রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

দেবযানী বিশ্বাস


পূজানীয়া
 মা
তোমার চোখে জল কেন, মা? বাবা বকেছে? দাদু তেড়ে এসেছে খড়ম তুলে? তুমি আজ পেরেছ পালাতে? তোমার পায়ে জড়িয়ে যায় নি তো শাড়ির পাড়? গিঁট বেঁধেছ মনে করে? 

মা, আজ শুয়ে শুয়ে কেবল তোমার কান্নার প্রায় নি:শব্দ বুক চেরা আওয়াজ পাচ্ছি কেন? আমার যে খুব বুকে ব্যথা করছে। গা টা আজ খুব গরম আমার। চোখের গরম জল গড়াচ্ছে, তুমি একটু হাত বুলাবে কপালে?  

দেখেছ মা, আমি কত্তখানি স্বার্থপর!  তোমার কান্না মোছাতে পারলাম না বাইশ বছরেও, অথচ নিজের তিন বছরের প্রতিটা কান্নায় তোমাকে খুঁজি। মা, প্রতাপ আমায় বড্ড বেশি ভালবাসে। অমন ভালবাসা যে আমি চাই নি গো। আমাকে বাইরের কারো সাথে কথা বলতে দেয় না, বলে, ওরা তোকে বিগড়ে দেবে, তুই নষ্ট হয়ে যাবি। আমার রান্না করা শিষ পালং এর ঝোল পাপিয়াকে লুকিয়ে খেতে দিয়েছিলাম বলে হাতে গরম সাড়াশির ছ্যাঁকা দিয়ে দিল। 

মা, জান, আমি এখানে ভাইদাদার সাথে লুকিয়ে বন্ধুত্ব করেছি। ওই চিলেকোঠার ঘরে পূবের জানালার দিকে তাকিয়ে এক মনে বসে থাকে আর কি যেন আঁকে। আমি জামাকাপড় মেলতে উঠলে জানালায় এসে  আমার দিকে তাকিয়ে হাসে, হাত নাড়িয়ে ডাকে। কিন্তু ও ঘরের শিকলি যে আমার খোলা বারণ! আমি জানালার শিক ধরে দাঁড়ালে ভাইদাদা হেসে বলে, এই পাগলখানা থেকে আমায় বার করে নিয়ে যাবি? ওই দূরের মাঠে ছুটবি আমার সাথে? পালাবি ওই রামধনু রঙা দিগন্তে, দুই ভাই বোনে? 

মা, ভাইদাদা তো পাগল নয়। ও কি সুন্দর ছবি আঁকে। কখনো এক খানা জল ভরা চোখ, কখনো হাতটা উঁচু করে হাওয়ায় আঁচল মেলে এক মেয়ে, কখনো লম্বা বিনুনীতে ফিতে বাঁধে কেউ। জান, ও বাড়ির পাপিয়া বলেছে ওই ছবির মেয়েটা নাকি ভাইদাদার ভালবাসা করে বিয়ে করা  বউ ছিল, অল্পদিন বাদেই ওকে নাকি মেরেছিল ওরা- সেই থেকে, সেই থেকে ভাইদাদা পাগল হয়ে গেছে। 

মা, ওরা কি আমাকেও? ছি ছি! কি সব যে বলছি তোমায়। ভয় পেও না, মা। আমি তো শিখে নিয়েছি তোমার থেকে, কেমন করে বেঁচে থাকতে হয়। মা, নিশীথ মামা আসে? এখনও শোনায় তোমাকে নতুন জীবনের গল্প? একদিন দাদু মারতে এলে অনেক খানি দূরে পালিয়ে যেও মা। আর তো আমি তোমার পিছুটান নই। চলে যেও সেই নদীর ধারে, যেখানে কলাপাতায় ছাওয়া ভালবাসার কুটীর, খোলা দাওয়া, মাথার উপর সন্ধ্যাতারা।


ইতি
দেবী

1 টি মন্তব্য: