রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০

সৌরভ বর্ধন

                               

সৃজন এই সপ্তাহের  কবি সৌরভ বর্ধন। কবি ও গদ্যকার। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার শান্তিপুরে জন্ম। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'নিজস্ব প্রতিবেদন'। এছাড়াও 'জলবিভাজিকা' (২০১৮) এবং 'স্তন ও হৃৎপিণ্ড' (২০১৯)। সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ 'প্রসূতিকালীন পাঠ' ২০২০ সালের বইমেলায় 'কবিতা পাক্ষিক' থেকে প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্টেড পত্রিকায় অনিয়মিত লেখেন। লেখায় চৈতন্যপ্রাপ্তিই হলো তার উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

সৌরভ বর্ধন -এর কবিতা

মোক্ষ পর্ব

১.

শূন্য দশকের শেষ পরচুলা রঙা পাগড়ি বেঁধে
বৃত্তের পরিধি ধূমকেতু দিয়ে মাপি আমি, 
কাজ করে কোরিওলিস বল...
মেরুপ্রভায় বদল করি মনুমেন্ট, ম্যানসন
ছায়ামূর্তির মতো লোমকূপ ঘিরে তখন
ঘোটকী-পুরাণ-কাহীনি লেখে ফুল
পীতবর্ণের বিমূঢ়তা ভরা বালার্ক কবিতাগুচ্ছ!

রগভাঙা নাভিতে চেপে 
উঠে এসো ছাদের কার্নিশ
ফিরে এসো আঁকাবাঁকা ঋতুচাষ 
 -----  এ রক্তের গ্লোবিউলিন
হিম হয়ে আছে বিবাহিত গাছের পুরনো হাড়ে


২.

প্রথম যেদিন জরায়ুজ লিংক ফেলিওর গ্যাছে 
অশ্বক্ষমতার অতল গ্যাস উল্কাপাতে...
বালিবালি-ভাব মেদিনী থেকে সোজা ফেসবুক
জোড়া শৈশব  পোস্টিয়ে দাও সূর্যের ছাইয়ে

তিন রকমের বৃষ্টিপাত : এটুকুই সম্বল (?)

নিশাচর নেটিভ যারা তাদের মাথায়
ছেঁড়া সাইটোপ্লাজম ছোঁবে নয়জন রত্নাকর, রক্তে
জিলেটিন মাখা নাকের ছিদ্র, ভগ্ন বগল আর নয়
পত্তন হবে একরাশ মিস্তিরি গাঁথা বাড়িঘর


৩.

অর্ধেক পৃথিবী আর অর্ধেক আকাশ 
মেট্রোসিটির টানেলে
তমসার বুকের মাংস চোষে, কাপকাঠি বদল হয়
মহাপয়ারের মধ্যরাতে : সাবোধান!    সাবোধান!
ব্যস্ত অক্ষর, ব্যস্ত রং --- তুমি গুনতে যেও না পা
শুধু বেওয়ারিশি কিছু বিন্দু লিখে রাখো
হালখাতা --- দেরিপথ --- মুচলেকায়
পাঁজরে পাঁজরে ধ্বংস জড়িয়ে স্ফীত হয়ে যাক চুম।
গোস্পদে বিম্বিত বিশ্ব!   সর্বজন হিতায়! 

তথাপি রাস্তায় ভীষন যানজট, হাত ধরো ----
এমনভাবে ধরে থাকো যেন
তোমার তেষ্টায় আমি আকন্ঠ হয়ে যাই...


৪.

নিহত স্নানের গলায় ক্ষুর বেঁধে
ফেড়ে ফ্যালো স্বপ্নের চুল জান্তব অজুহাতে
সূর্যের দৈনিক আপাতগতি একটু ধীর   ধীর! 

বইয়ের তাকে হাঁ করা
দীর্ঘ অনিশ্চয়তার ঘাড় ধরে
উৎপাটনের খেলা লোমকূপে
শ্যামলা গায়ের আগানেবাগানে ভার্চুয়ালিটি
আমি আর ঝুলে থাকতে পারছি   
---- অব্যক্ত ছায়ারেখা বরাবর  -----  শুক্তির মতো
চুলের কথা, গর্তের সাপ, প্রত্যাখান 
চুপচাপ চালের পাপড় খেলা চন্ডালিকামাছ


৫.

ফ্রেমের ভিতর দ্যোতনাময় বটফল
আরেকটু একলা হওয়ার ফন্দি গ্যালারি মিছিলে।
আলপথ ধরে এগিয়ে এসো অপলক
সামাজিক বনে ক্যাম্প ফায়ারের পঙক্তি আঁকো

            সজোরে
                        হ্রেষা
                                ঢিমঢিম

উটের গ্রীবার মতো বই খুলে জীবন্ত পেন, টেনশন
ছড়িয়ে যাক ওজন স্তরে অ্যালবেডো সংরক্ষণ...
এক পোস্টার চাপদাড়ি এঁকে বাড়ি ফেরবার 
কপিরাইট  ------- জলবৎ তরলং... সর্বজন সুখায়!


৬.

উত্তাল দর্পণের ইকো শোনা যায় মুখবইয়ে
ঘরে ফেরে সাইবার কেঁচোর বাতাস।
হা-ঘরেরা না-ঘরেদের তোয়াক্কার বীজ রাখে না
শুধু ভয় হয় মেঘমাগিদের ঝিঙেফুল ঠাসা আয়না
খড়কুটো পেয়ে মরিয়া মিছিল করে ------
খুব রাগ হলে হেসে ফেলে দেয়
জিপসি মাঠের দূর্বাতে বেগুনি আপেল ফুল।

আঙুল দ্যাখাও
লাগে রোদ দেবে সমকামী সূর্য জ্যাঠা।
বিপজ্জনক মায়ার সফরে ঈশ্বরকণা মানুষ ইত্যাদিরা
সংকেত ছোঁড়ে, অস্তাচলের স্থির বিশ্বাসে ফণা! 


৭.

কলসপত্রী ঠোঁটে কাঠবাদামের জলকেলি
সাঁঝবাতি রোদ বিষুবরেখার কোলেপিঠে...
------- এই যা দ্যাখা নীলাচল
শ্বাসমূলে আরশিনগর, নাভিমূলে কশেরুকা ক্ষয়

অথবা...
একটা ছোট্ট ডিঙি, একটা লন্ঠন, খুব গভীর রাত
না হলেও চলবে মতন সাদা রিংলেট।

গোটা যৌবন অসতর্ক আংটির মতো
চাল দিয়ে গ্যাছে খুরখুরি বোর্ড ---- মহাবিবর রোডরানার 
আমাকে কাপালিক, আকাশপ্রদীপ ভেবে
পর্ণমোচী অনুভব তার অরণ্যের অধিকারে
অন্ধকারে নামে।


৮.

ওষ্ঠাধর হতে আঁকিবুঁকি খসিয়ে দাও পলেস্তারা
বলো, কত ক্ষুদ্র তরঙ্গ চাই সবুজ বাড়ি ছাড়তে...!
শীতের চেয়েও বড়ো
অনেক বড়ো গ্রিন-করিডর বাঁধা আছে রামধনুতে।
শুধু দু'চারটে ব্রাশের সমান খিস্তি আলোকবর্ষ ঘুরে দ্যাখে
বনডুমুরের হিন্দোল কিনা হরিণের হাঁটাহাঁটি...

ইতিউতি ভোর, নাছোড়বান্দা মাছির চাহনিযুক্ত ড্রিপড্রিপ
নীচু তলার বিচিশূন্য মেঘমিনসের আইন অমান্য মেশামেশি
     
------------ সেসব কিম্ভূতকিমাকার মুহূর্তরা বুমেরাং আজ!
বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গোটা ঈশ্বরীয় বাস্তুতন্ত্র...


৯.

চশমার শীতলতা ভুলে যাও বাঁশিওলা
নিস্পৃহ শহর ফুৎকারে ফ্যালো কসমিক ঝোপে
রোমাঞ্চের ইউনিকোডে ছত্রাক...!
চৌকাঠে কাশফুল বকুল সুনসান সুড়ঙ্গ পথ
ছেড়ে প্লাজমায় হেঁটে যাই চলো.....

একগোছা বোরোধান রেখে মরে যাও সুন্দরী, 
তোমায় আর সুন্দর দেখতে চায় না 

                 সত্য ←ত্রেতা ←দ্বাপর ←কলি
      
অথবা ধূমকেতু গুঁজে রেখো ব্লাউজ বোঁটায়
নির্বাসিত গুল্মের শব্দে যেমন রসুইঘর ঝলসে ওঠে
ভনিতায় করাঘাত করে মঙ্গলসূত্র, সেভাবে


১০.

স্যাকারিন, কলাপাতা, স্যানেটোরিয়াম
কিংবা কক্ষপথের বিচারে ধন্য হওয়া মানব জনম
মফস্বলের পটভূমিতে মৈথুন করা কঠিন
নতুবা মুশকিল ঠমকি, মরচের ভয়ে লুকানো শিশ্ন
এক ঝাঁক কোঁকড়ানো চুল, মৌমাছি জাসুস।
ভাঙা মূর্তির হাতে পায়ে বেলোয়ারি রাজনর্তকী
কুঁজ-ওয়ালা ট্রাকের শ্যেনদৃষ্টির সুবাদে হয়রান
আর ফুটপাত মিহিন সাদা ধুলোয়
ধর্ষিত হয় অসহায়, বলো, কেমন আছো রাত?
চোঁয়া ঢেক তুলে সমাজবাবু বেসামাল শকট ছোটায়

                                                  হায় ছায়াবৃতা........!
প্রতিদিন গর্ভধারণ আর প্রতিরাত এঁটেল ভানুর তাপ।
বিপ্লব, সেজে আছি ফুলের মিছিলে, হাঁটো.......
    
                        __________________


৪টি মন্তব্য: