মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী


অভিশপ্ত নীল ( অন্তিম পর্ব )

জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী 

ব্ল্যাংক কল আর শান্ত হুমকিতে তেমন সুবিধে হয়ে উঠলো নাপিয়াস মিত্র কে দমিয়ে রাখা যে কতখানি কঠিন তা হয়তো এতদিনে বুঝে গেছিল নেভির তাবড় তাবড় অফিসারেরা ....তাদের কুকর্ম ঢাকতে একজন নির্দোষ অফিসারের জীবন এভাবে তছনছ করে দিতে তাদের একটু বাধে নি ,অথচ পিয়াসকে তারা যতটা সহজ ভাবে নিয়েছিল ,সে যেন ততখানিই অপ্রত্যাশিত l শেষ পর্যন্ত পথের কাঁটা সরাতে অথবা অনন্ত রায়ের মনঃসংযোগ নষ্ট করার জন্যই এরকম একটা ঘটনা ঘটাতে বাধ্য হল তারা l সাত দিন আগেই ....পিয়াস এর ডিপার্টমেন্ট এর গাড়িটা মুখোমুখি ধাক্কা খেয়ে গেল একটা ট্রলারের সাথে ...ড্রাইভার সহ একজন অফিসার ঘোরতর আঘাত পেয়ে ভর্তি হল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হাসপাতালে l
কাঁচের জানলা দিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একসময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে তাকালো পিয়াস l সন্ধের বুকে তখন একটু একটু করে তারা জমতে শুরু করেছে .....আকাশটা কমলা ...লাল হতে হতে সবে নীল অন্ধকারে ডুবে যেতে চাইছে......পিয়াসের হাতটা শক্ত করে ধরলো অনন্ত .মনে হচ্ছিল ..দূরে ভেসে উঠছে নেভি' জাহাজ গুলো ...লাইটহাউস এর লাইট ঘুরতে ঘুরতে একবার করে পড়ছে ওদের গায়ে l 
নীরবতা ভঙ্গ করলো অনন্ত' ..." কালকের মধ্যে সব কাজ সেরে ফেলতে হবে ...আজ একটু গুছিয়ে রাখি "
- "
হুম্ ,সকালে আমাকেও একবার হেড কোয়ার্টার যেতে হবে ....প্রোজেক্ট মেট্স দের সাথে ফাইনাল কথা সেরে নেব .."
- "
তুমি ডিশিশন নিয়েই নিয়েছ ! ...promotion and all that ...ক্ষতি  হবে কিন্তু ...."
- "
জানি অনি ....I will manage it later ....এখন শুধু তোমার সাথে ....." কণ্ঠস্বর বুজে আসছিল পিয়াস' ...
- "
আচ্ছা বেশ ....এমনিতেই এই কুড়ি দিন অনেক ধকল গেল তোমার' ,তারপর এই ঝড় ...কাল সকালেই ডিসচার্জ করে দেবেন বলেছেন ডক্টর ..কিন্তু আমি চাইছি তুমি আর কয়েকদিন এখানেই থাকো ....এমনিতেই আমি না থাকলে কে দেখবে তোমায় ...আমি তো ভাবতেই পারিনি এত তাড়াতাড়ি সবটা সামলে নিতে পারব ..তুমি না থাকলে তো ...."
- "
সত্যিই ......but dont say কি তুমি ভাবতে পারোনি ....all were set তাই না ? তুমি কিন্তু এখনও বলোনি আমাকে সবটা .."
অনির ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ....." হুম্ ....রুপমকে খুঁজে বার করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো ...আমি বেশ কয়েকবার ভগবানপুরে ওর বাড়ি গিয়েছিলাম ,তুমিই টাকা দিয়েছ ,but কারণটা বলিনি তখন ....তো সেখানেই ওদের বাড়িতে দেখলাম রুপমের একটাও ছবি নেই ......ছবির গলায় মালা নেই ...আমার তখনই মনে হয়েছিল রুপম যে মারা যায়নি বিষয়টি ওদের বাড়ির লোকও জানে ....ব্যাস ...তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার নিজেকেও এবার সরিয়ে ফেলতে হবে ....নাহলে নীল রঙটার সম্মান বোধয় রাখতে পারব না l তারপর তো বাকিটা ইতিহাস...কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি জানো যে রুপম এভাবে ওদের কথায় ......" দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো অনন্ত l " ওর উপর অনেকটা বিশ্বাস ছিলো আমার ....সাসপেন্ড হওয়ার পর থেকেই আমি তো চেয়ে এসেছি আমাদের দুজনকে কিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় ....কিন্তু আসল প্ল্যান টা ছিলো সমস্তটা আমার হাতে চাপিয়ে দিয়ে রুপম বেরিয়ে যাবে seen থেকে ....এটা বুঝতে না পারাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো পিয়া .."
- "
হ্যাঁ ....সততার মুখোশগুলো বাজারে আজকাল ভীষণরকমের সস্তা হয়ে গ্যাছে ....কিন্তু তুমি রুপমের খোঁজটা পেলে কি করে ? ওর বাড়ির লোকেরা' কি ...."
- "
নাহ্ ...ওর বাড়ির লোকেদের সাথে আর যোগাযোগ করিনি ....করলে তো সবই জানাজানি হয়ে যেত and they would kill him for sure ....আমি কিছু একটা করছি সেটা ওরা খুব ভালো করেই জানত ....U know ...that blue car ?.....কিন্তু কি করছি ,এটা জানানো সম্ভব ছিলো না ...ওরা বুঝতে পারেনি যে আমি রূপমকে খুঁজছি ...আর এখানেই ওরা ভুল করে ফেলেছিল ....আমার আর আমার পরিবারের উপর নজর রাখতে গিয়ে আসল জায়গাতেই ফাঁক পড়ে গেছিল l একদিন ফেসবুকেই একটা ফেক প্রোফাইল চোখে পড়েছিল আমার .....সাজেশন এসেছিল ,আমি তো অবাক ....সার্চ করে দেখলাম ফোন নাম্বারটা ইউ পি .....প্রায় আট দশ বছর আগের পুরানো নাম্বার ....রুপম যখন বাড়ি যেত ছুটিতে .....এই নাম্বারটা থেকেই মাঝেমধ্যে কল করত ..বলত ওর বৌ এর নাম্বার .....সবটা তখনই প্রায় স্পষ্ট হয়েই গিয়েছিল .....আই পি অ্যাড্রেস বলল অপারেট হয়েছে এখান থেকেই .....রূপমকে ওরা ভাইজাগ এই রেখেছে !!....তখন থেকেই জাস্ট তক্কে তক্কে ছিলাম কিভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করা যায় ....হুট করে সবটা করে নিলে ঝামেলায় পড়তে হত ...সে কারণেই সেদিন ওই রিং টা তোমার কাছে পৌঁছে দিলাম ..."
- "
হ্যাঁ সেটুকু বুঝতে দেরি হয়নি আমার ....তুমি যে রুপমের খোঁজ পেয়েছ......তাই আগ বাড়িয়ে প্রোজেক্টটা নিয়ে নিলাম ....অসুবিধা জেনে' .."
- "
রুপম আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত এখানে থেকে গেছে অন্য আইডেন্টিটি নিয়ে .....ওর নাম এখন মাধব রাজন ...তুমি ভাবতে পারো ,বড় কোন ব্যাকিং না থাকলে এটা সম্ভব হত ! ভোটার কার্ড ,রেশন কার্ড ...all are legal .....শুধু চাঁইটা ধরা বাকি ছিলো পিয়া .....কাল সেটাও সম্পূর্ণ হয়ে গেল ...ক্যাপ্টেন নিখিল গুনাজি !....আমি তো ওকেই নিজের আইডল ভাবতাম .....আর দেশের এই গর্বের নীল রঙটা অন্যের হাতে তুলে দিতে ওর একটুও আটকালো না ...সত্যিই মানুষ চিনতে কতটা ভুল করেছিলাম আমি ....নিখিল ....রুপম ...all are .........তবে এই attempt to murder case টা না ঘটালে বোধয় ওদের ধরে ফেলা অতটা সহজ হত না ,জাস্ট একটা চালে ধরা পড়ে গেল culprit গুলো l 
- "
আর কিছু ভেবো না অনি .....সত্যিটা আদালতের সামনে proove  করা বাকি আছে এখনও ,you have to be strong now .....ওই রঙটা আবার নিজের কাঁধে দেখতে চাও না ? ...একটু ধৈর্য্য রাখতেই হবে ....কাল first hour এই থানাতে রিপোর্ট করতে হবে কিন্তু .....একদম আর টেনশন নয় ....তুমি নিশ্চিন্তে surrender কোরো ....বাকিটা আমি দেখে নেব .....সত্যিটা প্রমাণ করতে গেলে তোমাকে সবার সামনে তো আসতেই ' .....মিস্টার রেড্ডি তো বলেইছেন সবটা সামলে নেবেন....বেইল এর ব্যবস্থা' ....."
- "
নাহ্ ,কোন ফেবার নয় ...আমি এখানে সততা' লড়াই লড়তে এসেছি ...." হঠাৎ শিরদাঁড়া সোজা করে বসলো অনন্ত ...পিয়াস এর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল ," ভয় নেই ...এতটা পথ যখন পেরিয়ে এসেছি ....বাকিটাও পার করে নেব দুজনে ....."
অনি' বুকে মাথা রাখলো পিয়াস ....আকাশ আর সমুদ্র মিলেমিশে তখন একটাই রঙ .....নীল ......বালিয়াড়ি' আলো গুলো জ্বলে উঠেছে একেক করে ....সবুজ পর্দা ঘেরা কাচের কেবিনের ভেতর ওরা অপেক্ষা করছে একটা নতুন ভোরের

সমাপ্ত 

ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার : জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন