রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

মোহন গায়েন

"শিকার"
                       
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!


প্রধান চরিত্রে:-মামা(গোয়েন্দা) এবং আমি(সহকারী)
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
                     
গঙ্গাজলে কিভাবে গঙ্গা পুজো করতে হয়, তা আমার মামা বেশ ভালোভাবেই জানেন | যদিও আমাদের এই পূজার্চণা পর্ব বিগত কয়েকমাস ধরে একটু ঢিমেতালেই চলছিল ....এর পিছনে মামার কর্মব্যস্ততা আর আমার পরীক্ষা এসব ছোটোখাটো এক্সকিউজ দেওয়াই যায় | তাছাড়া আমার মামা শখের গোয়েন্দা ....নিজের কাজকর্মের ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন | যাহোক, এবারের তদন্তভারটা মামা কিছুটা স্বেচ্ছায়ই নিয়েছিলেন,বলা যায় | পাশাপাশি আমার পরীক্ষাও শেষ,তাই আমিও কিছুটা হেল্প করতে পারবো, এই অনুকূল পরিস্থিতির কথাটাও হয়তো তাঁর মাথায় ছিলো |
      ঘটনার সূত্রপাত মাস চারেক আগে | আমাদের ফেসবুক পেজ "The Amateur Detective"-মারফৎ আমাদের Client-এর যোগাযোগ হয়েছিল এবার | ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী, মেয়েটির নাম 
"JH AR NA"....সম্ভবত ঝর্ণা(Jharna) নামটিকেই একটু কায়দা করে লেখা হয়েছে | পেজের ইনবক্সেই সে জানিয়েছিল তার সমস্যার কথা | সে লিখেছিল,📧📩
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
Dear Sir,
        Hope, you are all well.I'm a blind fan of this page with its thrilling stories of different criminal cases, solved by you.Sir, I'm in great problem. Yesterday, I got a message on messenger from a fake account with a nude picture of me. I have no idea who this person is or how he got my pictures. He says that if I "listen to him" (still not sure what this means as he won't tell me) he'll tell me who he is and who sent him the pictures.I have no idea who could be doing this.He has threatened me that unless I listen to him, I've to suffer for that.I don't want to get the police involved here.
        I'll be highly obliged if you kindly come to my house (at the address given on my fb profile) & investigate the case.
thanking you,
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
যে সময়ে মেয়েটি তার সমস্যার কথা জানিয়েছিল তখন মামা দেশে ছিলেন না | মামার এক প্রবাসী বন্ধুর হোটেলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এক বিস্ফোরণের তদন্তের কাজে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় | আর সেসময় আমারও ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল ....
তাই সেই মুহূর্তে মেয়েটির অনুরোধের প্রত্যুত্তরে মামা লিখেছিলেন,"Living abroad.Busy."
যাহোক,কিছুদিনের মধ্যে মামা দেশে ফিরলেন | তবে এরপর মেয়েটির কাছ থেকে আর কোনো রেসপনস্ না পাওয়ায় কয়েকমাসের মধ্যে আমরা বিষয়টি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম | 
             হঠাৎ একদিন খবরের কাগজে চোখ বোলানোর সময় একটা খবরের শিরোনামে আমার চোখ আটকে গেল ……
"ফেসবুকে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি পোস্ট: আত্মঘাতী তরুণী" 
তৎক্ষণাৎ আমার মনে পড়লো ঝর্ণা নামের সেই মেয়েটির কথা ....খবরটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম ....যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই ! সেই একই নাম .....একই ঠিকানা !! এক প্রচ্ছন্ন অপরাধবোধ যেন আমাকে ঘিরে ধরলো !
ইশ্!এতদিনে একবার অন্ততঃ মেয়েটির খোঁজ কেন নিলাম না !! তক্ষুণি মামাকে ফোন করে জানালাম বিষয়টি ...>
*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপগড়ে | মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে;অর্থাৎ আমার হস্টেল থেকে প্রায় আধঘণ্টার রাস্তা | 
             জনশ্রূতি অনুযায়ী,এই জায়গাটি মহাভারতের বিরাট রাজার স্মৃতিবিজড়িত | শোনা যায়, এখানে  বিরাট রাজার গোশালা ছিল; যেখানে পাণ্ডবরা দীর্ঘ এক বছর অজ্ঞাতবাস করেছিল(জানিনা এখানে আমাদেরও অজ্ঞাতবাস করতে হবে কিনা) | পরবর্তীকালে গোপরাজারা এখানে রাজত্ব করেছিল | এরকম পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন জায়গায় যাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে অনেকদিন আগে থেকেই আমার ছিল ....তবে সময় হয়ে ওঠেনি | কিন্তু এবার তো বাধ্য হয়ে যেতেই হবে গোয়েন্দাগিরি করতে | সুতরাং এবার 'এক ঢিলে দুইপাখি' পড়ছেই !
      পরীক্ষার পর আমি হস্টেলেই ছিলাম | আর মামা ছিলেন কোলকাতাতে | তাই আমার ফোন পেয়ে সেদিন দুপুরের মধ্যেই মামা পৌঁছে গেলেন মেদিনীপুর শহরে | 
                  আমার হস্টেলে আসার আগেই উনি গোপগড় থেকে ঘুরে এসেছেন একবার | ওখান থেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে,ডেডবডি  আমাদের হস্পিটালের মর্গে আছে | খবরটি শুনে, হাতে যেন চাঁদ পেলাম | আমরা এমন এডভান্টেজ পাবো ভাবতেই পারিনি ....কারণ আমি নিশ্চিত যে, ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেণ্টের আমার পরিচিত সমর স্যারই ঐদিন পোস্টমর্টেমটা করবেন | ইচ্ছে করলে আমিও ওখানে উপস্থিত থাকতে পারি |
'শুভস্য শীঘ্রম্' একথা বিবেচনা করে তখনই ডিপার্টমেণ্টে গিয়ে স্যারকে সবকিছু খুলে বললাম .....উনিও সর্বোতভাবে আমাদেরকে সাহায্য করতে রাজি হলেন |
          সেদিন দুপুরের পর পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা আমার হাতে দিয়ে স্যার বললেন,"এই রিপোর্টের মধ্যে একটা ভয়ানক সত্যি লুকিয়ে আছে ,যেটা তোমাদের তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে | বলতে পারবে সেটা কী?"
         রিপোর্টটায় চোখ বোলাতে গিয়ে যা দেখলাম,তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল !                                    
¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡
রিপোর্টে স্পষ্টভাবেই উল্লিখিত আছে, "Death was due to the effects of hanging which was suicidal in nature & She had 16 weeks pregnancy at the time of her death."অথচ Patient particulars -এ পরিষ্কারভাবে লেখা আছে,
Name:Jharna Roy,Hindu unmarried female.
Age:18yrs.....
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদুহাস্য করে বললেন,"কি বুঝলে গোয়েন্দাবাবু?"
আমি বিড়বিড় করে বললাম,"The unmarried girl was pregnant when she died !!!!"
--Then can u guess, what is the exact cause of death?
--Yes sir; কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি ....তবে এখনি সবটা বলা সম্ভব নয় ....Exact cause of death-এর রহস্যভেদটা তো মামা করবেন !!
--হুম,সম্ভবতঃ আত্মসম্মান বাঁচাতেই ঐ তরুণী গলায় ফাঁস লাগিয়ে 'আত্মঘাতী' হয়েছে ....শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি | যাহোক,মেয়েটির ভিসেরাগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে ....দরকার পড়লে ডিপার্টমেণ্টে যোগাযোগ করবে |
      মর্গের বাইরে এসে দেখি কৌতূহলী জনতার ভিড় | দারোগাবাবুকে সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যে মামাও এসে উপস্থিত হয়েছেন হস্পিটাল চত্বরে | মৃতার পরিবারের লোকজনও এসেছে ডেডবডি নিয়ে যেতে | যাহোক, একটা জেরক্স কপি আমাদের কাছে রাখার পর রিপোর্টের আসল কপিটা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে সেদিনের মতো আমরা হস্পিটাল থেকে বিদায় নিলাম |
       পুলিশ ইতিমধ্যেই মেয়েটির সহপাঠী কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ও তাদের বয়ান নথিভুক্ত করেছে | এছাড়া মেয়েটির ফোনের কল-লিস্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে |
      মৃতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে সেদিন বিকালবেলা আমরা গোপগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম | যখন মৃতার বাড়িতে পৌঁছোলাম তখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন চলছে | আমরা নিজেদের পরিচয় দিতেই একটা ছেলে এসে আমাদেরকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল | মামা জিজ্ঞেস করলেন,"তুমি কে?"
--আমি জয়ন্ত ....জয়ন্ত হালদার | ঝর্ণার নিকট আত্মীয় | আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে ......|
জয়ন্তর কথা শেষ করতে না দিয়েই মামা বললেন,"আচ্ছা, অনুরোধ পরে করবে, তার আগে আমরা ঝর্ণার বাবা-মায়ের সাথে একটু কথা বলতে চাই |"
--সরি;কাকু মারা গেছেন অনেকদিন আগেই | আর কাকিমা এখন কথা বলার অবস্থায় নেই  | তাই যা বলার আমাকেই বলুন .....
--আচ্ছা; তুমি কি একটা অনুরোধ করতে যাচ্ছিলে না ......!!
--হ্যাঁ;বলছিলাম যে,যা হওয়ার হয়ে গেছে ...আমরা তো ওকে আর ফিরে পাবো না ....তাছাড়া বিষয়টির সাথে পরিবারের সম্মান জড়িত আছে | তাই আমরা হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চাইছি না ....
--তাহলে একটা কথা শুনে রাখো,তোমরা এই কেস্ তদন্ত করাতে রাজি না হলেও ....এ কাজটা আমাদেরকে করতেই হবে | তুমি হয়তো জানো না যে, মাস চারেক আগেই ঝর্ণা সে দায়িত্ব আমাদেরকে দিয়ে গেছে .....
--মানে?
--মানেটা আপাতত সাসপেন্স হিসেবেই থাক ....ধন্যবাদ !!
*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*
ফেরার পথে একবার থানায় গিয়ে আমরা  দারোগাবাবুর সাথে দেখা করলাম .....কিন্তু দারোগাবাবুর নিস্পৃহ ভাব আমাদেরকে হতাশ করলো | দুপুরবেলা এই কেস্ তদন্তের ব্যাপারে যতটা উদ্দীপনা তাঁর মধ্যে লক্ষ্য করেছিলাম, সন্ধ্যেবেলা তার সিকিভাগটুকুও লক্ষ্য করলাম না | উনি বললেন,"মৃতার বাড়ির লোক যেখানে তদন্তের ব্যাপারে আগ্রহী নয়,সেখানে আমরা আর কি করতে পারি বলুন ! তাছাড়া মেয়েটিরও দোষ ছিল ....বিয়ের আগে সহবাস !! আর তর সইছিল না !! হা হা হা ...." 
--মশাই কার কতটা দোষ ছিল,সেটা তো  তদন্ত সাপেক্ষ | কিন্তু দেশের স্বার্থে,সমাজের স্বার্থে এই কেসের যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি | নারীসমাজের উপর এই অত্যাচার স্বচক্ষে দেখেও আর কতদিন এভাবে মুখ বুজে সহ্য করবেন !
এরপর দারোগাবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন,"আরে মশাই, আমরা তো হাল ছেড়ে দিইনি এখনও .....আমরা তো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি | আপনি আপনার পদ্ধতিতে তদন্ত করে অপরাধীকে পাকড়াও করুন না , কে বারণ করেছে !! কোনো সাহায্যের দরকার হলে আমরা তো আছি,আপনার পাশে ....|"
--বুঝতে পারছি,জ্বলন্ত নিকোটিনে আপনি তৃপ্ত ....কিন্তু আপনি কি জানেন না, এই নিকোটিনের ধোঁয়া ভবিষ্যতে আপনাকেও ছেড়ে দেবে না, যদি না এখন থেকেই সাবধান হন ! বাই দ্য ওয়ে, সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ | 
          এরপর আমরা দারোগাবাবুর কাছ থেকে কল-লিস্টের ডিটেইলস্ ও অন্যান্য কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে হস্টেলের পথে রওনা হলাম |
                                               
¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡
পরীক্ষার পর অনেকেই বাড়িতে চলে গিয়েছিল,তবে আমার মতো যারা হস্টেলকেই নিজের বাড়ি মনে করে তারা তখনও রয়ে গিয়েছিল | যাহোক, হস্টেলের গেস্টরুমটা ফাঁকাই ছিল ....তাই হস্টেল সুপারকে বলে কয়েকদিনের জন্য ওখানেই মামার থাকার ব্যবস্থা করলাম |
                পরদিন সকালে আমরা হাজির হলাম ঝর্ণার ব্যাচমেট শ্রেয়ার বাড়িতে | আমাদের পরিচয় দেওয়ার পর মামা সরাসরি শ্রেয়াকে প্রশ্ন করলেন,"ঝর্ণার মৃত্যুর প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে তুমি ওকে ফোন করেছিলে কেন?" হঠাত্ করে এরকম প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না মেয়েটি ....ভয়ে প্রায় কেঁদেই ফেললো সে | মামা ওকে আশ্বস্ত করে বললেন,"আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন?আমরা ওর কল-লিস্ট পরীক্ষা করে  তোমার নাম্বারটাই লাস্ট 'ইনকামিং কল' হিসেবে পেয়েছি ....তাই তদন্তের স্বার্থে তোমাকে জেরা করছি |"
মেয়েটি এবার একটু অভয় পেয়ে বললো,
"আসলে আমি বুঝতে পারিনি ও এরকম একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে....সেদিন বিকেলে ওর টাইমলাইনে ওর সাথে একটা ছেলের ঘনিষ্ঠ মুহৃর্তের ছবি দেখেই ওকে ফোন করেছিলাম | যদিও ঐ এডিটেড ছবিতে ছেলেটাকে চেনার কোনো উপায় ছিল না | ও আমার ভালো বন্ধু; আমি জানি ও এরকম ছবি কখনোই ফেসবুকে পোস্ট করবে না | তাই ভাবলাম হয়তো ওর একাউণ্ট হ্যাক হয়েছে | ঝর্ণা তখন অনলাইনে ছিল না | বিশ্বাস করুন, আমি ওকে এ বিষয়ে সতর্ক করতেই ফোন করেছিলাম | ও আমার কাছ থেকে একথা শুনেই তড়িঘড়ি ফোনটা কেটে দিয়েছিল সেদিন | তারপর বন্ধুদের কাছ থেকে ওর সুইসাইডের খবর পেয়ে ওর বাড়িতে ছুটে যাই |"
--আচ্ছা,ওর সাথে কি কারুর Affair চলছিল ?
--হ্যাঁ; মিণ্টনদার সাথে ....কিন্তু তিন-চার মাস আগে থেকেই ওদের সম্পর্কে একটু চিড় ধরেছিল .....ঝর্ণা একদিন বলেছিল,   অন্য কোনো মেয়ের সাথে ওর নাকি গোপন সম্পর্ক আছে | বেশ কিছুদিন ধরে ও মনমরা হয়ে থাকতো ....আমাদের সাথেও কিছু শেয়ার করতে চাইতো না |
--আচ্ছা,এই মিণ্টনদা কে?
--আমি ঠিক চিনি না; তবে ওদের দু'জনের ছবি আমার কাছে আছে ....ঝর্ণার কাছ থেকে শুনেছি , ও নাকি ভালো ব্যাডমিণ্টন খেলে, তাই ডাকনামটা ওরকম |
--আচ্ছা, ছবিটা দেখাও  তো ....
         শ্রেয়া মোবাইলের গ্যালারি খুলে যে ছবিটা দেখালো, তাতে আমাদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হলো |
                                  
¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡¡
আরে, এ যে সেই জয়ন্ত !! কাল বিকেলেই তো ওর সাথে দেখা হলো ঝর্ণার বাড়িতে |
ছবিটা পরে কাজে লাগতে পারে, এই ভেবে ওটা আমরা ব্লু-টুথে নিয়ে নিলাম |
শ্রেয়ার কাছ থেকে এই মূল্যবান তথ্যগুলি পাওয়ার পর আমরা এতক্ষণে একটু একটু আশার আলো দেখছি .....যদিও  লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে এখনও অনেকটা জল-কাদা ঘাঁটতে হবে |
      হস্টেলে ফিরতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল | তারপর মধ্যাহ্ণভোজনের পর একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আমার ঘুম চলে এল | ঘুম থেকে উঠে মামার রুমে গিয়ে দেখলাম রুম বাইরে থেকে তালাবন্ধ | হয়তো একটু বেরিয়েছেন | 
যখন মামা ফিরলেন তখন সন্ধ্যার আঁধার  ঘনিয়ে এসেছে | আমার রুমে এসে  বললেন,"আজ রাতে রেডি হয়ে থাকিস্ ! হয়তো আজকেই আমাদের মিশন্ সাকসেসফুল হতে চলেছে |"
--তার মানে কেস্ সলভড্ !?
--সময়ই সবকিছু বলবে ....
        পাছে সাসপেন্স নষ্ট হয়ে যায়,এই আশঙ্কায় আমি আর কথা বাড়ালাম না | বাইরের হোটেল থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে রেডি হয়ে থাকলাম দু'জন | এরপর রাত্রি পৌনে দশটার দিকে মামার ফোনে একটা কল আসতেই, আমরা বেরিয়ে পড়লাম | রাস্তায় বেরিয়ে দেখি একজন আমাদের জন্য বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছেন | তাঁর ইশারায় আমরা বাইকে উঠে পড়লাম | পরে অবশ্য বুঝলাম, উনি থানার দারোগাবাবু ছাড়া কেউ নন | 
        বাইক থামলো খড়্গপুর স্টেশনে |কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দু'জন পুরুষ এবং দু'জন মহিলা কনস্টেবল একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে টানতে টানতে আমাদের সামনে এসে হাজির করলেন | একি ! এ যে সেই জয়ন্ত হালদার ওরফে মিণ্টন | কিন্তু এই মহিলা টা কে?
দারোগাবাবু প্রশ্ন করলেন,"কোথায় পালাচ্ছিলে এতরাতে?"
--পালাবো কেন? খবর পেলাম,বাড়িতে মা খুব অসুস্থ ....
--এবার যে তোমরাও অসুস্থ হবে বাছাধন!!
          সে রাতে পুলিশ ওদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল | তারপর দারোগাবাবু আমাদেরকে হস্টেল পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন এবং পরের দিন আমাদের সাথে সাক্ষাত্ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন .....
°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°•°*°
অপরাধী তো ধরা পড়লো কিন্তু তখনও আমার মনের কৌতূহল নিরসণ হয়নি .....অবশেষে মনের কথাটি জানিয়েই দিলাম মামাকে | মামা বললেন, আজ আর নয় .....কাল সকালে গোপগড় ইকোপার্কে ঘুরতে গিয়ে তোর সব কৌতূহল দূর করবো | অগত্যা মনের মধ্যে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম |
     যাহোক,পরদিন সকালে গোপগড়ে গিয়ে এই তদন্তের ব্যাপারে মামার মুখ থেকে যা শুনেছিলাম তা বিবৃত করছি :
জয়ন্তর উপর সন্দেহ হওয়ার নানাবিধ কারণ ছিল,  আমাদের সাথে প্রথম সাক্ষাতে ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সুবিধের ঠেকছিল না .... প্রথমত পারিবারিক সম্মানের দোহাই দিয়ে তদন্ত স্থগিত করতে চেয়েছিল ও |
তারপর শ্রেয়ার কাছ থেকে ঝর্ণা ও জয়ন্ত'র রিলেশনের ব্যাপারে জানার পর আমার সন্দেহটা আরও প্রবল হয় ....আরেকটা বিষয়ে খটকা প্রথম থেকেই ছিল ....ঝর্ণার প্রোফাইলে বিশেষ কায়দায় লেখা নাম ...JH AR NA.আমি নিশ্চিতযে, এই নামের মধ্য দিয়েই জয়ন্তকে একটা বিশেষ মেসেজ দিতে চেয়েছিল ও ...অর্থাত্ JH(জয়ন্ত হালদার) AR(আর)NA(না ) | আসলে মেয়েদেরকে ফুঁসলিয়ে প্রেমের জালে আটকে এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস এবং পরে যৌন সংসর্গ করাই ওর প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল |
--কিন্তু এতে ওর লাভ?
--লাভের কথাটা অবশ্য ওর ফোনটা বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর জানতে পারি ....ওর কল-লিস্ট খতিয়ে বিভিন্ন বিদেশী ফোন নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায় ....যেগুলি বিভিন্ন বিদেশী পর্ণ ইণ্ডাস্ট্রির মালিকের ; যাদের কাছে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে গোপন ক্যামেরায় তোলা সেক্স-ভিডিও গুলো বিক্রি করতো ....এতে ঝর্ণার মতো অন্য মেয়েরাও হয়তো কিছুই টের পেত না |
এরকম অনেক পর্ণ ভিডিও ওর ফোন থেকে পাওয়া গেছে | ঝর্ণার মা ছাড়া সংসারে আর কেউ ছিল না ....আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়েই সে এই পরিবারে প্রবেশ করে এবং ওর মায়ের বিশ্বাস অর্জন করে | 
গতকাল দুপুরে যখন তুই হস্টেলে এসে ঘুমাচ্ছিলিস তখন আমি পুলিশ নিয়ে ওর বাড়িতে হানা দিই এবং দু'টো ফোন উদ্ধার করি ....যদিও প্রথমদিকে ফোনগুলো হস্তান্তর করতে চাইছিল না ....কিন্তু যখন শ্রেয়ার কাছ থেকে পাওয়া ওদের রিলেশনের সব খবর বিবৃত করলাম এবং ওদের দু'জনের ছবি দেখালাম, তখন ও কিছুটা নরম হয় | তারপর গ্রেপ্তার করার ভয় দেখালে ফোন হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় ...আকস্মিকভাবে হানা দেওয়ায় ফোন থেকে কিছু ডিলিট করার সুযোগ পায়নি |
গতকাল ও স্পষ্টই বুঝতে পেরেছিল, ওর চালাকির দিন শেষ ....অবশেষে গভীর রাতে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় | ওর গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতে সাধারণ পোশাকে কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবলকে নিযুক্ত করা হয়েছিল | ওদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গতরাতে আমরা খড়্গপুরে গিয়ে ওদেরকে গ্রেপ্তার করেছিলাম |
--কিন্তু ঐ মহিলাটা কে?
--হুম, ও হলো ব্যাডমিণ্টনের Racquet.অর্থাত্ মিণ্টন ওরফে জয়ন্তর বিবাহিত স্ত্রী জয়ন্তী এবং এই অপকর্মের অন্যতম সাকরেদ | নারায়ণগড়ের এক ভাড়া বাড়িতে জয়ন্তী থাকতো এবং স্বামীর দুষ্কর্মে সাধ্যমতো সাহায্য করতো | জয়ন্তর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দু'টো ফোনের মধ্যে একটা ছিল ওর স্ত্রীর | দু'টো ফোনের IP Address এবং লগ্ ইন ডিটেইলস্ খতিয়ে দেখার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে, মাঝে মাঝে জয়ন্তীর ফোন থেকে ঝর্ণার ফেসবুক একাউণ্ট লগ্ ইন করা হতো | সম্ভবতঃ মাস চারেক আগে জয়ন্তী একটা Male ফেক একাউণ্ট খুলে (যেহেতু ঝর্ণা "He" ওয়ার্ড ইউজ করে আমাদের নিকট ফেক একাউণ্টের বর্ণনা দিয়েছিল) ঝর্ণাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে | দিনের পর দিন জয়ন্তর সাথে যৌন সংসর্গের ফলে অসাবধানতাবশত একসময় ঝর্ণা গর্ভবতী হয়ে পড়ে ....জয়ন্ত গর্ভপাত করাতে বললেও ঝর্ণা রাজি হয়নি ; কারণ জয়ন্তকে তখন ও স্বামীর দৃষ্টিতেই দেখতো ...কিন্তু নগ্ন ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর ঘটনার পর থেকে জয়ন্তর উপর ওর সন্দেহ হয়……কারণ ওর পাসওয়ার্ড,ই-মেইল আইডি জয়ন্তই একমাত্র জানতো |
কিন্তু ও যদি ছেড়ে চলে যায়, এই ভয়ে জোর করেও কিছু বলতে পারে না | তাই হয়তো ওর প্রোফাইলের নামের মধ্য দিয়েই জয়ন্তকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল JH AR NA(অর্থাত্ জয়ন্ত তুমি আর এরকম কোরো না) ঝর্ণার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে জয়ন্তও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে ....অবশেষে জয়ন্তীর সাহায্য নিয়ে ফেক একাউণ্ট থেকে হুমকি এবং তাতেও কাজ না হওয়ায় ফেসবুকে সেই ছবি আপলোড করে দেয় |
তবে এই কেস্ প্রমাণে শুধুমাত্র এই তথ্য গুলোই যথেষ্ট ছিল না ; ঝর্ণার গর্ভস্থ ভ্রূণ এবং জয়ন্তর ডিএনএ(DNA) টেস্টের রেজাল্টও আমরা আজ হাতে পেয়েছি | ওর এই নোংরা কর্মকাণ্ড সামনে আসার পর আমার মনে হচ্ছে, জয়ন্তর 
BAD-Minton নামটাই সার্থক | 
        এসব শুনে আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো ....আবারও বুঝতে পারলাম 'শিকার' যতই প্রভাবশালী হোক না কেন ....উপযুক্ত শিকারীর হাতে সে জব্দ হবেই | আর অপরাধীর অপরাধকর্ম যতই নিখুঁত হোক না কেন, সত্যের জয় অনিবার্য |
                     (সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন