আমাদের এই সপ্তাহের কবি শীর্ষা মণ্ডল ৷জন্ম বীরভূমে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলজিতে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে একটি কলেজের অধ্যাপিকা। শখ কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়া এবং টুকটাক লেখা। লেখালিখির সূচনা স্কুলজীবনের সাহিত্যসভা থেকে। একমাত্র বই 'তারাফুলের শবযাত্রা' (২০২০)।
উদযাপন এবং বেহালা
১
রঙ উঠে যায় বিকেলের জামার,
ফিকে হয়ে আসে মাঠের ওপর
গা-গড়ানো আলস্য রোদ,
বেলফুলের সাদাটুকু সক্রিয় হয়ে ওঠে –
অদৃশ্য মাদকতা দিয়ে আলোর
অভাব মুছবে বলে
২
মধ্যযামের কথা পশুর স্মরণশক্তি মাত্র।
কিংবা মধ্যযাম নিজেই পশুটির ছিন্নমস্তা দাঁত –
অদ্ভুত অলৌকিক দিয়ে প্রতিটি শব্দকে যে
কিনে ফেলতে পারে অনায়াসে
৩
প্রতিটি ছেদ-পরবর্তী গোঙানি শুনেছিল বেলফুল,
বেলফুলে বসা ভ্রমর তার গুনগুন দিয়ে ঐকান্তিক কথা
চালান করেছিল সাদা পাপড়ির কানের মমতায় — বলিপ্রথা সাঙ্গ হলে
মমতার সাদা তাই নিজে থেকে
কাঁধে তুলে নিল মৃতকে সাজানোর
অভিযান।
৪
রঙ উঠে যায় রাত্রির অন্তর্বাসের
কালোর পোঁচ জলধোওয়া হতে হতে
সাদাকে ডেকে আনে –
চড়ুইয়ের ফুড়ুৎ ওড়ে, রান্নাঘরে
ফুট-ফুট চা পাতার গান বেজে ওঠে – যেন কিছুই হয়নি!
যেন চা গাছ আর মানবী একটিই শব্দ –
মৃত্যুর ঘুমহীন উদযাপনকে প্রতিদিন
বেহালা বাজিয়ে শোনানোর গুরুদায়িত্ব নিয়েছে
অস্থির-বাস
*
অসহ্য বিকেল
ঝাড়ুদার বিকেল
জংধরা বিকেল
সন্ধ্যাহীন
না-
ফুরোনো
বিকেল
এমন একটা বিকেলের জন্য
আমি মন্দিরে রোজ
ঘুষ দিতে যাই
*
পেরেকের বর্ম পরে পার হয়ে গেল শীতকাল
ঠুঁটো শীতকাল, জগন্নাথ শীতকাল – জানতেই পারল না অজস্র
চোখহারানোর অন্ধত্বে গাছ কেমন ছটফট করে মরে রাতদিন,
ব্যথার আলজিভে চুমু খায় –
দুটি পাখি তার শরীরে এসে ঘর করবে বলে
*
পৌনে চারটের কাঁটায় গুছিয়ে রেখেছি
দেখা করা –
এভাবে আমি তোমাকে নয়
প্রেমকে নয়
অভ্যাসকেও নয়,
শুধু মহাকালের কাছেই নতশির
জমা রেখেছি – ঋজুতা
*
তুমি কি পারবে তেত্রিশ কোটি মুখের ভাঁজওলা প্রান্তর
পেরিয়ে আসতে, আমার গলা যদি ডাকহরকরা সেজে ওঠে?
যেখানে ডাহুকের দুঃখ ঘুমিয়ে থাকে জীবনান্দের মৃত পাতায়,
সেইখানে বসে কুব কুব করে গান বেঁধে দিতে পারবে, স্বরলিপি ছাড়াই?
কিংবা ফল্গুনদীর ঢেউ দিয়ে একটা সোনালী মাছের চোখ এঁকে দিতে?
যার উজ্জ্বল মণিতে অর্জুনের পেশীসৌষ্ঠব আঁকা?
এটুকুও না পারলে আর কেঁদো না তুমি সারা রাত,
বরং একটা মহাকালের একক কান্নার পদ্য লিখে নামশূন্য লেফাফায়
পাঠিয়ে দিও আমাকে
*
চাঁদের সাদা মুগ্ধ করেছিল আমাদের।
জল দিয়ে, নুন দিয়ে গড়া মই দেখাল
সুদৃশ্য শ্যাওলা কতখানি বেকুব বানাতে পারে –
ঘরবাড়ির অশরীরী কালো ছায়ার মতো
সুন্দর লেখা 🙂
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ গো ❤️❤️
মুছুনভালো কবিতা।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ দিদি ❤️❤️
মুছুনভালো লাগল ।
উত্তরমুছুন