জন্মদিন। তখনও বিছানা ছাড়েনি শ্যাম, চোখে আধো ঘুম, লেপের ওম-এর ভিতর থেকে সে অনেকবার গুনগুন করল, আহা! আজ আমার জন্মদিন! এতকাল সে জন্মদিনকে হিসেবের মধ্যে আনত না, তার ধারণা ছিল ওতে স্পিড কমে যায়। ধরো, তুমি সিঁড়ি ভেঙে উঠছ কিংবা নামছ, লিফটের দরজা খুলতে বা বন্ধ করতে বাড়িয়েছ হাত, জুতোর ফিতে খুলতে বা বাঁধতে যাচ্ছ, চুমু খেতে বাড়িয়েছ ঠোঁট, দাঁড়ি কাটতে গিয়ে হয়তো মাত্র জুলপির নীচে বসিয়েছ ক্ষুর—অমনি বয়স হয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়লে আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যায় হাত-পা, মন এলিয়ে পড়ে, হাই উঠতে থাকে।”(ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, পরি: ৪, পৃ: ২৯)
শ্যামের জন্মের সাথে সাথে এই পৃথিবীতে কিছু শব্দের জন্ম হল, বোধের জন্ম হল, ষাটের দশকের অস্থিরতা, বিষাদের ও মনস্তাত্বিক অসুস্থতা স্বীকারোক্তির ভঙ্গিতে বেরিয়ে এলো। শব্দরা এ হাত থেকে ও হাতে ঘুরতে থাকল, পুরানো হলেও, সুধীন্দ্রনাথ দত্তও মারা গেছেন, অপ্রচলিত শব্দকে সাহিত্যের আসরে কে নিয়ে আসবে? আবার সময়ের সাথে সঙ্গতি না রেখে শব্দের ব্যবহার আমাদের কাছে বিরক্তিকর। অর্থগত সীমাবদ্ধতা না কাটালে শব্দের জন্মদিন অলীক মাত্র! নতুন নতুন ভাবে ব্যবহারে বিপুল লেখালেখি উঠে আসছে পাতায় পাতায়। ভাবি, শব্দের গভীরে গিয়ে রেখে আসি ছায়ামুখ; ওকে জন্মদাগ বলে ডাকি...প্রতিমুহূর্তে ছুটে চলি বিটি রোডের নয়া বস্তিতে, নতুন কোনো গোবিন্দচন্দ্র আসুক শব্দের জন্মদিন নিয়ে। চলুন, এবার না হয় পালন করি, নিজের ভিতরে ঝিম ঝিম করা, অদৃশ্য কিছু শব্দের জন্মদিন...
“তুমি সত্যি বলছ আমরা চোখের পলকে
মর থেকে মৃত্যুহীন হবো ?
মৃতেরা আবার সব জন্ম নেবে ভোরের আলোয় ?
মৃত্যু ধুলিসাৎ হবে, তবে তার জিৎ ?
সমুদ্রপুঁটির মত স্নিগ্ধ জন্ম চেয়েছি বলেই
মৃত্যু আমাদের রেণুবীজের আকারে
সোঁদাগুল্মে গোর দিয়েছিল ?
বস্তুত, মানুষ ও অন্যান্য দৃশ্যমান প্রতীকের জন্মদিন উদ্যাপন হলেও শব্দের নয়। শব্দের প্রকৃত জন্মদিন কবে আমরা জানিও না। তবে কবি বা লেখকের হাতেই এমন শিরদাঁড়া সমৃদ্ধ উৎস থেকে শব্দের জন্ম। জীবন ও মৃত্যুর এক প্রগাঢ় মহিমাবোধে প্রকাশিত যে জন্মদাগ; তাকে জুড়ুল বলাই সঙ্গত। উপরের তথ্য ও ঊদ্ধৃতি প্রসঙ্গান্তরেই এসেছে। আপনি নাও একমত হতে পারেন। শুধু এটুকু বলতে পারি, জন্মের সেই শুভ লগন কেমন অপার আনন্দে আমাদের বিহ্বল করে। করতেই পারে! কেন ? কেন জন্মের কাছে এত ঋণ ? কেনই বা মৃত্যুর মৃদু হাসিতে চমকে উঠি ? কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন ‘পৃথিবীতে ভোর হতে দেখিনি কখনো’। কুসুমের শরীরে আর একটা ফুল ফোটাবে বলে অপেক্ষা করেন মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
“তেইশে ডিসেম্বর শ্যাম তার একত্রিশের জন্মদিন পার হয়ে যাচ্ছিল। সকালবেলায় ঘুম ভাঙতেই তার খেয়াল হয়েছিল—আজ আমার জন্মদিন। তখনও বিছানা ছাড়েনি শ্যাম, চোখে আধো ঘুম, লেপের ওম-এর ভিতর থেকে সে অনেকবার গুনগুন করল, আহা! আজ আমার জন্মদিন! এতকাল সে জন্মদিনকে হিসেবের মধ্যে আনত না, তার ধারণা ছিল ওতে স্পিড কমে যায়। ধরো, তুমি সিঁড়ি ভেঙে উঠছ কিংবা নামছ, লিফটের দরজা খুলতে বা বন্ধ করতে বাড়িয়েছ হাত, জুতোর ফিতে খুলতে বা বাঁধতে যাচ্ছ, চুমু খেতে বাড়িয়েছ ঠোঁট, দাঁড়ি কাটতে গিয়ে হয়তো মাত্র জুলপির নীচে বসিয়েছ ক্ষুর—অমনি বয়স হয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়লে আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যায় হাত-পা, মন এলিয়ে পড়ে, হাই উঠতে থাকে।”(ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, পরি: ৪, পৃ: ২৯)
শ্যামের জন্মের সাথে সাথে এই পৃথিবীতে কিছু শব্দের জন্ম হল, বোধের জন্ম হল, ষাটের দশকের অস্থিরতা, বিষাদের ও মনস্তাত্বিক অসুস্থতা স্বীকারোক্তির ভঙ্গিতে বেরিয়ে এলো। শব্দরা এ হাত থেকে ও হাতে ঘুরতে থাকল, পুরানো হলেও, সুধীন্দ্রনাথ দত্তও মারা গেছেন, অপ্রচলিত শব্দকে সাহিত্যের আসরে কে নিয়ে আসবে? আবার সময়ের সাথে সঙ্গতি না রেখে শব্দের ব্যবহার আমাদের কাছে বিরক্তিকর। অর্থগত সীমাবদ্ধতা না কাটালে শব্দের জন্মদিন অলীক মাত্র! নতুন নতুন ভাবে ব্যবহারে বিপুল লেখালেখি উঠে আসছে পাতায় পাতায়। ভাবি, শব্দের গভীরে গিয়ে রেখে আসি ছায়ামুখ; ওকে জন্মদাগ বলে ডাকি...প্রতিমুহূর্তে ছুটে চলি বিটি রোডের নয়া বস্তিতে, নতুন কোনো গোবিন্দচন্দ্র আসুক শব্দের জন্মদিন নিয়ে। চলুন, এবার না হয় পালন করি, নিজের ভিতরে ঝিম ঝিম করা, অদৃশ্য কিছু শব্দের জন্মদিন...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন