শনিবার, ২২ জুন, ২০১৯

নন্দিতা দাস বসু



ত্যাগ 


একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে বাপের বাড়িতে গর্ভধারিণী মাকে কনকাঞ্জলী দিয়ে শ্বশুড়ঘরে পর্দাপণ করেছিল শ্রীময়ী।সেই মুঠোভরা স্বপ্নে ছিল একটু ভালো থাকার আর একমুঠো ভালো রাখার অঙ্গীকার।বেসরকারী অফিসে এক সামান্য করণিকের কনিষ্ঠা কন্যা শ্রী।বাবা -মা ও তিন ভাইবোন এই ছিলো তাদের ছোট্ট সংসার।তাদের বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাদের শিক্ষিত করে তুলেছেন।মা নিজে একবেলা অভুক্ত থেকেও সকলের ক্ষুধা নিবারণ করেছেন হাসি মুখে।দিদিকে বিয়ে দেবার পরের বছরই শ্রীকে বিয়ে দেবার জন্য উদগ্রীব হন তার বাবা।

ছোটমেয়েটি তার বড়ো আদরের।যদিও তিনি চাইলেই মেয়েকে দামী শাড়ি বা গহনা কিনে দিতে পারেন নি কোনোদিনই।তবু প্রতিটি মেয়েই তাদের পিতার কাছে রাজকন্যাসম।আদরে-আবদারে তাদের ছোট্ট রাজপ্রাসাদে প্রাণভরা খুশি উপচে পড়তো।প্রথমদিন শ্বশুরঘরে গিয়েই বুঝতে পারে শ্রী যে সংসার আসলে স্বপ্ন গড়ার নয়,স্বপ্ন ভাঙার জায়গা।নিজের সকল ইচ্ছে,আশা ও ভালোবাসার মুহূর্তগুলিকে গলাটিপে হত্যা করা হয় সংসার নামক যুপকাষ্ঠে।সকলকে ভালো রাখতে আর ভালোবাসতে গিয়ে  নিজেকেই অঞ্জলী দিতে হয়।
এইভাবেই কাটছিল শ্রীময়ীর জীবন।সংসারের নিত্য -নৈমিত্তিক কাজ আর সকলের দেখভালের অবসরে সে যেটুকু সময় পেত নিজেকে নিয়োজিত রাখতো সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে।এভাবেই একদিন সে সরকারি স্কুলের ক্লার্কের চাকরি পেয়ে গেল।নিয়োগপত্র হাতে পেতেই সে আনন্দে আত্মহারা।কিন্তু শ্বশুড়বাড়ির সকলে প্রবল আপত্তি জানায় তার এই চাকরি করার ইচ্ছে কে।এমনকি তার স্বামীও তাকে চাকরি ছেড়ে দেবার জন্য অনুরোধ করে।
কিন্তু এবার কোন অনুরোধ,ওজর,আপত্তিতে আর মাথা নোয়ালো না শ্রী।এবার নিজেকে শক্ত করে বাধলো সে নিজের তাগিদে।আর নয়।চার-চারটে বছর সে সকলের স্বার্থে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে ত্যাগ নামক সমুদ্রের জোয়ারে।সে খড়কুটোর মতো ভেসে চলেছিল সকলের স্বার্থের নিরিখে।প্রিয়জন নয় সে হয়ে উঠেছিল প্রয়োজন।আর ফিরে তাকাল না শ্রী।এবার একটু নিজেকে ভালোবাসার দরকার।আর নিজেকে ভালোবাসতে গেলে একটু স্বার্থপর তো হতেই হবে।তাই এবার শ্বশুড়বাড়ির সকলকে ভালো রাখার অঙ্গীকার ছেড়ে সে হাতে নিল চাকরির নিয়োগপত্র।কিছু পেতে গেলে যে কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হয়,এটাই যে সংসারের নিয়ম।।
কলমে নন্দিতা

২টি মন্তব্য: