বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

রত্নদীপা দে ঘোষ

প্রিয় চোখ 


তখন আমাদের চলছিল খেলা দুজনের দুটি খেলা খেলার গলিতে দুটি পায়রা বকবকমের দাবিদার আমরা দুজনেই তুমি খেলতে খেলতে বাসছ ভাল আমি বাসতে বাসতে খেলছি আলো আকাশটা ছিনিয়ে নেবো , দেখবো কতদূর যারপরনাই তার পরিধি , দেখতে চাই ... আকাশের সাদা কণ্ঠের অরাউরি ... 

আলতোর তারাগুলি , আস্কারার চাঁদ, আমাদের কত যে মুস্কান দিয়েছে আর হাসির মালাই -রাবড়ি ... মঞ্জিলের হারমোনি... থৈ থৈ আমার রাতদিন ধুলোর লতা ... আমাদের সখের চাউনিরা ... লং ড্রাইভের অবিচল ... 

তুমি এখন আছ চোখ ? আমাকে বিসর্জনের পর কেমন আছ ? রাত বাড়লে এখনও অম্নি দূরবীন ? পাও কাছে চাকাহীন তারাদের ভ্রমণসঙ্গী ? ভ্রমসঙ্গী বটে ... হাঁটো এখনো নিজের ছায়ার সাথে ? আমার ছায়ার সাথে কথা কও ? খসে পড়া ঝিঁঝিঁদের শব্দ থেকে নিঃশ্বাস ? এখনো তেমনি ... তোপধ্বনির গর্ভ ফুঁড়ে পদ্মদীঘি হাত রাখে কপালে ? 

কেমন আছ চোখ ? পূর্ণকুম্ভে আছ কেমন ? রম্ভাবদলের প্রবল গদ্যকথায় ? লিপিচিত্র আছো , নারীপলির মাটিতে রগরগে বায়ুদূষণ ... আয়নার তন্বীদেহ ... কী চমৎকার ছোপ ছোপ নক্সা ... এমন নক্সাদার ধরিত্রী তুমি এর আগে আর দেখনিকো ... উত্তেজনার চিরুনী ক্রমশ ফালা ফালা ... মিহি সুতোর দাঁত ... এই কি প্রথম ? নাকি দ্বিতীয় ..., অথবা চতুর্থ তোমার ফিরে-ঘুরে তাকানো ... 

চোখ , তোমার কি ভুল হয় না কোথাও ? জ্বলে পুড়ে ছাই ? 
এই কি তোমার প্রকৃত সাজ ? সাজের অপ্রাকৃত লম্ফ ?
কী ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যাও সমস্ত চলে যাওয়ার দিকে ?
ফের কি করে আসো ফিরে কাছেআসা শ্রাবণের তীরে ? 

আমি জানি চোখ তুমি , চোখেও তুমি চোখেরও তুমি তুমি এক স্বচ্ছতা তোমার কোন সৌন্দর্যই পেশাদার নয় ... সামান্য বোহেমিয়ান ধাঁচের যে আঁচ তাই দিয়েই তৈরি তোমার পোশাক ... পাতা জড়ানো ফুটে ওঠা ইথার ... গতিতে অতীতে পূর্ণ তোমার পূর্ণতার গ্যালারি ... 

আজকাল আমিও আঁকি তোমার আঁকাগুলিকে আমিও করি ডালপালা , কখনো আহ্লাদী নদী ... একবার তোমার দেখাদেখি , এক কমলা রঙের তাকানোকে এঁকেছিলাম ... কী ডানপিটে তার দুষ্টুমি! দুষ্টুমির চূড়ান্ত নারসিসাস ... 
ছবির প্রান্তে অরোরা বরিয়ালিস ... বেসামাল পাতালের সামাল-সামাল জল ... 

আসলে কি জানো চোখ ... মন জয়ের ক্ষমতাই আসল সৌন্দর্য ... অন্তরালের রাজকীয় ঢাল ... তরবারির দৈত্যাকার ... এই যে তোমাকে দেখছি ... আর তুমিও আমাকে ... দুজনেই জেনে নিচ্ছি দুজনের জানাজানি ... এই যে খামখেয়ালির টুকরো টুকরো অংশগুলি বেঁচে উঠছে ... ভিজে তবকের পাহাড়ে চূড়ান্ত রূপোর বোদল্যার...সেই রেডিয়ামের রেওয়াজ আমাদের রূপো দিচ্ছে অঢেল , সোনাও ... আমিও দেখছি তোমার দেখাগুলিকে লিখছি কলমের কল্মিশাখায় ... তোমার না-দেখাগুলিকেও আচ্ছন্ন রাখছি ... যদি তুমি কখনো আমার না -দেখা গুলিকেও দ্যাখো ... আর লেখো আর সামান্য আঁকা দাও ... বেঁটে বেঁটে লম্বামনের নিখাদ সেতু করো , পরে নাও তোমার দূরত্বের চিত্রময়তা ... 

কেমন আছ ? চোখ ? 
আত্মহত্যার গ্লোরি থেকে সেরে উঠেছ ? 
কালো - নীলাভ ক্লান্তির সোডিয়াম থেকে ? 
আনাচে কানাচে কত যে কাঁচ পোকা ... কাঁচের প্রজাপতি 
ভালবেসেছ চোখ ? 
আবার ভালোবেসেছ ? 
ভালবাসতে গিয়ে ফের আবার ভাগাভাগি 
অনন্ত কদমের বকবকম 
খুঁটে খুঁটে খাচ্ছ ? যেভাবে আমার ? 
আমাকেও শালিখের চূর্ণী ? পরাশর নদীর ঢেউ 
কাঁপিয়ে আর হেসে উঠছ ... তুমি বড়ো আনাড়ি 
সঠিক তাপমাত্রায় কাছে আস্তে জানো না ... 

তুমি যে ঘেমে - নেয়ে একথালা স্নান হয়ে আছ যে চোখ 
আমি কাঁদছি আর তোমার ভারি কাঁধের ওপর 
নামিয়ে রাখছি কথা 

তুমি কথার বেদীতে স্থাপন করছো আমাকে 
আমার ভেতরে স্থাপন করছ পরমেশ্বর সচল স্থির 
আমার ভেতরে জন্ম নিচ্ছে ব্রহ্মের চেতাবনি 
চেতাবনির ভেতরে জন্ম নিচ্ছে তড়িৎ চুম্বকের চুম্বন 
ব্যক্তিগত নয় , কেজো নয় অদৃশ্য এক দৃশ্যের আভরণ ...

আদরের ভেতরে জড়িয়ে নিচ্ছ আমাকে 
আমার ভেতর চারিয়ে যাচ্ছে কান্না 
তুমি বলছ , এখুনি নিভে যেও না 
জেনে রাখো 
কান্নাই শ্রেষ্ঠ তপোবন 
কান্নাই একমাত্র পদ্মাসন ... 

কেমন আছ চোখ ? 

তোমার সাথে কথা কইলে 
প্রতিটি হোমের আগুন যে 
এক পৃথিবী উপনিষদ ..

ইতি 
তোমার দৃষ্টি ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন