শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১

রিয়া চন্দ্র

                                      


এই সংখ্যার কবি রিয়া চন্দ্র। জন্ম ১৯৯৭ সালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শহরে, বি.এড পাঠরতা। কবিতার এক নতজানু পাঠক ও নিজ কলমের রক্ষক।এককথায় কবিতা অন্তরের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত।যেখানে কোমল-কঠোর অনুভবে শব্দেরা তার প্রিয় আস্তানা খোঁজে সেখান থেকেই কবিতা লেখার সফর শুরু হয়। ২০১৮ সালের প্রথম থেকে লেখালিখির জগতে প্রবেশ, প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'প্রাগৈতিহাসিক'।এরপর বিভিন্ন লেখা 'এখন তমোহা', 'কবিতা আশ্রম', ' কবিতানগর', 'পৃথিবী', 'শব্দ সাঁকো', 'বৈঠকী আড্ডা', 'ভিস্', 'লালমাটি', 'সংকল্প', 'হৃদকথন' প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশ পায়।


সংযোগ

রিয়া চন্দ্র


কুয়াশার আতর মেখে যারা ঘুমিয়ে পড়েছে

ক্ষয়প্রাপ্ত বালিশে

সাংকেতিক বিছানায় তাদের লেগে থাকে প্রবাদ


কঠিন শব্দবন্ধের কোলাজ সরিয়ে কত মানুষের 

আঙুলে আঙুল জড়িয়ে যায়

কাছে আসার আগেই কমার পরিচয়ে

                          সহজ হয়ে আসে দুর্বোধ্যতা

খিদে ও অবহেলার মাঝে গন্তব্যের কোল ঘেঁষে

এই যে ঝকঝকে শোক ঝুলছে

তাকে কি তুমি রোদ ভাবতে পারো না?


প্রতি দীর্ঘশ্বাসের ভেতর পূর্ণচ্ছেদ অনুভব করেছি

অথচ দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও বিশ্বাসে, চেয়ে দ্যাখো–

বাতিল সময় থেকে দূরে সেখানেই আমাদের      

                        সম্পর্কের প্রাচীন শীত জেগে আছে 








পোষ্য

রিয়া চন্দ্র


মেয়েটি দেখেছিল,

সাদা পায়রার চোখটি হঠাৎ কেমন জড়িয়ে এল


খোলা জানালার বাইরে প্রত্নচিহ্নের মতো 

সাজানো উদাসী শালবন

কোথাও কোনো শব্দ নেই, রাতের মানচিত্রে

পুড়ে যাচ্ছে প্রাচীন নামলিপি


ভোরের পদ্মকথা থেকে উঠে আসা মৃদু ইশারা

স্মৃতির বল্কলে নির্বাণ পেতে চলেছে


মেয়েটি দেখেছিল,

বুড়ো শালগাছের পাতায় এখনও সেই পায়রার 

মৃত পালকটি প্রার্থনা করছে তার শেষ আশ্রয়




নিমজ্জিত

রিয়া চন্দ্র


এ জন্ম ফুরিয়ে আসছে, মৃত্যুর নাভি থেকে

গ্ৰহণলাগা কল্পপথে আয়ু কুড়িয়ে নিচ্ছি ক্রমাগত

অন্ধকার উঠোনে রোদের আদর তো মিথ্যে ছিল না

তবু কেন এত ভাঙনের তীব্রতা, কেউ বোঝেনি !


আমাদের কোনো বিশ্বস্ত আকাশ নেই

সম্মোহনের বেদি সাজিয়ে শুধু কষ্টের দাগগুলো 

শূন্য থেকে মহাশূন্যে গাছ হয়ে ওঠে


ঘোরের মধ্যে পাহাড়ি জঙ্গলে রাস্তা হারিয়েছে 

যে শান্ত জলবালিকা, নিজেরই আড়ালে     

চেনা স্রোত ভুলে কপোতাক্ষের গর্ভে 

তলিয়ে গেছে তার ছিন্নমূল গোপন গ্ৰন্থিরা





ইলিউশন

রিয়া চন্দ্র


প্রথমবার পাহাড়-চূড়ায় দাঁড়িয়ে জেনেছি 

শব্দ ও ভাবনাদের থেকে দূরে কোথাও

যাওয়ার নেই আমার

মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যে আছড়ে পড়ে অসহ্য উত্তাপ

নদীরা পুড়ে গিয়েছে তার দেহাতীত বিছানায়!


এখন বিচ্ছিন্ন আলোর পথ ধরে কোথায় 

গিয়ে দাঁড়াব?

হে পাহাড়, তোমার নিষিদ্ধ গোপন পাথরে

নির্বাসিত করো এ আদিম মানবীকে


এই কস্তুরীর ঘ্রাণ-ই একদিন আমায় এনে 

ফেলেছিল মোহের মৃত স্থাপত্যে

ভ্রাম্যমাণ সে ভুলের আঁশটে অনুভূতি আজও 

পাথরের চিৎকার হয়ে স্মৃতিতে মিশে আছে




নির্মাণ

রিয়া চন্দ্র


১.


এভাবেও জীবিত থাকা যায়, মুহুর্তের ঝড়ে

আলোড়ন তোলে শূন্য খাঁচা 

এই যে পাখিদের জন্মান্ধ চোখে গভীর প্রশ্নের ভিড়

তার মাঝে আমাদের একা হেঁটে যাওয়া 


ঠিকানা নেই ওদের, নেই কোনো পরিত্যক্ত দুয়ার

জলজ দরজায় দাঁড়িয়ে দূরের বন্ধুরা

যেখান থেকে অনায়াসে বেরিয়ে আসতে পারে

তোমারই মতো দেখতে অন্য আরেকটা 

পৃথিবীর প্রস্তাব

  

২.


ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়ে বুঝেছি 

সৃষ্টি আসলে এক রহস্যময় প্রেমিক!

যার ক্ষীণ আলোয় মৃত্যু দোল খায়, গড়িয়ে যায়

অন্ধকারে লাট খেতে খেতে ঘনিষ্ঠ হয় জন্মের সাথে


প্রাচীন আঁতুর ঘরের বিছানায় উপুড় হয়ে শোয় 

আমাদের ফুরিয়ে আসা যাবতীয় শোক

আসলে সব আলোহীন সভ্যতার ভেতর 

লুকিয়ে থাকে জন্মবীজ 

প্রতি ধ্বংসের পরে যা সৃষ্টি করে নতুন বলয়









৪টি মন্তব্য: