মা
মা এক অক্ষরের একটি শব্দ কিন্তু তাৎপর্য ব্যাপক। জগতে মায়ের সাথেই অন্য কেউ তুলনীয় নয়। মা একটি প্রিয় ও মূল্যবান শব্দ, একটিই এবং একটিই মাত্র। শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন - মা, প্রিয় অনুভূতি - মা, প্রিয় আদর - মা ইত্যাদি সব প্রিয় শব্দগুলোই শুধুমাত্র মা-কে কেন্দ্র করেই সব প্রিয় স্মৃতি। কারণ পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা নিঃশর্ত ভালবাসা দিয়েই যায় তার সন্তানকে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া। তাই তো কবি বলেছেন ---
মায়ের করুণা সে তো অকূল অপার
গোষ্পদে বিম্বিত যথা অনন্ত আকাশ।
মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ করেন, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন। তিনি এক অর্থে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন এবং এইরূপে মা সর্বত্র পরিচিত। মা একটি প্রচণ্ড আকর্ষণীয় স্নেহময়ী ও আবেগময় শব্দ। গর্ভজাত হোক বা দত্তকই হোক সেখানে মা মানেই একটি মায়াবী স্নেহময়ী অবস্থান।
ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা অতি মূল্যবান হয়ে থাকে। শুধু মানুষ কেন? পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। সে ঋণ অপরিশোধিত। মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ীর সম্পর্ক, যা একটু আঘাত লাগলেই প্রতিটি মানুষ 'মা' বলে চিৎকার দিয়ে জানান দিয়ে থাকে। মা-এর ত্যাগের তুলনা হয় না। জগতে একমাত্র 'মা'-এর কোন প্রতিশব্দ নেই। মা- মা-ই। সূর্য যেমন অনন্তকাল পৃথিবীতে আলো ছড়ায়, তেমনি মায়ের মমতা ছেয়ে থাকে সমগ্ৰ বিশ্বময়। মায়ের শূন্যতা কিছুতেই পূরণ হবার নয়।
সন্তানেরা মায়ের সাথে অসদাচরণ করলেও মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না। এটা শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যই নয়।
মা-এর এই যে ধারণা (concept) তার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে সাহিত্যিকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। মা-কে নিয়ে সাহিত্য, গান, গল্প, কবিতা রচনা হয়েছে।
ম্যাক্সিম গোর্কির উপন্যাস 'মা' বিশ্বসাহিত্যে সবচেয়ে পঠিত উপন্যাস। এ উপন্যাসে মা হয়ে ওঠেন নির্যাতিত মানুষের বাঁচার এক আশ্রয়স্থল। সর্বজনীন মা হয়ে ওঠেন তিনি। বাংলা সাহিত্যেও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে শ্যামা - মায়ের চরিত্রে। সে যতটা না মা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত তার চেয়ে ঢের বেশি জননী। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালি' উপন্যাসে একটি মনে রাখার মত চরিত্র হলো 'সর্বজয়া'। আবার গর্ভধারিনী মায়ের চেয়ে পালিত মায়ের স্নেহ-মায়া-মমতা কোনো অংশে কম নয়, যা দেখা যায় অনুরূপা দেবীর 'মা' উপন্যাসে।
মা-কে নিয়ে অনেক গানও বাংলায় রচনা হয়েছে। একটা উদাহরণ হিসাবে বলা যায়--
'ও তোতা পাখীরে, শিকল খুলে উড়িয়ে দেব
মাকে যদি এনে দাও..'
সেরকম অনেক কবিতা রচনা হয়েছে মা-কে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথের 'বীরপুরুষ' কবিতাটি সেরকম একটি।
পরিবারে মা-কে সম্মান জানাতে, এবং মাতৃত্ব ও জননী হিসাবে মায়ের বন্ধন (maternal bonds) ও সমাজের প্রতি মায়ের প্রভাব (Influence of mother in society) এ সবের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বে 'মা-দিবস' (Mother's Day) উদযাপন এর ঘোষণা দেওয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ৮ই মে মার্কিন কংগ্ৰেসে। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার 'মা-দিবস'(Mother's Day) হিসাবে সারা বিশ্বে পালিত হয়।
সনাতন হিন্দু ধর্মে উল্লেখ আছে --"স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য...." আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণী মূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষা করেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মা'কে গৃহলক্ষী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাব--
"উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচার্য্যানাং শতং পিতা।সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।" [মনু,২/১৪৫]
অর্থাৎ " দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যের গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যের গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর, সর্বোপরি সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মার্নাহ।"
কি সুন্দর লিখেছেন দাদা
উত্তরমুছুন