প্রতিরোধ
________________________
নিউজফীড স্ক্রল করতে করতে সুনেত্রার পোস্টে চোখ আটকে গেল অন্বেষার ।দারুন রোমান্টিক মুডে একটা পাহাড়ি রাস্তার ধারে দাড়িঁয়ে আছে দুজনে ...সুনেত্রার সঙ্গে ওটা কিংশুক না ! হৃদপিন্ডটা এক সেকেন্ডের জন্য যেন থেমে গেল অন্বেষার ...হ্যাঁ কিংশুকই তো ! প্রায় পঁচিশ বছরের ব্যবধানে চেহারা পাল্টায়নি বিশেষ ...সামান্য ভুঁড়ি আর সাদা হয়ে যাওয়া চুলগুলো ছাড়া । সুনেত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিব্যক্তিতেই বোঝা যায় ওদের সম্পর্ক । কিংশুক তাহলে শেষ পর্যন্ত সুনেত্রাকে !!
দিন তিনেক আগে হঠাতই ফেসবুকে সুনেত্রা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল । এতবছর পরে স্কুলের বন্ধুকে পেয়ে ভারী খুশি হয়েছিল অন্বেষা । ইনবক্সে চ্যাটিং হয়েছিল প্রায় ঘন্টাখানেক ।বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা অন্বেষা সেন জানিয়েছিল মাসতিনেকের ছুটি নিয়ে ও এখন মেয়ের কাছে ইউ-কে তে এসেছে । সুনেত্রা এখন জয়পুরের বাসিন্দা , একটা উইকএন্ড ফ্যামিলি ট্রিপে যাচ্ছে মাউন্ট আবুতে ...ও এখন চাকরিবাকরি ছেড়ে পুরোপুরি হাউজ ওয়াইফ ...সংসার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত , অন্য কাজ করার সময় কই ! ...ওর প্রতিটি অক্ষর থেকে যেন আত্মতুষ্টির ঘ্রাণ ভেসে আসছিল ...খুশিই হয়েছিল অন্বেষা ,সুনেত্রা ভালো আছে জেনে । নিজের ছেলেমেয়ের কথাও জানিয়েছিল সুনেত্রা ...ছেলে সবে ক্লাস ইলেভেন আর মেয়ে এখনো প্রাইমারির গন্ডী ডিঙায়নি ...আসলে লেট ম্যারেজ ,লেট ইস্যু ! ওর হাসব্যান্ডের কথা আর আলাদা করে জিজ্ঞেস করা হয়নি অন্বেষার । ঝিনুকের অফিস থেকে ফেরার সময় হয়ে এসেছিল ...জলখাবার বানাতে হবে , তাই অফলাইন হয়ে গিয়েছিল ... উইকএন্ডের দুটো দিন ঝিনুক আর ওর বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে ঘুরে বেরিয়েই কেটে গেল , তাই আর ফেসবুকে অন হতে পারেনি অন্বেষা ...সুনেত্রার প্রোফাইলটা আর আলাদা করে দেখে ওঠা হয়নি ।
* * * * * * * * *
সুনেত্রার ডিটেলসটা দেখছিল অন্বেষা । এই তো ...স্পষ্ট লেখা আছে ম্যারিড টু কিংশুক মিত্র ।সুনেত্রা তো চিনত কিংশুককে ...অন্বেষা আর কিংশুকের ঘটনা সবটাই জানত ...তবুও ! কিংশুকের প্রোফাইলটা খুলল অন্বেষা ...কভারে ওদের দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর ছবিটা দেখে এক চিলতে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল অন্বেষার ঠোঁটে ...সুখী পরিবার !
পুজোর সময় সুমিতের সঙ্গে ওর আর ঝিনুকের তোলা একটা ছবি নিজের কভার পেজ হিসেবে আপলোড করে রিলেশনশিপ স্টেটাস সিঙ্গল থেকে চেঞ্জ করে ' ইন আ রিলেশনশিপ ' লিখল অন্বেষা । সুনেত্রা নিশ্চয়ই দেখবে এটা ...হয়তো বা কিংশুকও ! পুরোনো বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে অন্বেষাকে দেখে পুরনো ব্যথাটা ফিরে আসবে কি ! বহুদিন বাদে চোখের তারায় বিদ্যুত ঝলসে উঠল অন্বেষার ... ঝিনুককে বলল , " তুই তো অনেকদিন ধরেই বলছিলিস... এবার ডিসিশনটা নিয়েই ফেললাম বুঝলি ! ...কলকাতায় কল করে সুমিত আঙ্কেলকে বলে দে রেজিস্ট্রির নোটিসটা দিয়ে রাখতে ...ফেব্রুয়ারিতে আমি ফিরলেই বিয়েটা সেরে ফেলবো ...তুইও নিশ্চিন্ত...নেক্স্ট সামারেই কেভিনের সঙ্গে তোর বিয়ে টাও ফিক্স করে ফেলবো এবার ...
ঝিনুক ওরফে আরশি মিত্র অপলক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দেখছিল ...প্রতিরোধের দেওয়ালটা এক ধাক্কায় এভাবেও ভেঙে ফেলা যায় !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন