সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

মলয় রায়চৌধুরী


        
হৃৎপিণ্ডের সমুদ্রযাত্রা : রবীন্দ্রনাথের দাদুর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ও দেবেন্দ্রনাথের সমালোচনা 





হায়, রাজকুমার দেখে যেতে পারলেন না বিয়ের আগেও ছেলে-মেয়েরা ট্যাবলেট খেয়ে যতোবার  যতোজনের সঙ্গে ইচ্ছে সেক্স করতে পারে । ইচ্ছে মেয়েদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে ।
        তুই অতো ভাবছিস কেনো, দেখে যেতে পারিনি বটে, মেয়েদের স্বাধীনতা তো আমার জন্যেই সম্ভব হয়েছে, আমি যদি না অঢেল টাকা রোজগার করতাম, আমাদের বাড়ির মেয়ে-বউরা কি নারী স্বাধীনতা আনতে পারতো?
        হায়, রাজকুমার দেখে যেতে পারলেন না কানির বদলে মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিন বাঁধে ।
        তুই ভুল ভাবছিস, হুলি ।
        হায়, রাজকুমার এতো সাহসী ছিলেন হয়তো নিজেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের কারখানা বসাতেন ।
        হ্যাঁ, আমিই কারখানা বসাতুম, ওতে বিশেষ লগ্নির দরকার হয় না ।
         আমার মনে পড়ল যে বিশ শতকের সাতের দশক আমি একটা কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়াতুম, আমার নাম ছিল হুলিচরণ ভট্টাচার্য, স্নাতকোত্তর সিলেবাসে ‘ভুতবিদ্যা কামাখ্যাতন্ত্র’ নামে একটা বই ছিল, রাজকুমারের হৃৎপিণ্ড নিয়ে পৌঁছোতে মোটে এক সপ্তাহ বাকি,  আশঙ্কায়, কী করবে ঘাটে নেমে ঠিক করে উঠতে পারছিলুম না, কেননা রাজকুমারে এতো শত্তুর ছিল, তারা নিশ্চই জেটিতে এসে ব্যাগড়া দেয়া আরম্ভ করবে ।
        চোখ বুজে আঁচ করতে পারলুম, জেটির খালি-গা হেটো ধুতি বামুনগুলো আর অতিবামুন কাল্টের কোরাধুতি কাঁধে চাদর লোকেদের নির্ঘাত ভুতে পেয়েছে, জানি আমি, রাজকুমারের হৃৎপিণ্ডের দিকে এক ঠায় তাকিয়ে এক্কেবারে নিশ্চিত হলুম ।
          ‘ভুতবিদ্যা কামাখ্যাতন্ত্র’ বইয়ের মন্তর মনে পড়ে গেল যা স্নাতোকোত্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখস্হ করাতুম যাতে ওরা জীবনে বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে কেউকেটা হয়ে উঠতে পারে, আইআইটি আইআইম-এ ভর্তি হতে পারে, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করে সেদেশের মেম বিয়ে করে এদেশে মাবাপকে ভুলে যেতে পারে । জাহাজের জেটিতে পৌঁছে, যাদের ভুতে পেয়েছে, আর তাদের মগজে ঢুকে নানা উৎপাত করছে, তাদের কাছে গিয়ে চুপিচুপি এই মন্তরটা তিনবার পড়তে হবে আর ওদের শরীরে তিনটে ফুঁ দিতে হবে ।
        জেটিতে নামার পরে তো কাছ-ঘেঁষতে দেবে না ওরা, আমি যে শুদ্দুর, তাই জাহাজের কেবিনে বসেই এই মন্তরটা তিনবার পড়লুম :
ভুত কে ? আমি কে ? কে বলতে পারে ?
ভুতের সন্ধান করি বেড়াই ঘুরে ঘুরে ।
ভুতের দেখা পেলাম হেথা ।
ভুতের সঙ্গে কই কথা ।
শুনাই কানে হরেকৃষ্ণ হরেরাম ।
সজীব ছিল নির্জীব হলো শুনে রামনাম ।
ভুতের রাজা মহাদেব রাম নামেতে খেপা ।
ভুতকে ডেকে নিলেন কাছে বুকে পেয়ে ব্যথা ।
দোহাই শিবের, দোহাই রামনামের ।
জেটিতে যারা দাঁড়িয়ে থাকবে তাদের ঘাড় থেকে শিগগির যা ।
জয় ভুতনাথ জয় জয় শিবশঙ্কর ।
          মনে মনে মন্তরটা তিনবার আওড়ালুম ।
          রাজকুমারের হৃৎপিণ্ড শুনতে পেলে চটে যাবেন, বলবেন তোদের এইসব ভুতপ্রেতে বিশ্বাস গেলো না, বিলেত ঘুরিয়ে নিয়ে এলাম, তবুও গেঁয়ো মুর্খ থেকে গেলি, সভ্য মানুষ হতে পারলি না ।
          না, রাজকুমারের হৃৎপিণ্ড সেসব কিছুই বললেন না । বয়ামে ফরম্যালিনের শরবতে হয়তো উনি এখন ঘুমোচ্ছেন, সমুদ্রের এমন ঢেউ, এমনিতেই ঘুম পায়, মনে হয় মায়ের কোলে দোল খাচ্ছি । আর ওনার তো নিজের মা ছিলেন না, যদিও সৎমা ওনাকে খুবই ভালোবাসতেন ।
         ভুত যার কিংবা যাদের ঘাড়ে ভর করে সহজে তাদের ছেড়ে যায় না । আমার মনে হতে লাগলো জেটিতে যারা হৃৎপিণ্ডের জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের ঘাড়ের ভুতগুলো হয়তো তাদের ঘাড় থেকে নেমে তাদের ছেলেপুলের ঘাড়ে চাপবে, ছেলেপুলের ঘাড় থেকে নেমে তাদের ছেলেপুলের ঘাড়ে চাপবে, হয়তো কেন, নিশ্চই ঘাড়ের পর ঘাড়ে চেপে সব বাঙালির ঘাড়ে ভুতেরা ভর করেছে, তাদের আর যাবার নাম নেই, রাজকুমারকে হিংসে করার লোক কি কম আছে আজকের দিনে ? একজন আরেকজনকে হিংসে না করলে শ্বাস নিতে পারে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন