মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়


মন জানালার অন্তরালে 


এই একখন্ড সাদা কাগজের উপর মেঘ এসে যখন দাঁড়ায়
তখন প্রতিটি অক্ষর হয়ে ওঠে একেকটি বৃষ্টির ফোঁটা,
শব্দগুলি বর্ষাকাল
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বিন্দু বিন্দু অশ্রুর কবিতা।
মেঘ ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে
উত্তর গোলার্ধে যায়।
সাদা কাগজের উপর পড়ে থাকে স্মৃতি,
ভালোবাসার গন্ধ
আমি হাত বাড়িয়ে সেই মেঘবৃষ্টির স্বর্ণমুদ্রা কুড়াতে থাকি,
এই শাদা কাগজ মূহুর্তে হয়ে ওঠে বিরহী মেঘদুত
অথই গীতবিতান।
কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ প্রেমের কবিতা
লিখে রেখেছে আকাশে
সেই ভালোবাসার কবিতা এই বৃষ্টি,
এই ভরা বর্ষা।
মহাদেব সাহা, তার ‘বর্ষা, বৃষ্টি কিংবা ভালোবাসার কবিতা’য় যেন এক নিমেষে একাকার করে দিয়েছিলেন বৃষ্টি, প্রেম, বিরহ তথা মানব জীবন। গ্রীষ্মের তাপদাহে প্রকৃতি যখন অস্থির হয়ে ওঠে। যখন খাঁ খাঁ রোদ্দুরে পোড়া থাকে মাঠ-ঘাট, গরমে হাসফাঁস জীবন,শুকনো জলাশয়। যখন তৃষ্ণার্থ চাতকের বৃষ্টির জন্য করুণ আকুতি। মানুষের মনও ব্যাকুল বিনয়ে শ্রষ্ঠার কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, ছায়া দে রে তুই....। তখন তৃষ্ণার্থ প্রকৃতিকে অমৃতসুধায় ভরিয়ে দিতে রিমঝিম বৃষ্টি, একরাশ সজীবতা আর কদমফুলের সুভাষ নিয়ে আসে প্রিয় ঋতু বর্ষা। একটা রুক্ষ আবহ থেকে হঠাৎ এক অমলীন প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যম যেন এই বৃষ্টি। এ শুধু মানুষের মন নিয়ে খেলা নয়, প্রকৃতির খেলায় এ যেন জীব জগতের কাছে নতুন প্রাণ প্রতিষ্ঠা। রেইন মেশিন এর কনসেপ্ট যখন ভাবনাচিন্তা করা হয়, তখন খানিকটা পিছিয়ে এসে চার্লি চ্যাপলিনের সেই মহান উক্তির কথা প্রথমেই মনে পড়ে, I always like walking in the rain, so no one can see me crying.’ ঠিক কতটা নির্মম সত্যি কথা এমন একটি মানুষের মুখ থেকে, যাকে আমরা তার হাস্যকৌতুকের জন্য চিনি।

সত্যিই, একমাত্র বৃষ্টিই হয়তো মানুষের মনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কখনও আনন্দের বার্তাবাহী, আবার কখনও বা দুঃখের। কখনও চোখের জল ঢাকতে কাজে লাগে – আবার কখনও বা আনন্দের উচ্ছ্বলতায় সামিল হতে। বর্ষা প্রকৃতির মনকে কখনো আনন্দে সিক্ত করে, কখনো বেদনা রিক্ত করে আবার কখনো বিরহকাতরতায় মূক করে তোলে অনায়াসে। প্রকৃতির সে ভাব মানব জীবন অবলোকন করে, তারপর সে ভাব ভর করে কবির মানসপটে। প্রকৃতি কবিকে যেভাবে প্রেরণ করে তার গন্ধ কবি সেভাবেই তা ছড়িয়ে দেন কালো অক্ষরে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় নতুন সূর্য, নতুন একটা দিন, নতুন একটা সকাল। মনের মানসপটে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে যায় সমস্ত গ্লানি।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন