সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

তুষ্টি ভট্টাচার্য

অ্যালবাম /

অ্যালবামের পাতা উল্টে
ট্রেস পেপারের গায়ে আটকে থাকা ছবি
ঝরে পড়ে আচম্বিতে।
কেউ কেউ, এখনও দেখে স্মৃতি খুলে
কিছু বলছে কি কেউ?
কালের কথা সেই একঘেয়ে সুরে
ভুলের গহ্বরে মুখ বুজে পড়েছিল যারা
তাদের মুখ, চোখ থেকে সত্যি ঠিকরে পড়ছে যেন আজ
 
যৌবন পার করে চোখ যায় কিশোর বেলার দিকে
সেই অমলিন, পবিত্র রূপ যাকে ছবির ভেতরেই রেখে আসা চলে
সেই ভুবন ভোলানো বৃদ্ধের হাসি মুখ-
কোলে তুলেছিল পরম মমতায় তার আদরের শিশুটিকে
যে শিশু শিশ্নের ভারে ন্যুব্জ আজ
স্তনের নতমুখ আজ ফের অঙ্কুরোদগম দেখেছে
মাঝখানে কত গুলো দিন, রাত কেটেছে, হিসেব আছে?
কতখানি বোঝা ঝেড়ে ফেলা গেছে, জান?

লুকনো প্রেমিকের ছবিটি, ছিঁড়ে ফেলা প্রেমিকা-ছবির একফালি মুখ
এখনও রয়েছে! মনে ছিল ওরা? এখন কোথায় আছে কে জানে!
হয়ত লুকিয়ে রয়েছে কোনখানে-
প্রথম প্রেমের ছবি নেই, সে ছিল একান্ত গোপনীয়
দ্বিতীয় বা তৃতীয় চিহ্ন রেখেছে।
চিহ্ন রাখে কোন ছবি? এই অ্যালবামে মন রাখা আছে।

ওই সেই ভাড়া ঘর, পুরনো দেওয়ালের দাগ
শিশুটির রেলিং ঘেরা খাটে শুয়ে নিরাপত্তা
কতটা নিরাপদে সে আজ আছে
দাগ হীন নতুন বাড়িতে?
বাড়-বৃদ্ধি ও ভরসা তেমনই আছে?
লাল ট্রাইসাইকেলের ভাঙা চাকা সাক্ষী
সাক্ষী রয়েছে অ্যান্টেনার কাক আর
টবের সেই গাছটি, যাদের ছেড়ে তুমি
কিছুতেই এসে পড়তে পারনি এই বাড়িতে-
অ্যালবামে ছবি আভাষ দিয়েছে আজ এই সব-
স্মৃতিকে ছেড়ে এসেছে ভেবে মায়ের কোল
আজও দুলে ওঠে, দুলে ওঠে অ্যালবামও।

স্মৃতি উস্কে দিতে তাকে ডেকেছ
উদ্বেল হয়ে ভাবছ এখন-
কোথায় লুকিয়ে ফেলি এই ভার
পাহাড়ের মত চেপে বসেছে কেন এতদিন বাদে-
ভেবেছ? ভেবেছিলে এ নিছকই ক্ষণিকের ছবি
সময় পেয়েছ বলে পাতা উল্টে যাবে-
চলে গেছ ভেবেছিলে!
প্রিয় বন্ধুর পাশে ওই যে তুমি গায়ে গায়ে লেগে,
হাসছ- বন্ধু ছেড়ে গেছে অকালে এ পৃথিবী
তুমি রয়ে গেছ, ভুলেও ছিলে তাকে।
তবে এই ছবি কেন বন্ধুর স্বরে কথা বলে আজও?
মৃতরা বেঁচে উঠেছে আজ একে একে
জীবিত হয়ে এসেছে তোমার কাছে, ওরা পাঁচজন
স্বীকার কর অন্তত ওদের কাছে-
মৃত্যু মানে সমাপ্তি নয়!
বয়সের ভারও মুছে দেয়নি ওই অ্যালবাম। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন