রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

আসমা সুলতানা শাপলা

গুরু পর্ব - ৫
আসমা সুলতানা শাপলা 

গুরু কিগুরু কেনগুরু কিভাবেতা জানলাম এখানে এসে। এই গুরুর সান্যিধ্যে। সেটা ১৯৯১ সাল। বয়স ১৭। মেঝোভাই এর সাথে এসেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে অ্যাডমিশন টেষ্ট দিতে। আগের দিন আমি আর মেঝোভাই কার্জন হলে সিট প্ল্যানিং দেখে ঢুকলাম বই মেলায়। তখন টি এস সি থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমী ছাড়িয়েও দোয়েল চত্ত্বর অবধি বিশাল বিস্তৃত ছিল 

বই মেলার পরিসর। যদিও বাঙলা একাডেমীর বাইরের অংশটায় বেশির ভাগই ছিল কবিতা আবৃত্তির ক্যাসেটের স্টল।তখন ছিল ক্যাসেটের যুগ। বিশাল বিশাল সাউন্ড সিম্টেমে বাজানো হতো নানা ক্যাসেটের কবিতার আবৃত্তি।একটা স্টল থেকে বাজছিল অসাধারন কন্ঠের আবিৃত্তি
-অনুরাধা তুমি কোনদিন পপি ফুলের নাম শুনেছপপি ফুল।
-পৃথিবীর সবচেয়ে দামী আর ছোঁয়াছে  জিনিষ
-এখন আমার ঘরে সেই ফুলের নিকষ ঘ্রাণ। ঝুরঝুর ছন্দময়। ঘর অন্ধকার।
-অথচ বাইরে পাখি ডাকছে বউ কথা কও বউ কথা কও
-তাহলে কি শাশ্বত দিন এসেছে?
আবৃত্তিকারের নাম আগেই জানি। মাহিদুল ইসলাম। আমি তখন তখন কিনে ফেললাম অভিমানের খেয়া। পরের দিন ক  ইউনিটের পরীক্ষার হলে বসে মনে হল আমি যদি সায়েন্স নিয়ে পড়ি তাহলে আমার আর আবৃত্তি কিংবা লেখালেখির সময় বের করা সম্ভব হবেনা। প্র্যা্কটিক্যালের ল্যাবে পড়ে পড়েই বিকেল সন্ধ্যে শেষ। আমি সাদা খাতা জমা দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হই। আর মনে মনে ঠিক করি আটর্স ফ্যাকাল্টিই আমার শেষ আশ্রয়। যথারীতি সাইন্সের কোন সাবজেক্ট এ চান্স না পাওয়াতে মায়ের কষ্ট পাওয়ার আর শেষ নেই। এত ভালো ছাত্রী তার মেয়েটা কেন যে কোন ভালো সাবজেক্টে চান্স পেলনা। এ আমার মায়ের সারাজীবনের আক্ষেপ। সে বছর ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিল ১৬০০ ছাত্রছাত্রী। আমি ভাগ্যের জোরে  ঘ ইউনিট দিয়ে মেধা তালিকায় ৯২ স্থান পেয়ে কোনদিকে না তাকিয়ে ঢুকে গেলাম বাংলা ডিপার্টমেন্টে। সিট নির্ধারিত ছিল রোকেয়া হলে। আমি নিলাম বাংলাদেশে-কুয়েত মৈত্রী হল। ক্লাশ শুরু হতে দেরী। কোনমতে ময়মনসিংহ এসে দিনরাত শুনি তার পড়া আর কবিতা। কত কত কবিতা মুখস্ত হয়ে গেল মাহিদুল ইসলামের পড়া শুনতে শুনতে। জীবনের দ্বিতীয় আর ঘটনা দূর্ঘটনা জয় পরাজয়ের সবিশেষ জীবন শুরু হল আমার তৃতীয় ঘরে। টি এস সি আমাার তৃতীয় ঘর। যোগ দিলাম স্রোত আবৃত্তি সংসদে। বলাই বাহুল্য তখন স্রোতের হাল ধরে আছেন মাহিদুল ইসলাম। আমার প্রথম কবিতার গুরু প্রথম আবৃত্তির গুরু।
ভীষন ভয়ানক তার ভাবসার। কী যে ভেবেছিলাম তার আবৃত্তি আর কন্ঠ শুনে। আর এসে দেখছি কীপৃথিবীতে এমনও লোক হয় যে হাসতে জানেনা। সারাক্ষন বকাই যার একমাত্র কাজ। এই একভাবে কবিতা পড়া দেখিয়ে দিলেন তো পরের দিন অন্য রকম। ভয়ে বলতেও পারিনা ‘‘গতকাল তো অমনই দেখিয়েছিলেন।‘‘ আর ওয়ার্কশপ সে তো এক মহা ভীতিকর স্থান। তার প্রথম শর্ত সকাল ৮ টায় ক্লাশ শুরু। এসে পড়তে হবে ৭ টা ৫৫র ভেতর। বাংলাদেশে কুয়েত মৈত্রী হল থেকে টি এস সি আসতে প্রায়ই লেট হয়ে যায়। আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কোন কোনদিন গুরুর দয়া হয় তো ক্লাসে ঢুকতে পারি কিন্তু যে ভয়ানক ক্রোধের সম্মুখীন হতে হয় তা ভাবলে আজকে যে ছেলেমেয়েরা ওয়ার্কশপে গুরুর হাসি হাসি মুখ আর মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনতে শুনতে দিন শুরু করে তাদেকে আমার কি যে হিংসা হয়সত্যি বলছি। দীর্ঘদিন প্রায় ২৪ বছর কাজ করেছি তার সাথে। তাই দীর্ঘ হবে এ গুরুর কথা কাহিনী...

(চলবে)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন