বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

বনবীথি পাত্র


দৃষ্টি_ভঙ্গী 

.
(1)
দোকানটা বন্ধ করার আগে হৈমন্তীর প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্টটা আরো একবার করুণ দৃষ্টিতে দেখছে অঞ্জন
রিপোর্ট নেগেটিভ
এবার বড্ড আশা করেছিল দুজনেই  
দাদা আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্সি , জোরালো দেখে একটা ওষুধ দিন তো ....
পনের বছর ওষুধের দোকান চালাচ্ছে , মহিলাটির ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে বাকী কথাটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়না অঞ্জনের
মনের দৃষ্টিতে ভেসে ওঠে হৈমন্তির কান্নাভেজা মুখটা !!!!!
.
.
(2)
মোবাইল থেকে যতবার চোখ তুলেছে শ্রীজিতা , ভিড়ে বাসে পাশে দাঁড়ানো বুড়োটার সাথে চোখাচোখি
উফ্ অসহ্য....
এই বয়সেও মেয়েদের প্রতি নোংরা দৃষ্টি দেওয়ার স্বভাব যায়নি বুড়োটার আজ একটা চরম শিক্ষা দেবে বুড়োটাকে
উঠে দাঁড়িয়েই এক থাপ্পড় বুড়োটার গালে
ভবিষ্যতে মেয়েদের দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকানোর সময় এই থাপ্পরটা মনে রাখবেন
সারা বাসের লোক ছিঃ ছিঃ করছে
পরের স্টপেজেই নেমে যায় বুড়ো মানুষটা নামার আগে একবার পিছন ফিরে দেখে শ্রীজিতাকে চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি
জবার মুখটা মনে পড়ছে বারবার
ভগবানের চোখ নেই.....
নাহলে বুড়ো বাপটাকে ফেলে মেয়েটা অকালে চলে যায় !!!!!
.
.
(3)
ইস্ আমাদের কৃষ্ণার এমন রাজপুত্তুরের মতো বর হবে কেউ ভাবতেই পারিনি
বাব্বা বর-বৌ তো পূর্ণিমা আর অমাবস্যা
কেলটি মেয়েটার কপাল বটে , কেমন সুন্দর বর জুটেছে দেখো
চোখে পানপাতা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বিয়েবাড়ির পাঁচজনের ফিসফাস মন্তব্য সবই শুনতে পাচ্ছে কৃষ্ণা
কালো বলে ছোট থেকে মানুষের কাছে তো সে কম কথা শোনেনি !!!!
চারদিকে উলু আর শাঁখের আওয়াজ , শুভদৃষ্টি হচ্ছে চোখের পানপাতা সরিয়ে প্রথম দৃষ্টি বিনিময় কৌস্তবের সাথে .....
বিয়েবাড়ির লোকজনদের না বললেও দাদা কৃষ্ণাকে আগেই জানিয়ে রেখেছে , কৌস্তভের একটা চোখ পাথরের !!!!!
.
.
(4)
অ্যাই দুটো ভাত দিবি , কদ্দিন ভাত খাইনি .... 
একতলার বারান্দাটাতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার পরের ভিজে আকাশটা দেখছিল মানসী   পাগলিটার ডাকে চমকে ওঠে
ইচ্ছা করছিল না খায়নি দুপুরে , ভাত-তরকারি সব টেবিলেই ঢাকা দেওয়া আছে
খাবারগুলো এনে ঢেলে দেয় পাগলির ভাঙা অ্যালুমিনিয়ামের থালাটায় ভাতের সাথে মাছের টুকরোটাকে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখছে পাগলিটা
আর মানসীর দৃষ্টি পাগলিটার কোলে ছেঁড়া নেকড়ায় মোড়া শিশুটার দিকে
পাগলিটাও মা হতে পেরেছে !!!!!
.
.
(5)
....সাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে , আর কাঁদিস না

.... এখন তো ফোনে সবসময় কথা বলবি মা-বাবার সাথে , যখন ইচ্ছা চলে আসবি

....এমন কাঁদছিস মনে হচ্ছে বিয়ে হয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছিস্ , এই তো চল্লিশ মিনিটের পথ

ভালোবেসেই বিয়ে মৈনাকের সাথে , তবু বিদায়ের সময় কান্না থামাতে পারছে না ঋতু  
গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে সজল দৃষ্টিতে পিছনে তাকিয়ে থাকে , যতক্ষণ বাড়িটাকে দেখা যায় .....
একসময় দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় ঋতুর মেয়েবেলা
ঋতু ফিরলেও , মেয়েবেলাটা আর ফিরবে না কোনদিন.......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন