রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

সোহম চক্রবর্তী


'মা' বিষয়ক তিনটি কবিতা
***
উইল
সোহম চক্রবর্তী

আমার স্বরবৃত্তের লেখাটি সবুজ, ছটফটে
ফড়িংশিশুর মতো উড়ে যায় ফুল থেকে ফুলে –
সেইসব ফুল আমি তুলে রেখে দিই;
যদি কোনোদিনও প্রেম-টেম হয়,
ব্যক্তিগত নারীর খোঁপা যত্নে সাজাবো।

আমার মাত্রাবৃত্তের লেখাটি টুয়েলভ্-পাশের সাইকেল,
বাউণ্ডুলে বিকেলগুলোয় দিগ্বিদিক ছোটে –
তার সব অলিগলি আমার এই করতলে আঁকি;
যদি কোনোদিনও ছেলেমেয়ে হয়,
আশীর্বাদে দিয়ে যাব ভবঘুরে এই মফস্বল।

আমার গদ্যকবিতাটি সাফ সাফ বলে দিয়েছে
আর কোনও নিয়ম মানবে না – কেননা
দিন বদলাতে গেলে স্বভাবত অনিয়ম হয়;
কোনোদিনও বলব না ওকে, ‘বাড়ি এসো –
চাকরিবাকরি ক’রে একটু তো সংসারী হও’...

স্বরবৃত্তের মতো ছটফটে নয়,
মাত্রাবৃত্তের মতো বাউণ্ডুলে নয়,
গদ্যকবিতার মতো বেহিসেবি নয়,
আমার অক্ষরবৃত্তের লেখাটি প্রাজ্ঞ ও ঋজু;
বাড়িতে শান্তি নেই, সংসারে বহু জটিলতা –
বহু ভার কাঁধে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটে...
তার সব বলিরেখা, কপালের ভাঁজ,
চোখের নীচে কালি, অসময়ে পাক-ধরা চুল

ব্যক্তিগত নারী নয়,
স্নেহের সন্ততি নয়,
বিপ্লবী পতাকাও নয়,

তোমাকেই আমি দিয়ে যাই, মা গো!
***
অশান্তি
সোহম চক্রবর্তী

বাবার সাথে মায়ের তুমুল অশান্তি হয়।
বাজারথলি, ঘামফতুয়া, ব্যাঙ্কের বই –
তোলপাড় সব, কারোর কিছু ভাল্লাগেনা...
ছলকে ওঠে রাগের বহর চায়ের কাপে;
বন্ধ কথা, চুপচাপ ঝিম সন্ধে হলে
বাথরুমে যায় বাবার গলা, রবীন্দ্রগান –
ডাঁই ফাইলের মধ্যে গোঁজা কোন্ সে চিঠি
বের করে মা আলতো হেসে চুল বেঁধে নেয়...
‘দ্যাখ তো বাবু, আজ কী খাবে, লিকার না দুধ’
এ ঘর থেকে ও ঘরে যায় খুনসুটিরাগ –
তারপর সব মান অভিমান এক টেবিলে
গান হয়ে যায়, এমনতরো অশান্তি সব
তোমায় ভেবে জমিয়ে রাখি, হে প্রেমিকা।    
***
পঁচিশে বৈশাখ
সোহম চক্রবর্তী

বাবা ও আমার মাঝখানে ব’সে
গান গাইছেন জর্জ বিশ্বাস।

আশির দশকে বাবার কলেজ,
আশির দশকে বাবা আমার মতো বড়ো;

গান গাইছেন জর্জ বিশ্বাস –

এপার থেকে বাইশ বছরের আমি
দেখতে পাচ্ছি, ওপার থেকে আশির দশকের বাবা
ঠায় দেখছেন পঁয়ত্রিশ বছর পরের আমায়;
কথা-কাটাকাটি হ’লে বলছেন, বুঝবি বুঝবি,
আরেকটু বয়স হোক...

গান গাইছেন জর্জ বিশ্বাস –

গান গাইছে বাবার কলেজ, গান গাইছে
একুশ শতক, আমার ওই না-হওয়া বয়েস
গান গাইছে; আমাদের কেটে যাওয়া কথা
ভেসে যাচ্ছে মুহুর্মুহু গানে...

আশির দশকের বাবা কি গেয়েছিল এমনই কোনও গান?
এমনই কোনও গান গাইতে গাইতে
আমারও কি কেটে যাবে আরও আরও পঁয়ত্রিশ বছর?
না-হওয়া ওই একটু বয়সের পর
আমিও কি খুঁজে পাব চিঠি? – ধুলো-ধুলো, ভুলে যাওয়া কতকাল...
অমন গানের গলা – সবটুকু গেছে, অমন লেখার হাত,
দিনে দিনে চ’লে গেছে তা-ও...

বাবা ও আমার মাঝখানে ব’সে
গান গাইছেন জর্জ বিশ্বাস;

মা পড়ছেন চিঠি – আমার জন্মের চেয়েও প্রাচীন, কোঁচকানো
সম্বোধনে লেখা ‘চিরসখা হে’... যেন কিছুই
ফুরিয়ে যায়নি, এই কথা তোমাকে বলতে গিয়েও মনে হয়, থাক্!

বাবা ও আমার মাঝখানে ব’সে
গান গায় পঁচিশে বৈশাখ।    
***


1 টি মন্তব্য: