রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

সুতপা সরকার





যত্নআত্তি 
 

আরে খা! রোজ এক কথা বলতে হয় কেন রে? 

বিচ্ছিরি!

কিসের বিচ্ছিরি? এক গ্লাস জল, কি সুন্দর লেবুর গন্ধ, ঢকঢক করে খেয়ে নিবি, তা নয়। সবাই খাচ্ছে সকালে, তোর যত বায়না! 

মাকে থামানো যাবে না জেনে রনি ঢকঢক করেই গিলে ফেললো ঈষদুষ্ণ গরম জলটুকু। এই করোনার জ্বালায় আর কত কি যে সহ্য করতে হবে কে জানে!

ডিমটা খেলে না? 

আরে সকালে এত খাওয়া যায়? দই, শশা, ছোলা ভেজানো! সব খেলাম তো। বিকেলে খাবো, রেখে দাও।

বিকেলেরটা বিকেলে খাবে। এখনকারটা খাও। খাও বলছি! তুমিও কি রনির মত অবুঝ! ভালোবেসে তো মায়ের থেকে সুগার নিয়ে বসে আছো। এখন ইমিউনিটিটা না বাড়ালে চলবে? 

ধুররর্, খালি এক কথা! দাও দাও, একটু মরিচগুঁড়ো দিয়ে দাও। বেজার মুখে শিবেন ডিমটা খেয়ে ওঠে।

রোজ কেন ছানা দাও বৌমা। অ্যাসিড হয় আমার!

ছানাতে অ্যাসিড হয়? আমাকে বোকা ভাবছো? দুধ খাবে না, হজম হয়না, দইতে অ্যাসিডিটি। এখন ছানাটুকুও বাদ দিতে চাও। দেখছো না, টিভিতে পেপারে কতবার বলছে, বয়স্ক মানুষরা সাবধানে থাকবেন। ভালো করে বেশি বেশি খাওয়া দাওয়া করবেন...

হুঃ! এক পা ঘর থেকে বেরতে দিচ্ছো না! কি করে বেশি বেশি খাবার হজম হবে বলো তো? শিবেনের বাবা বকবক করতে করতেই ছানাটা খেতে থাকেন। শিবেনের মা চুপ করে দেখেন। নিজের টুকু খেয়ে নিয়েছেন আগেই। ছানা দুধ দইতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু মাছ! উফ্, দুপুরে বৌমা মাছটা খাইয়েই ছাড়বে। এই ছাতার মাথা করোনা না ধরোনা কি যে এক রোগ এসেছে!

কাশছো কেন? মাঝরাতে বিছানায় উঠে বসে শিবেন। রমা অনেকক্ষন ধরে খুক্ খুক্ করছে আর এপাশ ওপাশ করছে। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গিয়ে চমকে ওঠে, একি জ্বর তো তোমার!

সকাল থেকে যেন যুদ্ধ চললো। আজন্মকাল পাশাপাশি বসত। রনির সাথে একই স্কুলে পড়ে। পাড়ার ক্লাবে একসাথে আড্ডা শিবেনের সাথে। শিবেনের মায়ের হাতের মুড়িঘন্ট চেয়ে খেয়েছেন কতজন। তারা সবাই বদলে গেলেন? এতটাই বদলে গেলেন? কতবার করে সবাইকে অনুনয় করলো শিবেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুক রমা। জ্বর আর কাশি ছাড়া অন্য সমস্যা নেই। ডাক্তার ফোনেই মেডিসিন দিয়েছেন। বাড়িতে থাকলে শিবেনই যত্নআত্তি করে ওষুধ পথ্য খাওয়াতে পারবে। হাসপাতালের যা হাল, সেখানে থাকতে পারবে না রমা! রমাও যেতে চায়নি। কি কান্নাই না কাঁদলো! অথচ কেউ শুনলেনই না। থানায় ফোন করে, অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে পাঠিয়েই ছাড়লেন! 

ক্লান্ত বিধস্ত শিবেনের পাশে এসে বসে রনি। প্লেটে করে দুপিস সেঁকা পাউরুটি এনে দেন শিবেনের মা। প্লেটের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে ফেলে রনি। 

মা কি লেবুর জল খেতো বাবা? তুমি দেখেছো কখনও খেতে? কখনও বলেছো দুধ দই খেতে? ডিমে এলার্জি আছে মার, মাছ মাংস কি বেশি খেত কখনও! দেখেছো তুমি ঠাম্মা? আমরা কখনও বলেছি মাকে, ইমিউনিটি তোমারও বাড়াতে হবে মা! যত্নআত্তি কেবল করারই কথা মায়ের, পাওয়ার কথা নয়? আমরা কি করেছি বাবা? কতটুকু করেছি!


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন