সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সম্পাদকীয়

 


প্রকাশিত হল সৃজন 'বর্ষা 'সংখ্যা I ভাবছেন এই তো শীতে বর্ষা I সৃজন  সর্বদাই ব্যতিক্রম কাজ করে এসেছে। এই শীতে ও বর্ষাকে আনতে পেরেছে I এবার আসছে প্রখর গ্রীষ্ক I গ্রীষ্মে না হয় শীতের পরশ আনবে সৃজন I গতকাল কলকাতা বইমেলা শেষ হল I আবার সামনের মেলার জন্য সৃজন নতুন ছন্দে সেজে উঠতে চলেছে I কী ভাবে ? তা জানতে হলে সৃ প্রকাশনার ফেসবুক পেজে চোখ রাখতে । খুব ভালো থাকুন সবাই I সৃজনে থাকুন I

শীলা বিশ্বাস

 


 বর্ষা যেমন লেখায়

      

এই যে সারাদিন তুমি ঝরছ কবিতায়

আমার কি দোষ বলো

যদি প্রেম পায়

 

প্রেমের আয়ু নিয়ে ভাবি না

মুহূর্তটুকু ধরি

 

 

এই রিম ঝিমে

রেট্রো করে ভাইরাল আমরা

অমিতাভ মৌসুমী

 

বয়স কে মনে রাখে!

 

 

গাছে কদম ফুটে থাকলে

আড়ালে কেউ বাঁশি বাজায়

কেন যে হঠাৎ পড়ে গিয়ে

 

থেতলে যায় প্রেম!

 

 

 

রাস্তার জমা জলে

স্কুল বেলা ফিরে আসে

 

আগে পিছে দেখে নিয়ে

একবার ছিটিয়ে দিই

 

আশির দশক ঢুকে আসে জলপথে

 

কথা না শুনলে

বজ্র হুমকি দেয়

কাকে!

আমাকে নয় তোমাকে নয়

 

পৃথিবীকে

 

 

 

 সাদা কালো হট সিনে বিদ্যুৎ চমকাতো খুব

 সেই থেকে বিদ্যুতে নাবালক ভয়

 

দূরের গ্রামে বৃষ্টি হয়েছে

ঝরনা ফুলে উঠছে

তোমাকে দ্বীপ বানিয়ে ঘিরে ধরতে পারে

 

কিছু রূপ দূর থেকে সুন্দর




সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়

 


 



হিং টিং ছট



মগ্ন রাঙাছুটি

ছাতায় ঢাকা যাত্রাপালা, চোর

মশালঝাড়ু কণাদে উষ্ণীষ

***
তেইশে এলো রাক্ষসের পলি

ডিম্বাণুর স্তনে বর্ষাকাল

শেষনাগের ধ্যান ঝুলছে সিলিং পাখা ধরে

বিষাদ গৃহী

পারঙ্গম নয়

***
রসালো জেদ

একান্তই আমার ভীমরুল

ধাই নাচাও চিতল জ্যোৎস্নায়

***
স্থান তোমার রেশম গুটিয়েছি

বিসংগত আখর হয়ে ফাটো

***
মশকপ্রায় বিকেল চটকানি

সোনারঙের বাছবিচার পটলচেরা খেই

প্রেমিক আজও নিতল প্রস্তাবের শাহরুখ 

গার্গী সেনগুপ্ত

 


বৃষ্টি হোক



বৃষ্টি একা হোক  তবুও দেখা হোক
চাওয়া তো এইটুক

অস্ত যায় যাক কিছুটা রেশ থাক
সে ভালোবাসা হোক

ইচ্ছে থাকে থাক গভীর ফিরে পাক
অথই মন ভার

এইতো শূণ্যতা মেঘের মনে ব্যথা
হয় তো হোক না

রঙ তো ধূপছায়া  তারার বুকে মায়া
স্পর্শ ধুয়ে যাক

হাওয়ায় স্মৃতি থাক শ্যাওলা ফিরে পাক
পুরনো বাথটব

বৃষ্টি উপশম  মেঘের বুকে ওম
গন্ধ রেখে যায়

স্পষ্ট অভিমান ম্যাজিক জলস্নান
ঝাপসা করে দেয়।

অস্ত যায় যাক, কিছুটা রেশ থাক
সে ভালোবাসা হোক

বৃষ্টি একা হোক  তবুও দেখা হোক
শ্রাবণ অপরাধ

ইচ্ছে থাকে থাক গভীর ফিরে পাক
অযথা মন ভার।
-----------------------------------

জয়শ্রী দাস মন্ডল

        





তুমুল_বৃষ্টি



মেঘ করেছে আকাশ জুড়ে 
বৃষ্টি চাই, তুমুল বৃষ্টি...
এসে ভিজিয়ে দিক সব কিছু।
তপ্ত রুক্ষ মাটি ভিজে গিয়ে সেখান থেকে বের হোক সোঁদা গন্ধ।
গাছের পাতারা ভিজে দূর করুক ওদের মলিনতা।
গাঢ় সবুজে চারিদিক ঝকঝকে হয়ে উঠুক আর‌ও।
রোদের তাপদাহে ধুঁকতে থাকা কুকুরটা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিক।
স্বজনহারা ক্লান্ত পাখিটি দুদণ্ড বিশ্রাম নিক কোন‌ও গাছের শীতল ছায়ায়।

বৃষ্টি চাই, তুমুল বৃষ্টি..
এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিক আমার চোখ মুখ।
আমি আড়াল করে রাখা কান্নাগুলোকে বিলিয়ে দেব এক নিমেষে।
আমার সমস্ত অপারগতা, আমার সমস্ত অসহায়তা, আমার মনখারাপের মুহূর্তগুলো 
সব... সবটুকু উজাড় করে দেব বৃষ্টির জলে।
এতটাই ভিজতে চাই, যেন কেউ বুঝতে না পারে তুমুল বৃষ্টির জলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ছিল কিছু নোনা জলের ধারা।

আমি বৃষ্টি চাই, তুমুল বৃষ্টি.....

সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

          


ভাসান 
 

প্রতিটি বর্ষাই প্লাবন সম্ভবা... 

যত বার ভিজে গেছি 
হাবুডুবু,হাবুডুবু
জল থেমেছে ঠিক নাকের নীচটিতে এসে।

প্রতিটি বর্ষাই বড় বেশি প্লাবন সম্ভবা।

করতলে গন্ডুষ করেছি জল।
আচমনে পরমান্ন আঘ্রাণ, তবু
হাবুডুবু,হাবুডুবু... প্রাণ!

শ্বাস বায়ু গেল বুঝি ভেসে... 
ওষ্ঠাধর প্লাবিত নিরুদ্দেশে।

শঙ্খ মিত্র

 


 দোলাচল



বাঁশপাতার ফাঁকে ফাঁকে যেভাবে গলে পড়ে চাঁদ
সম্পর্কের ভেতরে ঝরছে (বিষ ও শ্বাস) বিশ্বাস
পেছনে ছাড়া পড়ে গেল যে ঐশ্বর্য
তা আসলে সালঙ্কারা অপরাধবোধ
এখানে মুহুর্মুহু বদলে যায় হাওয়ার অভিমুখ
পথ চলি সন্ত্রাস গুনে গুনে

যে পানকৌড়ি বসে আছে শান্ত জলের পাশে
তার ডানায় ডানায় খোদিত জিজীবিষা
সে জানে সময়ের আবহমান স্রোতে গা ভাসানোর কৌশল
অথচ মানুষই কী অদ্ভুত
শরীরের গলিপথ জুড়ে সর্বস্ব দোলাচল
শোক বিহ্বল জরা
একটা পবিত্র নদীর আশায় বসে থাকতে থাকতে
অযুত বৈপরীত্য নিয়ে পার হয়ে যায় কালানুক্রমিক সেতু






মিঠুন চক্রবর্তী

                 



যেভাবে বর্ষা আসে


উট রঙের সফর তখন , তার মাঝেই দেখা,
অলীক কিংবা আশ্চর্যজনক কিছু নয়
প্রথম যৌবন উড়িয়ে এসে প্রতিটি পুরুষের চোখ
প্রেমিকার মুখে যেভাবে মাকে খুঁজে এনে রাখে
তাকিয়েছিলে ? আমি তো চোখ মেলতে পারিনি,
কতকাল আমার নগ্ন চোখে হু হু বাড়ছে জ্বর

ঘরের কোনায় রাখা খাঁ খাঁ কলসিতে
ঘড়ির কাঁটার শব্দের মতো শব্দ জাগিয়ে
নুড়ি - পাথর ফেলে যাচ্ছে কাকবর্ণ রাত

উঠোনে পড়ে আছে শুধু সম্ভাবনাময় কিছু বীজ
জড়িয়ে ধরেছো ! দ্যাখো, আমি আজ পুরুষ নই।
পুরুষের ভেতর থেকে বুকে হেঁটে বেরিয়ে 
ঢুকে পড়েছি একটি কুমড়ো লতার রোঁয়াসুন্দর শ্যামাঙ্গীতে।
শুধু আমি কেন, আমরা দু'জন 

আর ওই যে আমাদের গর্ভ, বাতাসে দুলতে দুলতে ফুলে উঠছে

সুরজিৎ বেরা

 


• চিহ্ন 
 


'বন্ধু' শব্দটি খুবই সহজ-সরল ও শান্ত।
গ্রামের জলভরা মাঠে 
নিবিড় আবেগপ্রবণ গতি তার চর্চা
ভীতুরোমাঞ্চিত অনিশ্চিয়তা তার ডুব
অমরত্বের টলমল মঙ্গলগান তার প্রতিরক্ষা

সান্নিধ্যের স্পর্শকাতরতা, তাকে
অসমাপ্ত ফুলের মালায় অনুগত করে

শুধু, মাঝে মাঝে 
দগ্ধ কিছু শব্দের দৈত্যশালী আক্রমণ
চিহ্নের পরাক্রমী রূপময়তাকে বন্দি বানায়


সৌমী আচার্য্য


 



আড়াল


কেওনঝড় থেকে ফেরার পথে ছোট্ট চায়ের দোকানটায় নেমে পড়েছিলাম। বৃষ্টি হয়েছে গতরাতে। মৃদুলা কিছুতেই থাকতে রাজি হল না ফলে আমার পরিকল্পনা জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরতে হল। এখানে রাস্তাটা বেশ উঁচু। পাহাড় ঠিক না তবে উঁচু টিলা। টিলার টঙে দোকানে পিছনে বেশ খাদ মতো, নীচে জলাটা বর্ষার জলে থৈ থৈ। ওড়িশার অন্দরে গাছের প্রাচুর্য যথেষ্ট। দোকানির চোখ কোটরগত তিক্ষ্ণ, বেঁটেখাটো তৎপর ভঙ্গি। মৃদুলা বহুক্ষণ থেকেই কিছু খুঁজছিল বুঝতে পারছিলাম। ড্রাইভিং সিটে থেকেও বিষয়টা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। ভাবলাম টয়লেটের প্রয়োজন হয়তো। যদিও মনটা খিঁচড়ে ছিল বলে আগ বাড়িয়ে কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি। অনেকগুলো টাকার দণ্ড গেল। এখন আবার নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। চায়ের দোকানটা খানিকটা স্বস্তি দিল। গুছিয়ে বসে ঘন দুধের চা, বাদাম দেওয়া বিস্কুট আর ডবল ডিমের অমলেট খেতে শুরু করলাম। মৃদুলা উল্টো দিকের বেঞ্চে বসে লঙ্কা বেছে অমলেট খাচ্ছে। ওর সঙ্গে দূরত্বটা এখন অসহ্য হয়ে উঠেছে। পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে কিছুই মেলেনি আমাদের। তার উপর বছর বত্রিশের মৃদুলাকে এখন একটু বয়স্ক লাগে, বোধহয় ওজনটা বেড়েছে বলে। তাছাড়া সবেতেই তো অসন্তুষ্ট। মুখে সেই ছাপটাই বড় হয়ে ফুটে ওঠে। বিরক্ত লাগে বলেই তাকাই কম। এখন চা খেতে খেতে দেখি কিছু খুঁজেই চলেছে। বৃষ্টিটা শুরু হল আবার। টিনের চালে ঝমঝম শব্দ বাড়তে থাকল। দোকানি গলা তুলে বলল, দাদা আর কিছু লাগবে? আরেক কাপ চা চেয়ে নিলাম। ইতিমধ্যে একটা বাইক এল দুজন আরোহী নিয়ে। কালো রেনকোট পরা লোকদুটো নেমেই সিগারেট ধরাল, মনে হল লোকাল। অনর্গল ওড়িয়া ভাষায় তুমুল কথা বলছে। ওড়িয়া বুঝি কিন্তু বলতে পারিনা। কথাগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং।

-যাদের বেশি টাকা তাদের ওরম হয় আমাদের হয় না।

-বাজে কথা বলিস না, রঞ্জাকুমার টাঙি দিয়ে বউটাকে খাটো করে দেয়নি। কাটা মুণ্ডুটা বিস্ময়ে ভয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিল। আর মুকুর! নিজের বাপকে মেয়ে হয়ে বিষ দিতে দুবার ভাবেনি। ওসব বড়োলোক গরীবলোক কোনো ব্যাপার না। শালার রিষ সকলের মধ্যেই।

-তবু ওরা সব পারে আমরা পারিনা। আমার বউয়ের ঢিলা শরীর, কষকষে গলা আর আবর্জনার মতো মন তবু কি এমন ভাবতে পেরেছি।

-হয়তো এমন কিছু আছে তুই আমি বুঝতে পারছি না।

-তুই শালা এদের হয়ে এত কথা বলছিস কেন?

ওদের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। পয়সা কড়ি থাকলেই লোকের জ্বালা ধরে অনেকখানি। তবে এদের ভিতর আরও কিছু গোপন কথা লুকিয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে। মৃদুলা খাওয়া শেষ করে মোবাইলে একমনে কিছু দেখছে। লিখছে। ছবি তুলছে। আমি ওর ফ্রেমে আসছি তবু সরছে না। সেই প্রথম দিনগুলোর মতো। একটু যেন হাসল। আমি ভুল হতেও পারি। এখনঢ়কটা বাজে? চমকে উঠলাম। এতক্ষণে সবটুকু সমাধান হয়ে যেত হয়তো। ছেলেদুটো মন দিয়ে মোবাইল দেখছে। আমাদের দিকেও একবার যেন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। সেই হানিমুনের দিনের স্মৃতি ভেসে এল। 

রাবাংলায় এক মনোরোম পরিবেশে ছিমছাম হোমস্টেতে নতুন বউ নিয়ে উঠেছিলাম। পাশের ঘরে চার বেহেড মাতাল। মৃদুলা তখন মোটামুটি সুন্দর। সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে মাতালগুলো। শেষে বউকে বগলদাবা করে সোজা গ্যাংটক। জমজমাট এমজি মার্গে বিখ্যাত হোটেলের তিনতলায়। আজও একটা অস্বস্তি হচ্ছে। চেয়ার ছেড়ে মৃদুলার দিকে এগিয়ে গেলাম।

-কিছু বলবে? কিছু লাগবে?

-নাহ্, এখানে তোমার পাশে একটু বসি।

-আমার পাশে? হঠাৎ! কেন তোমায় আজ কেউ ফোন করেনি, ওহো এখানে বোধহয় নেট ওয়ার্ক নেই না!

এত অপমান! ভুলে গিয়েছে নিজের যোগ্যতা! ওর বাবার দু কামরার ওই বাড়িতে কিছুই ছিল না অভাব ছাড়া। রানী করে রাখতে না চাইলেও অভাব কিছু দিইনি কিন্তু বিনিময়ে জুটল কেবল জ্বালা। একটু যদি নরম সরম হত এতকিছু ভাববার দরকার হত না।

-কী হল উঠে যাচ্ছ যে?

-আমি থাকলে তোমার বোধহয় ভালো লাগবে না।

-নাকি আমায় ভালো লাগছে না!

-আমি কিন্তু বসতেই এসেছিলাম।

-তাহলে যাচ্ছ কেন?

-তুমিই তো প্রশ্ন তুললে।

-প্রশ্ন তুললাম বলে চলে যাবে? আত্মপক্ষ সমর্থন করলে না?

-তোমাকে আমি বুঝতে পারিনা। কী চাও তুমি?

-বুঝতেই পারোনা যখন তখন আর জানতে চাইছো কেন? আমি বললেই কি তুমি বুঝবে?

কথা বাড়িয়ে লাভ নেই উঠে চলে আসি দোকানটার পিছনে। চমৎকার জায়গা। দূরে নীচে ছককাটা জমিতে কত রঙের বাহার। এখানে মাটির রঙ লালচে কাঁকুড়ে। রেনকোট পরা একটা ছেলে এদিকেই ঘুরছিল, পরিস্কার বাংলায় বলল, আপনার পিঠের উপর কাঁটাকাঁটা ধারালো খোলস আছে, আমি দেখতে পাচ্ছি। খুব চমকে উঠলাম। অপিরিচিত কেউ এমন ভাবে কথা শুরু করেনি কখনো। ওর মুখে বেশ পুষ্ট গোঁফ, চোখ দুটি আয়তাকার, উজ্জ্বল, গায়ের রঙ কালো। আমি বেশ মজা পেয়ে বললাম, তোমার গল্পের বড়োলোক মানুষদের এমন খোলস আছে? ছেলেটি চমকালো না, বলল, আপনার লুকানো সত্যিগুলোর মধ্যে একটা অবৈধ যৌনতার গাঢ় ছাপ। আপনি আদতে গিরগিটি। এবার একটু রাগ হয়ে গেল।

-কে মশাই আপনি না জেনে বুঝে যা খুশি বলছেন?

লোকটা গায়ের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, কত টাকা নষ্ট হল আপনার? এবার আর চমকে উঠছি না। কেবল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললাম, আপনি বেয়ারা, অসভ্য। আমার এখান থেকে যান।

-যান বললেই যাওয়া যায়? ধুস্ কী যে বলেন আপনি। দেখুন কেসটা খোলসা করে বলুন দেখুন আমি ঠিক সমাধান বলে দেব। এটাই আমার কাজ।

-কী কেস কী সমাধান?

-ওই যে মুক্তি খুঁজছেন। আসলে মনের অন্ধকারে আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন না তাকে খোঁজা এবং সমাধান দেওয়া আমার কাজ।

যত্তসব বলে লোকটাকে এড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। পিছু নিল নির্বিকার ভাবে। আবার গা ঘেঁষে এল। অণ্বেষা ম্যাডামের ডান গালের তিলটা সত্যি মারাত্মক। আপনাকে পুরোপুরি দোষ দিতে পারছি না। তবে ব্যালেন্স করে কিন্তু চলতে পারেন। অবশ্য আপনার একমাত্র জ্যেঠার ছেলে বলে কথা তাই এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এবার আমি ভয় পেলাম, ঘাড়ের নীচে একটা স্রোত বয়ে গেল। লোকটা বড্ড বেশি জানে কিন্তু কী করে? চোঁয়া ঢেকুর উঠে এল গলা বেয়ে। দিনটা চোখের উপর খোঁচা দিতে শুরু করেছে। 

-আপনার জ্যেঠতুতো ভাই অবশ্য যাকে বলে অপদার্থই ছিল। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো স্বভাব। বাপের অগাধ সম্পত্তি দিয়ে রাস্তার ছেলেপুলেদের পড়া শেখানো, আরে ছ্যা ছ্যা। তার উপর অমন সুন্দর বউ দিনের পর দিন একা। আচ্ছা অণ্বেষা ম্যাডাম দারুণ আবৃত্তি করে না! শুনেছি ওয়াইন এক্সপার্ট উনি? আবার ককটেল বানাতেও দক্ষ। তার উপর ওমন ফিগার। এমন বউ রেখে...আপনি বিরক্ত হচ্ছেন তাই না! তবে লোকটাকে বিষ না খাওয়ালে আপনার সত্যি চলত না, অত বড় সম্পত্তি একেবারে পথে চলে যেত। ভালোই করেছেন তবে অণ্বেষা ম্যাডামকে ট্যাকেল করা একটু কঠিন তাই না!

লোকটার একটা কথাও আমার কানে ঢুকছে না। কেবল মনে হচ্ছে আমার আর অণ্বেষার দীর্ঘ বছরের গোপন সম্পর্ক লোকটা জানল কী করে? জ্যোতিষ্ক বিয়ে করেছিল আমার আগে। বিয়ে শেষে বাসর ঘরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। আমি তখন বরকর্তা। অণ্বেষা দাঁড়িয়েছিল ব্যালকনিতে। অপরূপ সুন্দর। ওর চোখে অপমানিত আহত কালনাগিনী। আমি পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, মন খারাপ করছে? বর ঘুমাচ্ছে বলে? ও সোজা আমার মাথা টেনে ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিয়েছিল। হতভম্ব আমি সামলে নিতে সময় নিয়েছিলাম। ততক্ষণে সরে গিয়েছে অণ্বেষা। আমি চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম, ভাইয়ের দোষে আমি শাস্তি পেলাম, তুমি আমার ছোটো এবার তোমায় আমি শাসন করি? 

-নাহ্ শাসনটা তুলে রাখুন, কাল, পরশু কাজে লাগবে।

সত্যিই কাজে লেগেছিল। যদিও আশ্চর্য উদাসীন অণ্বেষা। ইচ্ছে মতো পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে যেত। হাতটুকুও ছোঁয়া যেত না। এদিকে বাড়িতে বিয়ের চাপ। 

-বিয়েটা করে নিন শশাঙ্কদা। বিয়ে করলে জীবন সুন্দর হয়। যেমন আমরা খুব ভালো আছি।

জ্যোতিষ্ক ক্যাবলার মতো বলেছিল, ধুর তুমি কোথায় ভালো আছো? আমি তো একটা ওয়ার্থলেস। বড়দার মতো লোক হলে তোমার জীবন সুন্দর হত। অণ্বেষা তিক্ষ্ণ তাকিয়ে বলেছিল, পারফেক্ট ম্যাচ বলে কিছু হয় না সবটাই প্রয়োজন। তোমার অর্থ আমার কাজে আসে জ্যোতিষ্ক। সেটা অস্বীকার করা যায় না। মৃদুলাকে পেয়ে প্রথম প্রথম সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করলেও একেবারেই ব্যর্থ হয়েছিলাম। তাই পরের দিকে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। সেদিন খুব শীত ছিল। লোকটা আবার ঘন হয়ে এল।

-আচ্ছা সেদিন সন্ধ্যায় অণ্বেষাম্যাম আর আপনাকে কি হঠাৎ উনি দেখেন নাকি ওটাও আপনাদের দুজনের ছলনা। আসলে জ্যোতিস্ক বাবু সেদিন রাতে ফিরবেন এবং আপনাদের আবিস্কার করবেন এটাই চেয়েছিলেন? আচ্ছা আপনাদের ওইভাবে দেখার পরেও উনি আপনার সাথে বসে মদ খেতে রাজি হলেন?

লোকটার দিকে তাকিয়ে খানিক হাসলাম। সবজান্তা লোকটিকে বললাম, সব জানতে চান কেন? লোকটিও ব্যঙ্গ করে হাসল, আপনার মুক্তির জন্য। খ্যা খ্যা করে হেসে বললাম, ওই যে আমার স্ত্রী বসে আছেন যান গিয়ে ওকে বলুন আমার জীবন থেকে চলে যেতে তাহলেও আমার মুক্তি। লোকটা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল হঠাৎ।

-অথবা আপনি সরে গেলে মৃদুলার মুক্তি।

-মানে?

-মানে মৃদুলা বিয়ের দিন থেকেই আপনার আর অণ্বেষার সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিল। বুঝেছিল অমোঘ টান আপনার। তবু চুপ করে ছিল কারণ প্রয়োজন তারও আছে। আবার যেমন ধরুন সমীরণ আজও তাকে ভালোবাসে। বহুদূর থেকে ছুটে যায় তার মৃদুলাকে দেখতে একটু ছুঁতে। 

-কী কী বললেন আপনি? মৃদুলার গোপন প্রেমিক আছে?

-বাহ্ আপনার থাকতে পারে তার নয়?

-না ভাবছি এই ঢিলে, স্হূল, অকেজো শরীর কার হৃদয়ে দোলা দিল।

লোকটা হাহাহা করে হেসে উঠল। চমৎকার নাটকীয়তায় বলল, আপনি নিজেকে সুদর্শন ভাবেন তাই না! দাঁড়ান আপনাকে একটা রেকর্ড শোনাই। মোবাইল বার করে বোতাম টিপতেই ঘ্যাঁশঘ্যাঁশে শব্দ বেড়ে চলল, তারপর হঠাৎ ভেসে এল সুর, দানবের মৃত্যু হোক অঘটন। সূত্র থাকবেনা এমন দাবী করিনা তবে সূত্র হবে দুর্ঘটনার সপক্ষে। যার চরিত্র নোংরা, যার রূপ ভয়ংকর কদর্য, তার মৃত্যুও ভয়াবহ। মুখটুকু দেখবার মতো না থাকলেও চলে। আওয়াজ বন্ধ হতেই লক্ষ্য করলাম আমার খুব ঘাম হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি আবার দোকানের পিছনের দিকে হাঁটা লাগাই। লোকটা এগিয়ে আসে কাছে।

-গলাটা কার স্যার? আপনি চেনেন? আপনাকেই বলছে না তো এসব?

অসম্ভব রাগে কাঁপতে কাঁপতে লোকটার মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই পা হড়কে গেল। খানিকক্ষণ শূন্যে হাতড়ে গেলাম। শেষবার ভাবতে চাইলাম গলার স্বর কার? মৃদুলার নাকি অণ্বেষার? আকাশের বুকে লোকটার মুখ দেখলাম, কানে ফোন নিয়ে চাপা স্বরে বলল, শিকারীর শিকার হল এইমাত্র।













চয়ন ভৌমিক






 যে ভাবে সংলাপ নিভে যায় 



 ক্রমশ কথা কমে আসে। 

সময়ের রাস্তা মিশতে চায় না
আশ্চর্য নির্লিপ্তিতে। 

যে মুখর জনপদ, উন্মুখ ছিল
হাটের প্রতিটি পসরায় - 
সে-ই আজ স্তব্ধ হয়ে আছে বিসম্বাদে... 

আসলে, এই বিচ্ছেদ অনিবার্য 

যে ভাবে ট্রেনে চড়ে দূরত্ব বাড়ায়
বিষণ্ণ ধ্রুবতারাটি, নির্মোহ বটগাছ

সে ভাবেই মরীচিকা হয়ে যায় একদিন সব মরুদ্যান। 

পরিত্যক্ত ভূমিতে পড়ে থাকে 
কিছু বিক্ষোভ ও অস্পষ্ট চাকার দাগ।।

সৌমনা দাশগুপ্ত

 


তিমির অবগুণ্ঠনে


ফিসফিস করে এক কলববর্জিত দেহ

#

শরীর কি মাছরাঙা, পোড়া এক বিলাবল ঠাট

পালকের ধারে-ভারে ঝুঁকে পড়া গাছ

#

পাথরযুগের থেকে তিমির রঙের গান

লৌহ আকরের ঘুম ভেঙে যন্ত্রের মর্মর

#

পাতারা এসব ভুলে বারবার ফুটে ওঠে

আকাশের শরীরের তরল সবুজ

 

এ এক পান্থনিবাস, কথা আসে কথা চলে যায়

#

অযথা বিভ্রমে তাকে ভেবে বসি ঘর

আদৌ ঘর ছিল কি দেহের মাঝে

#

দেরাজের ভাঁজে ভাঁজে মৃত টিকটিকি

ভেজা ফসিলের গান, ছায়ার পায়ের দাগ

#

কীটনাশক ছড়িয়ে দিচ্ছি শস্যবিছানায়

পেট্রলে চুবিয়ে রাখি স্বপ্নের হাড়গোড়

#

ঘুম আসে ঘুম নিভে যায়

পাখি আসে পাখি নিভে যায়

 

সাজানো মঞ্চের থেকে একে একে নেমে যায় স্বপ্নেরা

#

তূণীরে যে তির রাখা সে-ও তাক করে তোমাকেই

আভোগে ও সঞ্চারীতে লেগে ছিলার অহংকার

#

তুলে নাও হলাহল

এ-সাগরে পাথর মাছের বিষবমি

গানে ও লবণে তাকে ভাসাও ডোবাও

#

নজরমিনার থেকে যে তোমাকে আঁধার চেনায়

সেই মেঘটির কাছে রাখা আছে আগুন-পাথর

#

তুলে নাও চকমকি, ঘষা লেগে জ্বলছে অক্ষর

 

পায়ের পাতায় শুধু আঙরার দাগ, পারঅক্সাইড-ক্ষত

#

একলা ঈগল ভাসে, ভাসে তার ডানার দ্রাঘিমা

তোমার মুখের ছবি তার মুখে

তোমার ছায়ার শব তারই ছায়ায়

#

এসো ওই ছায়াটির কাছে বসে দু-দণ্ড জিরোই

ঢাকাচাপা দিয়ে রাখি ঘামের প্রপাত

হাওয়ায় পেতেছি ফাঁদ, জানি একদিন ধরা দেবে

ঘুমকুঠুরির থেকে আসবে ঠিকই উড়ে অচিন পাখিটি

#

তুমি তাকে শমন বলেছ, আমি বলি শ্যামরায়

 

ভাষার বাগানে মাছি খুঁটে খায় গহন নির্যাস

#

মাংসের আবরণ খোলো, খুলে রাখো নিভাঁজ অব্যয়

অ-কার ই-কার খুলে শব্দ থেকে বেরিয়ে আসছে

উদোম অক্ষর যত, বোবাগাছে ঝুলছে অক্ষর

#

হাড়িকাঠে নিচুমাথা শুয়ে আছে আমার শব্দেরা




মধুমিতা বসু সরকার





১। আলমারি ভর্তি সারিসারি জামা কাপড়ের নিখুঁত ভাঁজে তুমি কি ভীষন ভাবে প্রকট -
অথচ কাছে থাকার সময় অভ্যাসে তোমার গায়ে মনে রাখার মতো কোনও ঘ্রাণ --
অলিখিত চুক্তি ছিল কেবল -

২।  দুপুরগুলো এত দীর্ঘস্হায়ী কেন?
এতো অপেক্ষার পর হাঁপরের শব্দ বুকে
বৃষ্টিতে সব টুকু ভেজেনা -
স্মৃতি কি কখনোও ধুয়ে ফেলা যায়? 

৩। বিরহ লিখি, যে কথা কাউকে বলা যায়না মুখে
ভাগ্যিস শব্দ ছিল, তাতে অর্থ বসাই -

  ৪।   নিঃসঙ্গতা! সব মানুষের  
ক্রমাগত একা হয়ে যাওয়া
বেলা অবেলায় কিছু কি পাওয়ার থাকে -
নিবিড়ে স্বজন বিয়োগ, শোক, তাপ
কবিতার  আঙ্গিক জুড়ে আবহমানকাল --

৫।  প্রথম চুম্বনের স্মৃতি তেমন মনোগ্রাহী ছিলোনা জ্বরতপ্ত ঠোঁট 
প্রেমের অসুখ বোঝার মতো বয়স হয়নি তখনোও
অতর্কিত,
যে কোনও বিপ্লবে আবহাওয়ার পুর্বাভাসের মতো কিছু সংবেদ --
তোমার বাহুবলে আমি ডানা ঝাপটানো পক্ষিশাবক - জোরপূর্বক  যাওয়ারকালে 
কোনও সুখস্মৃতি রেখে যেতে পারোনি -- 


সুবীর ঘোষ

           



বর্ষা এলেই


 

 

বুঝতে পারিনি বিকেলের শেষে ফর্সা আকাশ জাগবে,

সকালের সেই কান্না-চোখ যে পাল্টাবে ভাবা যায়নি

আমার তো ছিল বান্ধবদের মহলা যাবার দায় ---

কিছুই হল না , শুধু একা ঘরে নগ্ন নিজের নাচ

 

বর্ষা হলেই মনের ভেতর আকাশ ভাঙার পাট,

প্রহরে প্রহরে জর্জর করে সুখশরীরের যোগিনী

সেই তো একদা শিখিয়ে দিয়েছে নীললালরংবাহারে ---

বৃষ্টির জল ঘরে ডেকে এনে শয্যাপ্রচার খেলতে






নন্দিতা দাস বসু

     


এলোমেলো কথারা...


মনখারাপের অলিখিত সুরে
বেজে ওঠে হঠাৎ ভৈরবী,
ইমনকল‍্যাণ কবেই নিয়েছে ছুটি
মল্লারের অস্থায়ী জলছবি;

আকাশে এখন বসন্তরাগ ভেসে
যদিও অবকাশে কালবৈশাখী আসে,
গন্ধরাজের পাগলপারা মন
স্নিগ্ধ জুঁইয়ের মাতাল আবেশে:

একটা দুটো এলোমেলো কথা
বুনতে চায় মস্ত উপন‍্যাস,
কথার পিঠে কেবল কথকতা
দাম্পত্যের নির্মেদ সহবাস;

নাগরদোলার হুল্লোড়ে আব্দার
রাখতে চাইছে মেলার আগুন্তুক-
তবুও আসে রংবেরঙের ইচ্ছে
বাউলকবি যেমন খুশী সাজুক;

কিছু স্বপ্নে অলীক ভাবনা মেশে
কোনটায় বা আগামীর অপেক্ষা ,
হয়তো বা আছে অজ্ঞাত ঈশারা
গোল্লাছুটে পেতেও পারো রক্ষা ;

সম্পর্কের গোলকধাঁধায় শুন‍্য
বদলায় শুধু তোমার আমার স্বপ্ন,
এক পলকেই সবটুকু অগোছালো
বেঁচে থাকুক স্বার্থহীন যত্ন.. 

স্বপন রায়

    





বকপাতি 

.......................................

কী ঠাণ্ডা তোমার মুখ

শরীরও

যে শরীর শীতলপাটির


কে যেন সব ছেড়ে পড়ে আছে

                        কে যেন ছেড়ে দিচ্ছে বলে অফস্টাম্প

যত ঘুম বাঁ-দিকে

যত জেগে ওঠা ড্রাইভ ডানদিকের কোণায়

ঈলতুঁতে তিল

                 

বল ছেড়ে দিই

ধরে আর কি হবে যখন সেলাই তাকিয়ে আছে 

                         কাজ করার সময় আছে আছে

লম্বা নাইটশিফট

চা

বিয়ারিং-এ সাপ্টানো বল 

জ্যোৎস্নাক্যাঁচালে

শাদাটে


এল কারুবাসনাময় শীত

কারখানা

চাখানায়

ঠাণ্ডানিদান শুধু 'যেদিকে দুচোখ যায়'

কুয়াশায় 


কোনও মুখই আর সীমানা হতে চাইছে না...


.....

হাতপাতি

....

বাড়ি ফেরার দিকে ঘর 

ঘর আবার বাসাও

মালঞ্চ, দেখি মালঞ্চের বেড়া


তোমাকে না দেখেও তুমি

আজ ডুবছে আমার সব

এই লক্ষীট্যারা কিওস্কে

আমি মুছে দেয়া আমি আবার কিভাবে বেড়া আর সজনেছায়া

তুমি আর রোলকল ‘তুমি আজ কত দূরে’ হ’য়ে

স্টিম


ঝিকঝিক রোদের আধারে ওড়া দুপাট্টা

আজও হাওয়ায়

ঘরে বাসায় বাড়িবাড়িতে ওড়ে

পাখি হয়


আমি

আমার রাইফেল চলল চলল

দরজা বন্ধ ছিল

ফেরার কথাও তো ছিল

আমি নক করছি করে যাচ্ছি

করেই যাচ্ছি

এখনো...