শনিবার, ২২ জুন, ২০১৯

স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক








বাঘের খোঁজে বান্ধবগড়ে


এই গরমে কেউ জঙ্গলে যায় ? মানে জুন মাসের গরমে লোকে পাহাড়ে যেতে  পারে, সমুদ্রে যেতে পারে, নদীর ধারেও যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে জঙ্গলে ! পাগল না মাথা খারাপ !
জুনের শুরুতে আমাদের মধ্যপ্রদেশ যাবার খবরটা শুনে নানাজনের প্রায় এরকমই প্রতিক্রিয়া ছিল । তা আমরাও আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। মধ্যপ্রদেশেই যাব, তাও আবার এই জুন মাসেই। কারণ ? কারণ আর কিছুই না, দেশের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেছে যে জঙ্গলে এসে জানোয়ার দেখতে হলে কিন্তু ভরা গরমেই আসতে হবে। যত বেশী গরম পড়বে তত জলের সোর্স কমবে। আর জলের সোর্স কমলে তবে না ভিভিআইপি জানোয়াররা জলাশয়ের আশেপাশে দর্শন দেবেন। তাই হিংস্র জন্তু জানোয়ার, বা সোজা বাংলায় বললে বাঘ দেখতে গেলে এই গরমেই যেতে হবে। হুঁ হুঁ বাবা, কষ্ট না করলে তো কেষ্ট মিলবে না। 
যাই হোক তল্পিতল্পা গুছিয়ে একদিন দুপুরে উঠে পড়লাম শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে।


একটা গোটা দিন ট্রেনে করে চলার পর অবশেষে পরেরদিন দুপুরে কাটনি স্টেশনে নেমে নির্দিষ্ট গাড়ীতে করে রওনা দিলাম বান্ধবগড়ের জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। প্রায় দুঘণ্টা যাত্রাপথের আদ্ধেক রাস্তা পেরিয়ে যাবার পরেই চারপাশে জঙ্গলের রাস্তা শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম, কিছুটা মাঠ আর তারপরেই আবার গাছের সারি। যদিও আসল জঙ্গল থেকে এখনো অনেকটাই দূরে আমরা তবু চারপাশে গাছের আধিক্য অমন কাঠফাটা  রোদেও চোখকে আরাম দেয়। জঙ্গলের বেশ কাছাকাছি এসে গেলে শুরু হয় লাল ধুলো। কিছুটা অংশে তো ধুলোর জন্য তো প্রায় রাস্তাই দেখা যায় না। একদম ফাঁকা এই রাস্তাটা। এতক্ষণ তবু মাঝে মধ্যে মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল। এদিকটায় তাও নেই। যাই হোক অবশেষে বান্ধবগড়ে প্রবেশ করা গেল। ছোট্ট একটা টাউন, গুটিকয়েক টিমটিম করা দোকান, মনিহারি থেকে ওষুধপত্র বা হ্যান্ডলুম কিংবা স্থানীয় হস্তশিল্প সবকিছুরই দোকান রয়েছে। একটি গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, অল্প কিছু পাকা বাড়ী আর তারপরেই শুরু হচ্ছে হোটেল আর জাঙ্গল রিসর্টের লাইন। এখানে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেশী হাঁটাহাঁটি করতে বারণ করে। পুরো জায়গাটাই তো জঙ্গলে ঘেরা। আমাদের বুকিং ছিল সরকারী ফরেস্ট লজেই। কেন না আগে থেকেই জানা ছিল এটাই একমাত্র জঙ্গলের প্রায় ভেতরে। বাকি সব হোটেল জঙ্গল থেকে একটু দূরে।

“হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজ” এর মেন গেট দিয়ে ঢুকতেই একটা বিরাট বড় সাদা বাঘের ছবি দেখে অত গরমে আর ক্লান্তিতেও মনটা খুশী হয়ে গেল। ঢুকেই অফিসঘরে বসে খানিক বিশ্রাম করে নিলাম সকলে। অফিসঘরের লাগোয়া একটা বিরাট ডাইনিং হল রয়েছে দেখেই খিদে পেয়ে গেল ভীষণরকম। সেই কোন সকালে ট্রেনে ব্রেকফাস্ট করেছি। ম্যানেজার ভারী অতিথিপরায়ন মানুষ। আমাদের নানা ব্যাপারে নিজেই জানালেন আর এও বললেন, ‘একদম ঠিক সময়ে এসেছেন আপনারা। এই সময় ভিড় থাকে না একদম। খুব কম লোকে এত গরমে আসে। কিন্তু যারা  আসে তারা সত্যি জঙ্গলপ্রেমী বলেই আসে। বাঘ পাবেনই, ও নিয়ে চিন্তা করবেন না।’
রুম পেয়েই সবাই মিলে দৌড় লাগালাম চান করতে। পেটে তখন তিন চারটে ছুঁচো একসঙ্গে লাফাচ্ছে।

অফিস থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা উঠে একটা বারান্দায় পড়তে হয়। খোলা আকাশের নিচে প্রচুর গাছগাছালিতে ঘেরা মাচার মতো টানা বারান্দা চলে গেছে বিভিন্ন ঘরের সামনে। লজের পাঁচিলের ওধারেই জঙ্গল। কিংবা বলা যায় জঙ্গলের কিছুটা অংশ এই লজের মধ্যেই চলে এসেছে। গাছগুলোয় ভর্তি পাখি, আর কয়েকটা ঘরের টিনের চালের ওপর হনুমানের দল আমাদের যেভাবে বন্য অভ্যর্থনা জানালো তাতে প্রথমটা একটু ঘাবড়েই গেছিলাম। হোটেলের কর্মচারী অবশ্য বললো হাতে খাবার জিনিস না থাকলে ওরা কিছু করবে না। এখানে ওরা হামেশাই আসে। সবুজ রেলিংওয়ালা লম্বা বারান্দা ধরে হেঁটে হেঁটে ডানদিক বাঁদিক ঘুরে অবশেষে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে পৌঁছলাম।
বেশ বড় ঘরে প্রথমেই যেটা চোখে পড়বে সেটা হল  উল্টোদিকের দেয়াল জুড়ে একটা বিরাট কাঁচের জানলা। জানলা না বলে কাঁচের দেয়াল বলাই ভাল। আর জানলার ওপাশেই এক টুকরো জঙ্গল। যদিও পরে জেনেছিলাম ওটা হোটেলের বাউন্ডারি ওয়ালের মধ্যেই, তবু তাতে ওই জঙ্গলের অনুভূতিটা যায় না। আর এটা আরো বেশী করে বুঝলাম রাতে খেয়ে ফেরার সময়।
দুপুরে সাদা ভাতের সঙ্গে উত্তর ভারতীয় আমিষ ও নিরামিষ খাবার ছিল। সঙ্গে রায়তা। সেটা গরমের কারণেই। রাতে মিলল রুটি/ভাত, কষা আলুরদম, পনির বাটার মসালা আর আমিষে চিকেন কষা। সঙ্গে পায়েস, যাকে ওরা ক্ষীর বলে। তবে বাঙালী পায়েসের মতো অত মিষ্টি নয়। এলাহি খাওয়াদাওয়া সেরে যখন বারান্দা ধরে হেঁটে আসছি তখন টিমটিমে আলোয় আসেপাশের গাছগুলোকে দেখে কেমন একটা গা ছমছম করে উঠলো। সঙ্গে দূর থেকে ভেসে এলো কোন এক অজানা জন্তুর ডাক। মনে হলো এক ছুটে ঘরে চলে যাই। সারাদিন অত গরম থাকা সত্বেও রাতে জঙ্গলের ভেতরে কিন্তু কেমন একটা হাল্কা শিরশিরে হাওয়া দেয়। এখানে রাতের খাওয়াদাওয়া সারা হয় খুব তাড়াতাড়ি। কেননা ভোরে সাফারি যাবার জন্য উঠতে হয় বোর্ডারদের। আমরাও তাই প্রায় কলকাতার “ভর সন্ধ্যেবেলায় ”, মানে ন’টার সময় ডিনার সেরে গুটিগুটি ঘরের দিকে এগোলাম। পরেরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় সাফারি শুরু।   

  
গরম যতই প্রবল হোক জুন মাসের ভোরেও জঙ্গলে হালকা একটা ঠাণ্ডা ভাব থাকে। দু’দিন থাকবো আমরা। সেই দু’দিনের তিন বেলাই সাফারি বুক করা রয়েছে। বান্ধবগড়ের জঙ্গলকে তিনটে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, টালা, মগধি ও খিটৌলি। এর মধ্যে আবার সাব জোন আছে। প্রত্যেক জিপসিকে নির্দিষ্ট সাবজোন দিয়ে দেওয়া হয়। তার বাইরে তারা যেতে পারে না। প্রথম দিনে আমরা টালা জোনের টিকিট কেটেছিলাম। টালা হলো জঙ্গলের মূল অংশ। যদিও কোর এরিয়ায় সাধারণ পর্যটকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না, তবু বাঘের সাইটিং-এর জন্য টালা জোন বিখ্যাত। হুডখোলা জিপসি করে জঙ্গলের রাস্তায় যেতে যেতে হরিণ, বুনো শুয়োর, বনবিড়াল, ময়ূর, নানারকম পাখি দেখে ফেললাম কিন্তু তেনার আর দেখা নেই। পায়ের ছাপ দেখা গেল অনেক জায়গায়। সেই ছাপ ফলো করে গিয়েও কিছু মিললো না। এখানে এসে একটা জিনিস জানলাম যে বাঘকে হিন্দীতে কিন্তু বাঘই বলে। আমরা অনেকেই জানি বাঘ হলো শের। কিন্তু গাইড ভদ্রলোক জানালেন শের হলো সিংহ আর বাঘ হলো বাঘ।
জানোয়ারের খোঁজে এসে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম সেটা আগে বলি। চলতে চলতে এক জায়গায় পৌঁছে কেমন যেন অন্যরকম লাগল। এত খালি খালি কেন ? অনেকটা জায়গা জুড়ে কেমন যেন শুকনো বর্ণহীন বনভূমি, আর অস্বাভাবিক নিঝুম একটা ভাব। এতক্ষণ পাখির ডাক, বাঁদরের আওয়াজ কানে আসছিল। এখানে সেসব কিছুই নেই। চমকে তাকিয়ে দেখলাম পরপর সারি দিয়ে গাছেদের মৃতদেহ দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু কাণ্ডটাই রয়েছে কালো হয়ে, ওপরের অংশ পুরোটাই জ্বলে শেষ হয়ে গিয়েছে। গাইড বললেন প্রতিবছর ফরেস্ট ফায়ারে জঙ্গলের একটা অংশ এভাবে পুড়ে যায়। গরম আর শুকনো হাওয়ায় নাকি আপনিই জঙ্গলে আগুন ধরে যায়, আর তারপর তা ছড়িয়ে যায় মাইলের পর মাইল জুড়ে। ওদের কাছে বোধহয় খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, আমার কিন্তু ভয়ঙ্কর লাগলো দেখতে। প্রকৃতি এমন নিষ্ঠুর কেন ? এত এত পূর্ণবয়স্ক প্রাণকে এভাবে অকারণে নষ্ট করে কেন ? কেমন যেন একটা মৃতনগরী হয়ে রয়েছে জায়গাটা। একটাও আওয়াজ নেই। গাইড বললেন এদিকে কোন জানোয়ারও পারতপক্ষে আসে না। প্রায় এক দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে চললো পোড়া গাছেদের সেই অসহনীয় দৃশ্য। শেষে গিয়ে এক জায়গায় গাইড দেখালেন রাস্তা কাটা রয়েছে। বেশ কিছুটা জ্বালাবার পর যখন আগুনের তেজ একটু কমে তখন এভাবে রাস্তার মধ্যে পরিখা কেটে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আরও একটা অদ্ভুত কথা বললেন তিনি। বোধহয় আমাদের মুখ দেখে বুঝেছিলেন এত পোড়া গাছ দেখে আমাদের মনের অবস্থা কি, বললেন, ‘ফরেস্ট ফায়ার কিন্তু একদিকে জঙ্গলের ভাল করে। আগুন লাগলে পুরনো শুকনো গাছ মরে গিয়ে জঙ্গল নতুন হয়। কোন বছর যদি আগুন না লাগে তাহলে জঙ্গলের সবুজ ভাব কমে যায়।’ সত্যি ! কি অদ্ভুত নিয়ম পৃথিবীর, আগুনে পুড়ে সবকিছু শুদ্ধ হয়, এমন কি নতুন প্রাণের জন্মও হয়।
সাড়ে পাঁচটায় শুরু করে মাঝে দশ মিনিটের ব্রেক নিয়ে সাড়ে আটটা অবধি ঘুরেও বড়মিঞার দেখা পাওয়া গেল না। সবাই যখন হতাশ হয়ে পড়েছি, ক্যামেরা আর দুরবীনগুলো যখন হলুদ কালো খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত তখন একটা কাণ্ড ঘটলো। জঙ্গলের রাস্তা খুব এবড়োখেবড়ো, সাধারণ গাড়ী সেখানে চলতে পারবে না। জিপসিতে বসে যেভাবে আমরা আন্দোলিত হচ্ছিলাম তাতে নিজেদের টিনের ভেতর ঝাঁকিয়ে দেওয়া মুড়ির মত মনে হচ্ছিল। অনেক খাল বিল পেরিয়ে, গাছের ডালের ওপর নাচতে নাচতে যাবার পর একটা জায়গা এলো যেরকম জায়গা আমি সেদিন সকাল থেকে আর দেখিনি। একটা খোলা চত্ত্বর, তিনদিকে তিনটে রাস্তা গিয়ছে। ডানদিকে দূরে একটা ন্যাড়া টিলা, সেখানে ছোট বড় পাথরে ভর্তি। আর বাঁদিক ঘেঁষে গাছের সারি গিয়েছে। গাছের সারির পিছনে দেখা যাচ্ছে একটা খাদের ওপারে একটা গুহার মুখ। আকাশ তখন একটু মেঘলা। সকাল থেকে একটানা আগুন ঝরিয়ে আমাদের যেন কিছুক্ষণের জন্য ওয়াক ওভার দিয়েছেন সূর্যদেব। একটা অদ্ভুত ডাক শোনা যাচ্ছিল এদিক থেকে, সেই শুনেই ড্রাইভার এদিকে এসেছে। ডাকটা আসছে ডানদিকের টিলার ওপর থেকে। ডাকটা কোন চেনা পশুর নয়। অনেকটা মানুষের বাচ্চা যেভাবে প্রথম মুখ দিয়ে অর্থহীন আওয়াজে ডাকে সেরকম। এক নাগাড়ে সেটা হয়ে চলেছে। আর কোন আওয়াজ নেই কোথাও। গাছের পাতাও যেন থেমে গেছে। কেমন একটা বুক খালি করা ডাকটা যেন। আমাদের জিপসিটা থেমে গেল একপাশে। গাইড কোন কথা বলছে না, ইশারায় আমাদের চুপ করে থাকতে বলে কি যেন শোনার চেষ্টা করছে। হঠাৎ একটা বার্কিং ডিয়ারের ডাক চারদিকের নিস্তব্ধতাকে খানখান করে দিল যেন। আমাদের গাইড এবার মুখ খুললেন। বললেন এই ডাকটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন উনি। ‘এতক্ষণ যে ডাকটা শুনছিলেন ওটা বাঘের ছানার ডাক। কিছুদিন আগে এখানে তিনটে বাচ্চা দিয়েছে বাঘিনী। এখানে মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা একা রয়ে গেছে। সেটাই মাকে ডাকছে। ওর ডাকে ওর মা আসবেই। বাচ্চাকে ছেড়ে খুব দূরে যায় না। এটাও কাছাকাছি কোথাও রয়েছে। এখন বার্কিং ডিয়ার ডাকছে মানে ছানার ডাক শুনে মা এদিকেই আসছে।’ আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও আর কোন ডাক শোনা গেল না। আমাদের জিপসিটা একটু এগিয়ে গেল যেদিক থেকে বার্কিং ডিয়ারের ডাকটা এসেছিল। একটা গোল চক্কর ঘুরে এসে যখন হতাশ আমরা আগের জায়গাটায় আবার ফিরে এলাম তখন সেখানে আর একটা জিপসি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের গাইড বললো বার্কিং ডিয়ারের ডাকটা পাশে চলে গেছে। তার মানে এই রাস্তায় বাঘ আসবে না। দুই ড্রাইভারে কি যেন ঠিক করে নিয়ে যে রাস্তা দিয়ে আগে আমরা এসেছিলাম সেদিকে রওনা দিল। বেশ কিছুটা ঘুরে একটা ঝোপ জঙ্গল মতো জায়গায় আমরা এসে পড়লাম। বোঝা গেল এটা ওই টিলাটার পিছনের দিক। এখান থেকে টিলাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। একগাদা ঝোপে ঢেকে রয়েছে জায়গাটা। টিলার সামনের দিকটা যেমন ন্যাড়া এদিকটায় আবার তেমনি জঙ্গল। আবার বার্কিং ডিয়ারের ডাকটা শোনা গেল। এবার আর একটু কাছ থেকে। সঙ্গে বাঁদরের ডাকো। এদিকে আবার সেই বাচ্চাটা দুবার ডেকে উঠলো। গাইড বলে দিয়েছিল বলেই কিনা জানি না এবার কেমন যেন মনে হলো স্পষ্ট শুনলাম ডাকটার সঙ্গে আমাদের ‘মা” ডাকের খুব মিল আছে। এবার গাইডের নির্দেশ অনুযায়ী দূরে এক জায়গায় চোখ রাখতেই বুঝলাম ঝোপগুলো দুলছে। সেখান দিয়েই আবির্ভূত হলেন তিনি। চকচকে হলুদ কালোর চলমান গোলা নিঃশব্দে ঝোপের পাশ দিয়ে ঢুকে ধীরে ধীরে টিলার ওপরে উঠে একটা পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাচ্চার ডাকে সাড়া দিতে এক মায়ের ব্যস্ততা দেখলাম।
সেদিন সময় শেষ হয়েই এসেছিল, তাই ফেরার পথে পা বাড়ালাম আমরা। সেদিন বিকেলে মগধি জোনে ও পরেরদিন টালাতে আবার এসেও আর তেনাদের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে তাতে জঙ্গল দেখার মজা কিছুমাত্র কমে যায়নি। প্রচণ্ড দাবদাহ সহ্য করে আড়াই দিন কাটিয়ে যখন ফেরার ট্রেনে উঠলাম তখন আমাদের মন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রকৃতি যে এই চরম গ্রীষ্মের নির্মম রোদে আমাদের জন্য এতরকম চমক সাজিয়ে রেখেছে তা সত্যিই আমরা ভাবতে পারিনি। আবার কোন এক গ্রীষ্মে চলে আসবো ওদের সঙ্গে দেখা করতে। তখন হয়তো এই ছানাটাই একটা বড়সড় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হয়ে দর্শন দেবে আমাদের।
 


২টি মন্তব্য: